বি এন আই পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে যোগ দিলেন গ্রাহাম ওয়েইমিলার

শ্রীজিৎ চট্টরাজ : গুহা মানব প্রথম সংঘবদ্ধভাবে থাকার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিল প্রকৃতিররোষ থেকে বাঁচতে খাদ্যের নিশ্চিত নিরাপত্তার স্বার্থে । এরপর কেটেছে যুগের পর যুগ।১৭৭৬ সালে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও অর্থনীতিবিদ অ্যাডাম স্মিথ লিখেছিলেন উৎপাদনশীলতার ব্যাপকতা বাড়াতে যৌথ প্রচেষ্টার গুরুত্বের কথা। এরপর শিল্প বিপ্লব ও পরপর দুটি বিশ্বযুদ্ধ যা পুরানো শ্রেণী বিন্যাসের কাঠামোর আমূল পরিবর্তন ঘটায়। মধ্যযুগে যে ব্যাবসায়ী সংস্থার উদ্ভব সংগঠিত ভাবে বিস্তৃতি লাভ করে ১৮ শতাব্দীতে । অক্সফোর্ড ইংরেজি অভিধানে বিজনেস মেন শব্দটি গৃহীত হয় ১৭৯৮ সালে।১৮০৩ সালে বিজনেস ম্যান শব্দের উল্লেখ হয়। স্কটল্যান্ডের শিল্পপতি রবার্ট ওয়েন প্রথম অনুভব করেন পণ্য উৎপাদনে অনুপ্রেরণা সমস্যা। তিনি এই বিষয়ে পড়াশুনো শুরু করেন এরপর ফেড্রিক উইন্সলো টেইলর প্রথম শিল্পপতি যিনি অনুপ্রেরণামূলক কাজের মধ্য দিয়ে কর্মীদের প্রশিক্ষিত করার জ্ঞান অর্জন করে বিষয়টির সফল প্রয়োগ করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই বিষয়টির জনপ্রিয়তা বাড়ে প্রয়োজনীয়তার নিরিখে। হাভার্ড হুডার তাঁর শিক্ষায়তন হাভার্ড বিজনেস স্কুলে এই শিক্ষাক্রমের স্কুল খোলেন।১৯০৮ এ স্থাপিত এই ব্যবসায়িক বাণিজ্য বিদ্যালয় আজও শিল্পপতি মহলে মক্কা হিসেবে পরিচিত।

এই হাভার্ড বিজনেস স্কুলের সঙ্গে বহুদিনের যোগ ড: ইভান মিসনারের। তাঁর উদ্যোগেই গড়ে ওঠে একটি বিশ্বজনীন ব্যাবসায়ী উদ্যোগপতিদের সংগঠন বি এন আই। মিসনারের বক্তব্য, প্রাথমিক ভাবে আমি বেশ কয়েকটি নেটওয়ার্ক সংস্থায় যুক্ত থাকলেও বুঝতে পারি সদস্যদের মধ্যে ঐকান্তিক ভারসাম্য নেই। ফলে প্রত্যেকে দ্রুত নিজের ব্যবসা সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে। আমি চেয়েছিলাম গিভার্স গিভ নীতির ওপর একটা সংগঠন।১৯৮৫ সালে তাঁর স্বপ্ন পূরণ হয়। ভারতের ক্ষেত্রে তাঁর মন্তব্য গুটি কয়েক বৃহৎ পুঁজির ওপর নির্ভর করে দেশের অর্থনীতি শক্ত হতে পারে না। ভারতের অর্থনীতির বুনিয়াদ শক্ত করতে মাঝারি ও ছোট উদ্যোগপতিদের বিকাশ দরকার। বিশ্ব জুড়ে যে বিশাল বাজার তার সাথে একটি সংগঠনের ছাতার তলায় থেকে অভিষ্ট পথে পৌঁছানো সম্ভব। ভারতেও বি এন আই এর পথ চলা শুরু ২০১৪ সালে।১৯৮৫ সালে সংগঠনের যখন প্রথম শাখা অ্যামেরিকায় খোলা হয় তারপর ১১ বছরে ৫০০ শাখা।১৯৯৬ সালে ইন্টারনেট প্রযুক্তি আসার পর সেই সংখ্যা ২০০৮ পর্যন্ত দাঁড়ায় ৫০০০।

ভারতে বি এন আইয়ের ব্যাপ্তি বেড়েছে সম্প্রতি কলকাতা বাইপাসের ধারে এক সাততারা খচিত হোটলেসকাল থেকে রায় পর্যন্ত ছিল সম্মেলন ও কৃতি ব্যবসায়ীদের উৎসাহ প্রদানের জন্য পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। দুপুরে ছিল সাংবাদিক সম্মেলন। উপস্থিত ছিলেন আমেরিকা থেকে সংগঠনের চেয়ারম্যান ,সি ই ও গ্রাহাম ওয়েইমিলার। ছিলেন কলকাতা সি বি ডি (এ) ও নর্থ অ্যাসোসিয়েট এরিয়া ডিরেক্টর কৃষ্ণা সিং, ন্যাশনাল ডিরেক্টর হেমু সুবর্ণ , এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর বিমল সামল, রাহুল মোহাতা ও রাহুল আগরওয়া । বক্তারা বলেন ১১ বছরের পথ পরিক্রমায় ৩৩ টি অধ্যায়ে ১ লক্ষ ৩১ হাজার ৯৮৩ টি ব্যবসায়িক সূত্র পরিবেশিত হয়েছে। উপকৃত সদস্যদের ব্যবসা হয়েছে ২১৯৫ কোটি। তালিকায় ২৯১৭ ও ২০১৯ সালে বিশ্বের একনম্বর স্থান পাওয়া সম্ভব হয়েছে।

সংস্থার চেয়ারম্যান ও সি ই ও গ্রাহাম ওয়েইমিলার বলেন, বি এন আই আজ বিশ্বের বৃহত্তম নেট ওয়ার্কিং সংস্থা হওয়ার সুবাদে বিশ্বব্যাপী ১১,১৭২ টি শাখায় ৩,২৭২১৯ জনের বেশি সদস্য ছড়িয়ে আছেন বিশ্বের ৭৯ টি দেশে। গত বারো মাসে ব্যবসার পরিমাণ হয়েছে ১৮৩৭৬২ কোটি টাকা। ভারতে ১২৩৬ টি শাখায় সদস্য সংখ্যা ৫৯,৫৭১,,। মোট ১৩১ টিশহরে কাজ চলছে। ব্যবসা হয়েছে ৩৯,৪৪৪ কোটি টাকা। কলকাতার এক উজ্জ্বল ভবিষ্যত আছে । সাংবাদিকদের তরফে এই প্রতিবেদকের প্রশ্ন ছিল সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ড: ইভান মিসনার তাঁর বেশ কয়েকটি বইতে ব্যবসায়ী ও উদ্যোগপতিদের মানসিক উত্তরণের জন্য সাতটি সূত্রের উল্লেখ করেছেন। কিন্তু যেসব ব্যবসায়ী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হতে চান তাঁদের যোগ্যতার মাপকাঠি কি আপনারা মেপে দেখেন। প্রশ্নের প্রশংসা করে সংগঠনের পক্ষে কৃষ্ণা সিংয়ের অনুরোধে গ্রাহাম ওয়েইমিলার বলেন শুধু বার্ষিক চাঁদা দিয়েই এ সংগঠনের সদস্য হওয়া যায় না। আবেদন করলে আমাদের একটি তদন্তকারী টিম আবেদনকারীর সম্পর্কে সংগঠনে খোঁজখবর নিয়ে রিপোর্ট দেন।সেই ভিত্তিতে আমরা আবেদনকারীকে প্রাথমিক সদস্যপদ দিই। তারপর আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠাতা ড: মিসনারের যে সততা নিষ্ঠা ও উদ্যোগ সম্পর্কে সাতটি নীতি আছে সেই নীতি অনুসরণের পথ দেখাই। এই ভাবেই মানসিক উত্তরণের সঙ্গে ব্যবসায় সফল হওয়ার দিক নির্দেশ করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *