*******

সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়: সোভিয়েত বিপ্লব সফল হয়েছে।সর্বহারার মহান নেতা ভ্ল্যাদিমির ইলিচ লেনিন সোভিয়েত গঠনে বিজ্ঞানের নবতম আবিষ্কার সিনেমা মাধ্যমের অপরিসীম ক্ষমতা আন্দাজ করে তাঁর দেশের সেরা চলচ্চিত্রকার আইজেনস্টাইনকে বলেছিলেন, দেশ গঠনে সিনেমা শিল্পকে কাজে লাগান।১৯৩০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর সন্ধায় মস্কো সফরে এসে এক প্রেক্ষাগৃহে রবীন্দ্রনাথ দেখলেন দুটি ছবি । ব্যাটেশিপ পটেমকিন ও জেনারেল লাইন। যন্ত্র বিপ্লবের অনন্য অবদানে ছবিদুটি দেখে মুগ্ধ হলেন তিনি। অবাক বিস্ময় প্রকাশ করলেন যখন শুনলেন , ছবির কারিগরএক ২৭ বছরের যুবক। কিন্তু আইজেনস্টাইন তখন মার্কিন মুলুকে থাকায় কবির সঙ্গে সাক্ষাত হয়নি।
ভারতেও এসে পড়েছিল সিনেমা শিল্পের ঝড়। কিন্তু সমাজে ছিল ব্রাত্য। চলচ্চিত্র নির্মাতা দাদাভাই ফালকে যখন রাজা হরিশচন্দ্র নামে প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণে ব্রতী হলেনকাগজে বিজ্ঞাপন দিলেন মহিলা অভিনেত্রীর জন্য। কিন্তু রক্ষনশীল সমাজে সাড়া মিলল না। সাড়া দিলেন যৌনকর্মীরা। কিন্তু সৌন্দর্যের বিচারে কেউ মনঃপুত হলেন না। বাধ্য হয়ে সুন্দরী মহিলার প্রয়োজন জানিয়ে আবার বিজ্ঞাপন। ফালকে নিজে বেরোলেন নিষিদ্ধপল্লীতে নারী চরিত্রের অভিনেত্রীর জন্য। কিন্তু বিফল হল তাঁর পদক্ষেপ। শেষপর্যন্ত আন্না সালুঙ্কে নামে এক পুরুষ রাঁধুনিকে বেছে নেন। ছবি হিট হলো।
এবার পেলেন ১৩ বছর বয়সী এক কিশোরী মারাঠি মঞ্চ অভিনেত্রী কমলা বাই গোখলে। ছবিতে নাম কমলা কামাত। সঙ্গে তাঁর মা দুর্গাবাই কামাথ। রক্ষনশীল ব্রাহ্মণ সমাজের চাপ শুরু হয়।
এগিয়ে এলেন রুবি মায়ার্স। বাগদাদী ইহুদি টেলিফোন অপারেটর। পর্দায় নাম হয় সুলোচনা। এলেন পেশেন্স কুপার। একজন নৃত্যশিল্পী ও মঞ্চাভিনেত্রী। এরপর দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় দেবিকারাণী থেকে কাননদেবী, ছায়াদেবী,সুচিত্রা সেন, সুপ্রিয়াদেবী, মাধবী মুখার্জি, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, অপর্ণা সেন থেকে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত।
২০২৫ এর মার্চের শেষ দিনে চৈত্র সন্ধায় কলকাতার অভিজাত স্যাটারডে ক্লাবের দেখলাম তাঁদের পদচারণা। কয়েক মুহূর্তে ভারতীয় তথা বাংলা চলচ্চিত্রের বারো ঘর এক উঠোনে এঁদের উপস্থিতির অভিনবআয়োজন করল যৌথ উদ্যোগে নেজ ফাউন্ডেশন ও ফোরাম ফর ফিল্ম স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যালাইড আর্টস । কারণ চারদিনব্যাপী এক স্বনির্মিত পরিচালকদের চলচ্চিত্র উৎসবের সমাপ্তি অনুষ্ঠান ও পুরষ্কার বিতরণ। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ১৬ টি ছবি প্রদর্শিত হয় মধ্য কলকাতার আই সি সি আর এর সত্যজিৎ রায় অডিটরিয়ামে । পোশাকশিল্পী শান্তনু গুহঠাকুরতা যখন সিনেমার ১০ নক্ষত্রকে হাজির করলেন র্যাম্পে , তখন অতিথি হিসেবে উপস্থিত পরিচালক গৌতম ঘোষ সহ অনেকেই নস্টালজিক হয়ে পড়েন। রঞ্জিতা ভট্টাচার্য উপস্থিত করেন ভারতের চার প্রদেশের সংস্কৃতিকে এক সুতোর মালায় গেঁথে। আসামের ঐতিহ্যবাহী মেখলা পোশাকে গুলশান বানু উপস্থাপনা করেন সংস্কৃতির এক টুকরো পরিচয
এরপর সেই বিশেষ ক্ষণ। অনুষ্ঠান সমাপ্তি ও সম্মাননা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইতালিয়ান শিল্পী পাওলা বোনাচিনা ও ভিভি গাই, প্রদর্শিত হয় রজার এ ফ্রাটারের উইমেন আউটসাইড ফিমেল ইনসাইড। অন্যান্যদের মধ্যে পুরষ্কৃত হন পরিচালক সুমন বন্দোপাধ্যায় । ছিলেন কলকাতা পুলিশের আধিকারিকরা ও দেবর্ষি দত্ত সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরা সর্বশ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হিসেবে পুরষ্কৃত হয় টরেন্ডো এ ইষ্ট। ছবির পরিচালক মরিজিও পাগালেনি ও নাতালিয়া। সেরা নির্মাতা ও সেরা চিত্রগ্রহণ পুরষ্কার জিতে নেয় উইন্টার রেন্। নেজ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সুদীপরঞ্জন সরকার বলেন, নবম উৎসবে আমরা তিনদিন পালন করেছি। এবার দশম উৎসবে চারদিন। আমরা বর্তমান দেশের আর্থ সামাজিক ক্ষেত্রে চলচ্চিত্রের ভূমিকাকে একটি শক্তিশালী ভূমিকা আছে বলে মনে করি। এই মুহূর্তে স্বউদ্যোগে চলচ্চিত্র নির্মাণের যে আন্দোলন শুরু হয়েছে বিশ্বজুড়ে , সেটি এদেশে একটি সফল রূপ দেওয়ার চেষ্টা করছি।
ফাউন্ডেশনের সহ প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারপার্সন রীতা ঝাওয়ার দশ অভিনেত্রীর অন্যতম ছায়াদেবীর রূপ পরিকল্পনায় অংশ নেন। তিনি বলেন, এই চলচ্চিত্র উৎসবের দশ বছরে আমরা বিশ্ব সংস্কৃতির সঙ্গে নিবিড় সংযোগে ব্রতী।