প্রয়াত বিদ্রোহী কবি সুকান্তের ভ্রাতুষ্পুত্র কমিউনিস্ট নেতা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য

*

সুজিৎ চট্টোপাধ্যায় : রবীন্দ্র প্রয়াণের পরেরদিন । ভোররাতেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। আজ সকাল ৮ টা ২৫ মিনিটে কলকাতার পাম এভিনিউর বাসভবনে প্রয়াত হলেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০। রেখে গেলেন স্ত্রী ও এক পুত্র। শেষ জীবনে তাঁর আক্ষেপ ছিল কৃষি আমাদের ভিত্তি, শিল্প আমাদের ভবিষ্যত স্লোগানকে বাস্তবায়িত না করতে পারা বাগ্নী, বঙ্গ সংস্কৃতিপ্রেমী, রবীন্দ্র অনুরাগী চলে গেলেন রবীন্দ্র প্রয়াণের পরের দিনেই। সকালে ব্রেকফাস্ট করাকালীন হৃদরোগে আক্রান্ত হন। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। আদ্যপান্ত পোশাকে, আচরণে বাক্য বিন্যাসে ১৬ আনা বাঙালি বুদ্ধদেবের বৌদ্ধিক চেতনাকে শ্রদ্ধা করেন দেশের আপামর রাজনৈতিক নেতারা।

দীর্ঘ ১১ বছর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন ছাত্র রাজনীতিতে হাত পাকিয়ে। একসময় বামফ্রন্ট মন্ত্রীসভায় ভাইরাস প্রবেশের বিরুদ্ধে মন্ত্রীত্ব ত্যাগ করেছিলেন। সি পি এমের পলিটব্যুরোর প্রাক্তন সদস্য জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দেশ ও বিদেশের খবর শুনতেন পরিবারের সদস্যদের মুখে। বেশ কয়েকটি পত্রিকা তাঁকে পাঠ করে শোনাতেহত। ছোট্ট ফ্ল্যাটের বাসিন্দা বুদ্ধদেবের প্রতিবেশী কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য। মুখ্যমন্ত্রী সমাজমাধ্যমে শোকবার্তায় শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। তাঁর পরিবার ও বাম কর্মীদের সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি। রাজ্য সরকারের নির্দেশে আজ ছুটি ঘোষিত হয়েছে।

বুদ্ধদেবের পিতামহ ছিলেন কৃষ্ণচন্দ্র স্মৃতি তীর্থ সংস্কৃত পণ্ডিত , পুরোহিত ও লেখক । পিতা নেপালচন্দ্র ছিলেন পারিবারিক প্রকাশনা সংস্থা সারস্বত লাইব্রেরীর কর্তা। কিন্তু বুদ্ধদেব ছিলেন বামপন্থী। প্রেসিডেন্সি কলেজের ছাত্র। সাময়িক ভাবে স্কুল শিক্ষকতাও করেছেন। তাঁর শেষইচ্ছা অনুযায়ী দেহদান হবে চিকিৎসা শাস্ত্রের গবেষণার প্রয়োজনে। বাড়ি থেকে বেলা একটায় মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে সংরক্ষণ কেন্দ্রে। কাল সকাল ১০ টায় মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে সি পি এমের আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের পার্টি অফিসে।

বিকেল চারটেয় শোকযাত্রা শুরু হবে যে হাসপাতালে তাঁর দেহ সংরক্ষণ হবে সেই হাসপতালের উদ্দেশ্যে। এখনও স্থির হয়নি নির্দিষ্ট হাসপাতাল।পার্টির রাজ্য সম্পাদক মোঃ সেলিম বলেন, পার্টি শুধু নয়, দেশের রাজনৈতিক সততা ও সৎ জীবনযাত্রার এক প্রতীকের অবসান হলেও তিনি ইতিহাসে উজ্জ্বল হয়ে থাকবেন। মায়াকভস্কির এক কবিতার বাংলা অনুবাদ করে বুদ্ধদেব লিখেছিলেন, সর্বহারার দল কম্যুনিজমে পৌঁছয় নিচুর থেকে, খনিরঘুপচি রাস্তা ধরে কাস্তে কোদাল বেলচা নিয়ে; কিন্তু আমি কবিতার আকাশ থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ি কম্যুনিজমের, কারণ ভালবাসার একটাই তো পথ। অনেক কাজ বাকি বন্ধু তাড়াতাড়ি করো, জীবনকে সোজা করে দাঁড় তো করাতেহবে। গড়তে হবে নতুনভাবে তৈরি হবে নতুন নতুনতর গান? শব্দ, নির্দেশ, সংঘবদ্ধতা , মানুষের শক্তি , এগোও সময়, পুরানো দিনের সেহাওয়া ফিরে পেতে চাই। মৃত্যু এ জীবনে কঠিন কিছু নয় , জীবনকে সৃষ্টি করা কঠিনতর – এখন নিশ্চিত আমি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *