*

সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়: এবারের লোকসভা নির্বাচনে যদি বিজেপি জেতে, তাহলে মোদী এক বছরই প্রধানমন্ত্রী থাকবেন।২০২৫ এ তিনি ৭৫ বচর অতিক্রম করবেন। আর এস এস চায় নতুন মুখ নিয়ে আসতে। তাই মোদী আজ যে গ্যারেন্টির কথা বলে ভোট চাইছেন, যদি জিতে আসেন , তাহলে তাঁর গ্যারান্টির সময়সীমা হবে মাত্র একটি বছর। এমনই মন্তব্য করেছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বিভাগ র এর প্রাক্তন গোয়েন্দা এন কে সুদ। অস্ট্রেলিয়া নিবাসী ভারতীয় সাংবাদিক সন্দীপ পোগোটকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, মোদী যখন প্রধানমন্ত্রী হন, তখন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর অভিজ্ঞতাই মাত্র তাঁর সঞ্চয় ছিল।প্রধানমন্ত্রীর যেসব বিষয়ে জ্ঞান থাকা দরকার , কিছুই ছিল না। পৃথিবীতে এমন কিছু শিশু জন্মায় যাদের বিস্ময় বালক বলা হয়।তেমন বিস্ময় মানব মোদী। কাজের মধ্য দিয়ে নিজে নিজে শিখেছেন।

পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী পদে সুব্রমনিয়াম স্বামী, রাজনাথ সিং ,নীতিন গড়গড়ি মোদীজির তালিকায় নেই।
প্রাক্তন গোয়েন্দা এন কে সুদ যদিও আর এস এস ২০২৫ এ প্রধানমন্ত্রী বদলাবে এমন বলেননি। তিনি বলেছেন , মোদী নিজেই বলেছেন,৭৫ বছর বয়সে অবসর নেবেন। তিনই নির্বাচিত করে যাবেন দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী কে হবেন। সাংবাদিক সন্দীপ প্রশ্ন করেন বিজেপি যদিতৃতীয় বারের জন্য ক্ষমতায় আসে তাহলে প্রধানমন্ত্রীর বেশ কয়েকজন দাবিদার আছেন। যেমন নীতিন গড়গড়ি, রাজনাথ সিং সুব্রমনিয়াম স্বামী, হিমন্ত বিশ্বশর্মা ও অবশ্যই উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী। প্রাক্তন র আধিকারিক বলেন, মোদীজি তাঁর পরবর্তী উত্তরসূরি তৈরি করে রেখেছেন। তাঁর পছন্দের ব্যক্তি আদিত্য নাথ যোগী। তবে প্রধানমন্ত্রীর সামনে দুটো চোখ পেছনে দুটো চোখ থাকা দরকার। সেটা মোদীর আছে। লক্ষ্য করার বিষয় তিনি কিন্তু বিজেপির প্রবীণ নেতা আদবানীকে রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছেন। অনেকে বলেন মোদীজি এটা উচিত করেননি। প্রবীণ এই নেতাকে উপ প্রধানমন্ত্রী করা উচিত ছিল। কিন্তু যদি ইতিহাস দেখেন , দেখবেন অটলবিহারী বাজপেয়ীর সঙ্গে আডবাণী যে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন, সেকথা স্মরণে রেখে ক্ষমতা থেকে তাঁকে দূরে সরিয়ে রেখেছেন। এরপরে নাম আসে রাজনাথ সিংয়ের। কারণ তাঁর একটা স্বচ্ছ ভাবমূর্তি আছে। কিন্তু তাঁর ছেলেকে নিয়ে একবার ভালই বিতর্ক শুরু হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী মোদী রাজনাথ সিং কে ডেকে ছেলেকে সামলাতে বলেছিলেন। রাজনাথ সিং সেকথা শুনেছেন। ফলে মোদীজি তাঁকে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা দফতরের মন্ত্রীত্ব উপহার দেন। সুব্রমনিয়ম স্বামী সম্পর্কেও একই কথা। তিনিও বাজপেয়ীর বিরূদ্ধে কাজ করেছেন দলের মধ্যে থেকে। তাছাড়া স্বামী মোদীর সবচেয়ে বড় কট্টর সমালোচক। মোদী কিন্তু আবেগপ্রবণ ভাবাটা ভুল হবে। কারও বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পর্কে সন্দেহ থাকলে তিনি কঠোর হয়ে যান।

