বাঘের ঘরে ঘোগের বাসা, গৌড়ীয় বৈষ্ণব তীর্থ নবদ্বীপে প্রথম নাস্তিক সম্মেলন

সুজিৎ চট্টোপাধ্যায় : বাঘের ঘরে ঘোগের বাসা। শ্রী চৈতন্যের স্পর্শে গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্মের পীঠস্থান নবদ্বীপেই হল নাস্তিক সম্মেলন। উদ্যোক্তা নাস্তিক মঞ্চ। প্রাচীন জনপদে নদীয়া ও নবদ্বীপ নামে একটিই জনপদ ছিল। নবদ্বীপ নামটি প্রথম উল্লেখ মেলে কৃত্তিবাস মুখোপাধ্যায় ওরফে কৃত্তিবাস ওঝার রামায়ণে। ত্রয়োদশ শতাব্দীর শুরুতে বখতিয়ার খিলজি নবদ্বীপ জয় করার পর ফার্সি ভাষায় নবদ্বীপ অর্থে নতুন দ্বীপ কথার ভাষান্তর ঘটিয়ে নদীয়া করেন। অধ্যাপক ড: ক্ষুদিরাম দাস ভাষা বিবর্তনের উল্লেখ করে বলেন, নদীয়া নবদ্বীপ শব্দের প্রাকৃত তদ্ভব রূপ।

                    নবদ্বীপ ণঅদ্দীপ নদী অ- নদীয়া। নবদ্বীপকে বলা হয় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড। প্রতিষ্ঠা সম্ভবত ১০৬৩ খ্রিস্টাব্দে। পঞ্চদশ শতাব্দীতে চৈতন্যদেবের হাত ধরে গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্মীয় সংস্কৃতির সৃষ্টি। উত্তরপ্রদেশের কোনৌজ থেকে চৈতন্যদেবের পিতামহ মধুকর মিশ্র উড়িষ্যার জাজপুরে বসতি স্থাপন করেন। রাজার সঙ্গে বিবাদে প্রাণের ভয়ে চলে আসেন পূর্ববঙ্গের শ্রীহট্টে। অধুনা সিলেট। এখানেই জন্ম বিশ্বম্ভর মিশ্রের। যিনি গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্মের প্রবক্তা।

নাস্তিক সম্মেলনের উদ্যোক্তাদের একাংশ

এমন বহু ব্রাহ্মণদের বসতি গড়ে ওঠায় সংস্কৃত ভাষা চর্চার কেন্দ্রস্থল হয়ে ওঠে নবদ্বীপ। এঁদের মধ্যে শাক্ত ধর্মের কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশএবং বাসুদেব সার্বভৌম, রঘুনাথ শিরোমণি, স্মার্তরঘুনন্দন, বুনো রামনাথ অন্যতম। নদীয়ারাজ রুদ্র রায়ের সময় নবদ্বীপে চার হাজার ছাত্র ও ছ শো অধ্যাপক অধ্যাপনা করতেন। এহেন নবদ্বীপে দৈত্যকূলে প্রহ্লাদের মত বাস করেন যুক্তিবাদী আন্দোলনের সক্রিয় মুখ প্রতাপ দাস। নবদ্বীপ বা পরবর্তী বিষ্ণুপ্রিয়া হল্ট স্টেশনে নেমে যে কাউকে বললে বলে দেবে নাস্তিক ভিলার প্রতাপ দাসের বাড়ি কোথায়? রবিবার সকালে নবদ্বীপের পুরাতত্ত্ব পরিষদ সভাগৃহে ( ডিরোজিও মঞ্চ) প্রথম নাস্তিক সম্মেলন ২০২৪ অনুষ্ঠিত হল। মানুষের উৎসাহ ছিল দেখার মত শুধু রাজ্য নয়, বাংলাদেশ থেকেও প্রতিনিধিরা উপস্থিত হন। নাস্তিক মঞ্চের পরিচালন কমিটির পক্ষে নাস্তিক মঞ্চের সভ্যপদের ফর্ম পূরণ করেন বহু মানুষ।

নাস্তিক সন্মেলনে ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির নেতৃবৃন্দ।

সংগঠনের পক্ষে একটি খসড়া প্রতিবেদন বিলি করা হয়। বলা হয় নাস্তিক মঞ্চ চায় সকল বিজ্ঞানকর্মী , যুক্তিবাদী, নাস্তিক, মুক্তমনা দের এক ছাতার তলায় আনাই উদ্দেশ্য।১) বিজ্ঞানমনস্ক সংস্কৃতির পথে নাস্তিকতার প্রচার ও প্রয়াস ২) বাক স্বাধীনতা বিরোধী ভারতীয় দণ্ড বিধির ২৯৫,(এ) ধারা বাতিল করার দাবি,৩) কুসংস্কার বিরোধী আইন প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হওয়া,৪) জাত ব্যবস্থার বিলোপ করা,৫) সমমনস্ক ব্যক্তি ও সংগঠনের ঐক্যবদ্ধ করা। অন্যতম উদ্দেশ্য রাষ্ট্রের কাছে দাবি জানানো , ঘোষিত নাস্তিকদের পরিসংখ্যান নথিভুক্ত রাখার ব্যবস্থা করা। এই অনুষ্ঠানে ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির তরফে উপস্থিত ছিলেন সাধারণ সম্পাদক মণীশ রায়চৌধুরী, সহ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা সহ সংগঠনের বহু সদস্য।

২০২৩ সালে গড়ে ওঠা নাস্তিক মঞ্চের এই মূহুর্তে পঞ্জীভূত সদস্য সংখ্যা৬০। অন্যতমসদস্য কণিষ্ক চৌধুরী বলেন ভারতের নাস্তিক ঐতিহ্য প্রাচীন। কাল্পনিক সুখের ভিত্তিতে বেঁচে থাকার উপায় ধর্ম। বাংলাদেশের প্রতিনিধি রিয়াজ হাসান বলেন, অর্থের অভাবে স্কুলের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। বাড়ছে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। হাসপাতালে ওষুধ নেই, ডাক্তার নেই। কিন্তু রাস্তায় রাস্তায় ঈশ্বরের উপাসনালয়। এই অবস্থার বিরুদ্ধে জনস্বার্থে নাস্তিক মঞ্চ কাজ করবে। উদ্যোক্তাদের পক্ষে জানানো হয় মহারাষ্ট্রেও এদিন নাস্তিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগামীদিনে রাজ্য ও দেশের বিভিন্ন এলাকায় নাস্তিক্যবাদের প্রচার করবে নাস্তিক মঞ্চ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *