কলকাতার একমাত্র শিবস্থল নয়ন কমলেশ্বর মন্দিরের নবম বাৎসরিক পুজো

*

শ্রীজিৎ চট্টরাজ : শিবের গাত্রবর্ণ নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। সাধারণত শিব লিঙ্গ হিসেবে পূজিত হন তখন তা হয় কালো কষ্টি পাথরের। নর্মদা নদী তীরে যে পাথর শিব হিসেবে পূজিত হন তাকে বলে স্বয়ম্ভু। আবার যখন শিব মূর্তিতে পূজিত হনতখন গাত্রবর্ণ সাদা । শাস্ত্রে বর্ণিত আছে শিব গাত্র বর্ণ কর্পূর গৌরম। অর্থাৎ কর্পূরের মত শ্বেত শুভ্র। অবশ্য ইতিহাসবিদেরা বলেন, অনার্য দেবতা শিব বুদ্ধদেবের প্রভাবে সৃষ্টি। আর্য সংস্কৃতির আগ্রাসনে শিবকে বেদে রুদ্রের স্থান দেওয়া হয়। কিন্তু সৃষ্টির দেবতা হিসেবে ব্রহ্মা , স্থিতির দেবতা হিসেবে বিষ্ণু হলেও রুদ্র তথা শিবকে বলা হয় ধ্বংসের দেবতা। অথর্ব বেদে ব্রাত্য মন্ত্রে মহাদেব স্বয়ং ব্রাত্য এবং ব্রাত্য অর্থাৎ নিচ জাতির উপাস্য বলা হয়েছে। ভাগবত পুরাণ অনুসারে শিব তমোগুণের আধার, উন্মাউন্মাদের উপাস্য, শ্মশানচারী, বাঁদরের মত চোখ, কর্মহীন, দিগম্বর, জটাধারী, চিতভস্ম স্নানকারীঅমঙ্গলকারী বলা হয়েছে। এসব অন্য প্রসঙ্গ।

মধ্য কলকাতায় বিধান সরণী মেডিকেল কলেজের বিপরীতে ব্রজনাথ দত্ত লেন ও মধু গুপ্ত লেনের সংযোগস্থলেই একমাত্র নয়ন কমলেশ্বর নামে পূজিত হচ্ছেন শিব শম্ভু। গাত্রবর্ণ শুভ্র। এই কমলেশ্বর মূর্তির সৃষ্টি রাজস্থানের বুন্দী জেলার লাখেরী শহরে। কলকাতায় সম্ভবত শিবচকক্লাবের পরিচালনায় পূজিত হন নয়ন কমলেশ্বর রূপে দেবাদিদেব মহাদেব। প্রতি বছরের মত এই বছরেরও শিবচক ক্লাবের উদ্যোগে চারদিনব্যাপী বার্ষিক বাবা নয়ন কমলেশ্বর মহারাজের ৯ম বাৎসরিক মহাপূজা ও রক্তদান উৎসব পালিত হল। জীব সেবার মধ্যে শিব পূজার পূর্ণতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এলাকার আর্থিক দূর্বল মানুষদের তাঁদের জীবনযাত্রার চাহিদা মত সামগ্রী বিতরণ করা হয়। প্রথম দিন সকাল থেকে বসে ছিলছোটদের বসে আঁকো প্রতিযোগিতা। দুপুরে রাখী বন্ধন উৎসব। বিকেলে একটি মেলার উদ্বোধন। ওরপর যেমন খুশি সাজো, ম্যাজিক শো সহ বিনোদনঃ অনুষ্ঠান।

২১ আগষ্ট বিনামুল্যে স্বাস্থ্য শিবির, চক্ষু পরীক্ষা, ছানি অপারেশন ও চশমা বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়।সবশেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে লোকগীতির আধারে রক ব্যান্ড সঙ্গীত পরিবেশন করেন তন্ময় কর এন্ড ফ্রেন্ডস। নবীন সদস্যদের পরিচালনায় এই উৎসবে উপস্থিত ছিলেন পুরপিতা বিশ্বরূপ দে, ইন্দ্রনীল কুমার, পুরমাতা সুপর্ণা দত্ত , বিধায়ক অশোক দেব ও ডা: এম পি সাউ। শিবচক ক্লাবের সম্পাদক দুলাল সাউ ও সদস্যদের ঐকান্তিক প্রয়াসে তিনদিনব্যাপী অনুষ্ঠানের ইতি ঘটে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *