রবীন্দ্রনাথের চিন সফরের শতবর্ষে কলকাতা থেকে সাংহাই সফর বিদগ্ধজনেদের

দিগদর্শন ওয়েব ডেস্ক,: আজি হতে শতবর্ষ আগে রবি কবি জীবনের প্রথম চিন সফর করেন। সেই স্মৃতিকে ধরে রাখতে এরাজ্যের একদল রবীন্দ্র অনুরাগী বিশিষ্ট শিল্পী, শিক্ষাবিদ বুদ্ধিজীবী গত ১৪ থেকে ১৬ এপ্রিল রবীন্দ্রনাথের পথে পুনঃ ভ্রমণ করেন কলকাতা থেকে সাংহাই।


ভ্রমণরত ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন সাংহাই ফ্রেন্ডশিপ অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফুজি হং।তিনি বলেন, রবীন্দ্রনাথ চিনা জনগণের বন্ধু ছিলেন। তাঁর জীবনের সবকটি চিন সফর সাংহাই থেকে শুরু। সাংহাইয়ে শেষ।দু দেশের প্রাচীন সভ্যতারঐতিহ্যের আদানপ্রদান বন্ধুত্বের নিদর্শন হয়ে আছে।
সফররত ভারতীয় প্রতিনিধি দল সাংহাই পৌর আর্কাইভস ব্যুরো এবং সাংহাই চিনইউয়ান সিনিয়র হাইস্কুল পরিদর্শন করেন। এছাড়াও হুইশান ওয়ারফ সাইট, সিমিং গ্রাম পরিদর্শন করেন।যেখানে যেখানে রবীন্দ্রনাথের পদচিহ্ন পড়েছিল। প্রতিনিধি দল নাঞ্চাং রোড ও মাওমিং সংযোগস্থলে রবীন্দ্রনাথের মূর্তিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। থংচি বিশ্ব বিদ্যালয়ের উদ্যোগে রবীন্দ্রনাথের চিন সফরের শতবর্ষ স্মরণানুষ্ঠানেও অংশ নেন। প্রতিনিধি দলের অন্যতম ঠাকুর পরিবারের সৌরজা ঠাকুর রবীন্দ্রনাথের প্রিয় বুনো চন্দ্রমল্লিকা জুঁই , বেগুনি লিলি এবং পিওনি ফুলের তোড়া রাখেন রবীন্দ্রনাথের মূর্তির সামনে।প্রতিনিধি দলের অন্যতম সদস্য রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী মনোজ মুরুলী নায়ারের এটি প্রথম চিন সফর।?

একশ বছর আগে চিনের মাটিতে পা দিয়ে রবিকবি বলেছিলেন কেন জানি নে চিনে এসে আমার মনে হয় যেন নিজের দেশে ফিরে এসেছি। ফিরে আসার সময় বলেছিলেন আমার হৃদয় এখানে রইল। ভারতের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের চিনা ভবনের অধ্যক্ষ অধ্যাপক অভিজিৎ ব্যানার্জি তিনবার সাংহাই সফর করেছেন।

তিনি বলেন সাংহাই রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলিকে চিনা প্রশাসন শ্রদ্ধার সঙ্গে সংরক্ষণ করছে। আমরা আপ্লুত।রবীন্দ্রনাথ চিন থেকে ফিরেই বিশ্ব ভারতী বিদ্যালয়ে একটি চিনা বিবিনের প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। তাঁর এবং প্রথম অধ্যক্ষ থান ইউন শানের প্রচেষ্টায় চিনা ভবন নির্মাণ ১৯৩৭ সালে সম্ভব হয়। আজও সেখানে চিনা সাহিত্য কলা চর্চা হয়।১৯৩৯ সালে বিখ্যাত চিনা চিত্রশিল্পী সুই বেই হং শিক্ষক ছিলেন চিনা ভবনে। সাংহাই চিনইউয়ান সিনিয়র হাই স্কুলের নাচের কক্ষে নৃত্যশিল্পী সৌরজা ঠাকুর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খালি পায়ে কবিতার নৃত্যরূপে যোগ দেন। সৌরজা যোগ দেন থংচি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশানাল কালচারাল এক্সচেঞ্জ স্কুলে বিশ্বের বহু দেশের ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে। প্রতিনিধি দলের অন্যতম সদস্য রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরী বলেন , ভারতীয় প্রতিনিধিদলের চিম্বসফর দুদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মেলবন্ধন এগিয়ে দেবে।

রবীন্দ্রনাথের চিন ভ্রমণ শুধু ফুল বিছানো পথে হয়েছিল ভাবাটা ভুল হবে। ২০ বছর বয়সে চিনে মরণের ব্যবসা নামে প্রবন্ধ লেখায় বোঝা যায় চিনে আমেরিকার আফিমের ব্যবসাকে ডাকাতি বলে উল্লেখ করে চিনের জনগণের জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ নোবেল পাওয়ার পর চিনারাও রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে আগ্রহী হন। চিনা অনুবাদ রবীন্দ্রনাথের বক্তব্যক স্বচ্ছ করতে পারেনি। চিনের ! কমিউনিস্ট বিপ্লবের মূহূর্তে ১৯২৪ সালে ১২ এপ্রিল রবীন্দ্রনাথ প্রথম চিন সফরে যান।৪৯ দিনের ভ্রমণে তিনি বস্তুবাদের বদলে ভাববাদের সমর্থনে বক্তব্য রাখেন। উপস্থিত ছিলেন বস্তুবাদের নায়ক মাও সে তুং।তিনি o তাঁর অনুগামীরা মনে করেন চিনের ভাববাদী আধ্যাত্বিক বুদ্ধিজীবীরা ষড়যন্ত্র করে রবীন্দ্রনাথকে বস্তুবাদের বিরোধিতা করার জন্য চিনে নিয়ে এসেছেন। ফলে বোরবীন্দ্রনা অনেক জায়গায় বিক্ষোভের সম্মুখীন হন। শ্লোগান শুনেছেন পরাধীন দেশের চাকর ফিরে যাও। আমরা দর্শন নয়, বস্তুবাদ চাই। ভ্রমণ কাহিনী অনেক লিখেছেন রবীন্দ্রনাথ। কিন্তু চিন ভ্রমণ সম্পর্কে নেই তাঁর বিশেষ কিছু রচনা। আসলে বিশ্ব রাজনীতি সম্পর্কে খুব বেশি ওয়াকিবহাল ছিলেন না তিনি। নাহলে ইতালিতে গিয়ে মুসোলিনির প্রশংসা করেন? সেসব অন্য প্রসঙ্গ। কিন্তু অস্বীকারের উপায় নেই চিন ভারতের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের এক নিবিড় সম্পর্ক আছে। যদিও বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ভারতের নতুন প্রজন্মকে চিন সম্পর্কে সন্দেহের বাতাবরণ তৈরির চেষ্টা চলছে সেখানে ভারতীয় প্রতিনিধিদের রবীন্দ্রনাথের চিভ্রমণের শতবর্ষে কলকাতা থেকে সাংহাই রবীন্দ্রনাথের পথে পুনঃভ্রমণ এক ইতিবাচক বিষয় ও প্রাসঙ্গিকও বটে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *