
******
সুজিৎ চট্টোপাধ্যায় : সাহিত্যিক প্রবোধ বন্দোপাধ্যায় নিজের গুণেই বাংলা সাহিত্যের আঙিনায় মানিক হয়ে উঠেছিলেন। শিল্প শুধু শিল্পের জন্য নয়, মানুষের জন্য। তাঁর প্রতিটি লেখনীতে যা ফুটে ওঠে। কল্লোলযুগের সাহিত্যিক মানিক বন্দোপাধ্যায়ের একটি ছোট গল্প শিল্পী যা তিনি লিখেছিলেন ১৯৫০ নাগাদ। সেই কালজয়ী রচনাকে ২১শতাব্দীতে প্রাসঙ্গিক মনে করে নাট্যরূপ দিলেন উজ্জ্বল মণ্ডল। নাটকটি মঞ্চস্থ করল ৩৬ বছরের সংগঠন দৃশ্যপট। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সংগঠনের জন্মদিনে একাডেমি মঞ্চে পরিচালক অনির্বাণ ভট্টাচার্য দৃশ্যপট প্রযোজিত নাটকটির মঞ্চায়নে দর্শকদের আশীর্বাদ কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করলেন।
কাহিনীর কেন্দ্রীয় চরিত্র তাঁতশিল্পী মদন। যাঁর হাতে কাজের সুখ্যাতি ছিল গ্রামে।বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষিতের ব্রিটিশ উপনিবেশের সঙ্গী এদেশীয় কিছু ধনী মুনাফার জন্য কৃত্রিম সুতোর অভাব সৃষ্টি করে স্বাধীনসত্ত্বার গরীব তাঁতিদের দাদন দিয়ে সস্তায় মজুরি শ্রমিককে পরিণত করার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল মদন। সঙ্গী গ্রামের অন্য তাঁতিরা। ব্যাওসাদার মুনাফাখোর পোষা অনুগতদের দিয়ে তাঁতশিল্পীদের ঐক্য ভেঙে দিতে প্রলোভনের চার ছড়ালেও উদ্দেশ্য সিদ্ধ হয় না। একটা সময় আসে ,যখন এই তাঁতিসমাজ বোঝেন সময়ের ডাক। শিল্পীর হাতের মাকু ছেড়ে তাঁরা হাতে তুলে নেয় লাঠি। প্রতিরোধের অস্ত্র।

ভিক্ষা নয়, শ্রমিক চায় অধিকার। চায় আত্মসম্মান।যা আজও প্রাসঙ্গিক। সমাজের দৃশ্যপটকে সামনে রেখে তাই এই কাহিনী নির্বাচন। দলগত অভিনয় ছিল এই নাটকের প্রাপ্তি। পিউ, পৃথা, তানিয়া, প্রদীপ, উৎসব, অঞ্জন অত্রী, উজ্জ্বল, সমান্তক, সৌমী, অর্পিতা, আশ্মিতা শুভশ্রী, গৌরব, বিভূতি, অরিজিৎ , শর্মিষ্ঠা, উদ্ভাস ও পার্থ। একটি ছোট গল্পকে একঘন্টা কুড়ি মিনিটের সময়সীমার রেখে কাহিনীকে গতি বজায় রাখলেও একটি রিলিফ চরিত্র সংযোজন করা দরকার ছিল। যাঁর সংলাপে হাস্যরসের সঙ্গে রাখা যেত তীব্র শ্লেষ।
অর্পণ ঠাকুর চক্রবর্তীর সঙ্গীত সুসংযোজিত। মঞ্চায়নেও ছিল গ্রামের সোঁদা গন্ধ। প্রক্ষেপণ গৌতম পালের । যা নাটকের দাবি পূরণ করেছে। রূপসজ্জায় এস কে ইসরাফিলের প্রয়োগ প্রশংসনীয়। মঞ্চায়নে উৎসব রাউত সফল। তবে আলো প্রক্ষেপণের কাজে আরও সতর্ক থাকা দরকার মনোজপ্রসাদের। পরিচালক অনির্বাণ ভট্টাচার্যের সফল একটি প্রয়াস। একটি বিষয়ের শুধু বলার। সুতোর গুদামের মালিক যখন তাঁর খাতায় হিসেব কষছেন তখন ১৯৫০ এর প্রেক্ষিতে টিনের কৌটোর সিগারেট খাচ্ছেন তখন লিখছেন আজকের ডট পেনে। এটা ছন্দপতন ঘটিয়েছে। জানেন তো নাট্য সমালোচনা অনেকটা শকুনের ভাগাড়ে খাদ্য খোঁজার মত। প্রশংসার সঙ্গে খামতিটাও চোখে পড়ে।