আদবানী কে ভারতরত্ন স্বান্তনা পুরষ্কার দিলেও রাজনীতি থেকে বিদায় নিতে বাধ্য করেছেন মোদী। কারণ, আদবানী বাজপেয়ীর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন, দাবি প্রাক্তন গোয়েন্দার।
কিন্তু লক্ষণীয় দেশের সর্বোচ্চ সম্মানীয় রাষ্ট্রপতি দাঁড়িয়ে।
প্রাক্তন র আধিকারিক আরও বলেছেন, অনেকে মনে করেন মোদীর সবচেয়ে কাছের মানুষ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এটা সত্যি মোদীর স্নেহে অমিত শাহ আজ দেশের দ্বিতীয় ক্ষমতাবান ব্যক্তি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী পদে মোদীজি তাঁকে তালিকায রাখেননি। আর একটি নাম চর্চায় আছে।তিনি নীতিন গড়গড়ি। কিন্তু নীতিন নিজের আত্ম অহঙ্কারে চলেন। দলের নীতির বাইরে নিজের ব্যাক্তিত্ব প্রতিষ্ঠায় ব্যস্ত থাকেন। তাছাড়া নীতিন পুত্র প্রায়ই পরোক্ষভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা করেন। তাঁদের মারাঠি সত্ত্বা বেশি কাজ করে। ফলে প্রধানমন্ত্রী পদে নিজের বিকল্প হিসেবে নীতিনের কোনো স্থান নেই।রাজনীতির সৎ ব্যক্তি হিসেবে মানুষ সবার আগে বিশ্বাস করেন, যাঁর পরিবার বলে কিছু নেই। দুজনেই একা। পরিবার হিসেবে কারও কাছে দায়বদ্ধ নন। দুজনের আরও মিল। দুজনেই সন্ন্যাসী।মোদী সাদা কাপড় পড়েন। যোগী গৈরিক কাপড় পড়েন। দুজনেই সূর্য ওঠার আগেই ঘুম থেকে উঠে শরীর চর্চা করেন, পুজো করেন তারপর মন্ত্রী হিসেবে দিনের কাজ শুরু করেন। যোগী আজ শুধু দেশে নন,কঠোর প্রশাসক হিসেবে বিদেশেও প্রশংসিত।মোদী ও যোগী বিদেশে আলাদা স্থান করে নিয়েছেন। সুতরাং মোদীর কাছে গাড়োয়ালের যুবক অজয় বিস্ত ওরফে আদিত্য নাথ যোগী কি হিন্দু রাজ্য গড়ার কারিগর হবেন? ২০২৫ এ আর এস এসের শতবর্ষ। এখনও কোনো প্রস্তুতি কিছু নেই। তবে কি আর এস এসের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী কে হবেন সেই সম্পর্কে কোনো প্রভাব ফেলতে পারবে না?

মোদীর পছন্দ যোগীকে। কিন্তু আর এস এস কি মানবে?
প্রাক্তন র আধিকারিক যা বলেছেন, তার অর্থ পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী মোদীজি স্থির করবেন। যেটা বলেননি সেটা হল আর এস বেএস কি পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদীর সিদ্ধান্তটে মোহর বসবে? দুয়ে দুয়ে চার এতটাই কি সোজা? বিষয়টা বুঝতে একটু ইতিহাস ঘাঁটতে হবে।৭৫ বছর বয়সে অবসর নিতে হবে এই সিদ্ধান্ত আর এস এস নেতা রামলালের। আডবাণী ও মুরলী মনোহর যোশীকে ক্ষমতা থেকে দূরে রাখতে এই নিয়ম চালু করেন। এই দুই প্রবীণ নেতাকে মার্গ দর্শন মন্ডলীর সদস্য করা হয়। এঁদের কাজ কেন্দ্রীয় সরকারকে পরামর্শ দেবেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত দু দুটি সরকার চালালেন মোদী,কিন্তু একদিনের জন্যও এই কমিটির কোনো পরামর্শ দূরের কথা, লোকসভায় এককাপ চা খেতেও প্রধানমন্ত্রী দফতরে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।আর এস এসের এই সিদ্ধান্তকে মান্যতা দিয়ে মোদীজি ৭৫ পেরোতেই মন্ত্রীসভা থেকে বলরাজ মিশ্র ও নাজমা হেপাতুল্লাকে বাই বাই করেছেন। মোদীজি যে ডবল ইঞ্জিনের কথা বলেন তার সব চেয়ে বড় মডেল উত্তরপ্রদেশ। তাইতো বিজেপির জনপ্রিয় শ্লোগান দিল্লি মে মোদী, লখনৌ মে যোগী। কিন্তু আরেকটি কথা মনে রাখা দরকার, যোগী কিন্তু আর এস এসের সঙ্গে জড়িত নন।১৯৯৮ সালে বিজেপির সাংসদ হয়েও বিজেপির কোনো সাংবাদিক সম্মেলনের ধরে কাছে যেতেন না। এমনকি ১১ নম্বর অশোকা রোডের বিজেপি কার্যালয়েও যেতেন না। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগে নিজের তৈরি হিন্দু যুবা সেনা নামে সংগঠন চালাতেন। প্রধানমন্ত্রী পদের দৌড়ে উত্তরপ্রদেশ অনেকদিন নেই। এবার যদি উত্তরপ্রদেশে বিজেপি গতবারের মত ভালো ফল করে , তাহলে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী পদে যোগী প্রথম দাবিদার হিসেবে উঠে আসবেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী পদে বসে বুলডোজার চালালে হবে না। বৈদেশিক কূটনীতি সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে।থাকতে হবে বিরোধীদের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা। যেটা বাজপেয়ীর ছিল। এখন আছে রাজনা সিংয়ের। এসব জল্পনা যদি বিজেপি চারশ পার না হোক ২৭২ অতিক্রম করলে। নাহলে,,,,,? অপেক্ষা ৪ জুনের জন্য।