পর্ব: ১১১

সুজিৎ চট্টোপাধ্যায় : সন্দীপ ঘোষ বাংলা ও বাঙালি সাপ্তাহিক পত্রিকায় মার্চ ২০১২ সংখ্যায় লিঙ্গ পুরাণে বেশ্যা প্রবন্ধে লিখেছেন,,, বিখ্যাত সারস্বত সাধন পুরুষোত্তম দেব একাক্ষরকোষ -এ বলেছেন, ব= বক্ষস্থল বা হৃদয়, এ= পালনী শক্তি,( বিষ্ণু), প= শ্রেয় ( মার্গ ) য= বাসনা ত্যাগ ( মুক্তি), আ= পিতামহ ((সৃজনী শক্তি)। সৃজনী শক্তি ও পালনী শক্তিরসহয়তায় প্রবৃত্তিমূলক ধর্মাচরণের মাধ্যমে হৃদয়কে বাসনামুক্ত করে যিনি শ্রেয় মার্গে বিচরণ করেন তিনিই বেশ্যা। বৈষ্ণবাচার্য শ্রীমদ মধ্ব লিখেছেন, প্রেমময় বাসুদেব যার হৃদয়ে বিরাজমান, তিনিই বেশ্যা।

শাস্ত্রে বেশ্যা ও গণিকাএক অর্থ নয়। বৈষ্ণবতন্ত্র ও বৈদিক গ্রন্থে উচ্চমার্গের স্ত্রী ও সাধিকাকে বেশ্যা বলা হয়েছে। বীরভাবের সাধক যে সকল বিশেষ বিশেষ সাধিকা স্ত্রীদের পূজাদি করেন এবং যে সকল সাধিকা তাঁদের সাধন সহায় পুরুষদের ভৈরব ভাবে চিন্তা করে নিজেরাও সাধনসিদ্ধাহন তাঁদেরও তন্ত্রে বেশ্যা বলা হয়। শঙ্কর বলেছেন, চুম্বন, আলিঙ্গন আঘাত, রতি বিগ্রহ দর্শন ত্রিসন্ধ্য আমন্ত্রণ ভগ ও লিঙ্গের b কীর্তন b এগুলো বেশ্যাদের জপের অঙ্গ। জপাঙ্গ ব্যতীত বেশ্যা মিলিত হবে না। প্রত্যহ শিবের সঙ্গে আনন্দিতা হয়ে নিবৃত্তিমার্গসা মন্ত্র জপ করেন , তিনি কালী এ-বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

লেখক লিখেছেন,,, প্রশ্ন উঠতে পারে, কামক্রিয়া জপাঙ্গ হয় কি করে? তন্ত্রের গোপনীয়তা ও পারিভাষিতা এখানেই। আলিঙ্গন = অঙ্গবিন্যাস, চুম্বন= ধ্যান, আঘাত= প্রাণায়াম, রতিবিগ্রহ দর্শন = জপ, আমন্ত্রণ= দেবতার আবাহন , ভগ-লিঙ্গের কীর্তন = শিবকালীর নামকীর্তন । বিপরীতার অর্থ কুলকুণ্ডলিনীকে সহস্রারস্থিত শিবের সঙ্গে যোগকরণ অর্থাৎ প্রবৃত্তির বিপরীত ভারাবললম্বনে নিবৃত্তিমার্গের সাধনা। ব্যভিচারিণী , গণিকা, বেশ্যা পদবাচ্যা নয়।( চলবে)
পরবর্তী পর্ব, আগামী সোমবার ১২ মে,২০২৫
