বেশ্যার বারোমাস্যা

পর্ব : ৩৮

স্বর্গের অপ্সরাদের কাজ ছিল দেবতাদের নৃত্য পরিবেশন ও ঋষি ও পৃথিবীর রাজাদের বিনোদন দেওয়া।

সুজিৎ চট্টোপাধ্যায় : বৈদিক যুগ থেকে বেশ্যার বারোমাস্যা আলোচিত হবে কিন্তু অপ্সরাদের কথা থাকবে না সে কি সম্ভব? প্রাচীন সাহিত্যে যে অপ্সরাদের উল্লেখ আছে তাঁরা মূলত স্বর্গের বারাঙ্গনা। তাঁরা যে শুধু স্বর্গের দেবতাদের মনোরঞ্জন করতেন তা নয়। মর্ত্যে নেমে এসে মুনি ঋষিদের ধ্যান ভঙ্গ করতেন নৃত্য গীত ও শরীরী ভঙ্গিমা প্রদর্শন করে। কখনও কখনও মুনি ঋষি বা রাজাদের সন্তানে জন্মও দিতেন। বাল্মীকি রামায়ণে আছে রামচন্দ্রের পিতা দশরথ। দশরথের পিতা অজ। অজের স্ত্রী ছিলেন এক অপ্সরা। রাজা অজ একদিন শিকারে গিয়ে গভীর অরণ্যে এক সুন্দরী নারীকে দেখে তাঁর রূপে মুগ্ধ হন। ইন্দুমতী ছিলেন রাজা উশিনার কন্যা। ইন্দুমতীকে রামচন্দ্রের পিতামহ প্রেম নিবেদন করে বিবাহের প্রস্তা দেন। রাজা রঘু ছিলেন বিখ্যাত রাজা তাঁর পুত্র অজ। সুতরাং রাজকন্যা ইন্দুমতীর প্রস্তাব ফেরানোর কোনো কারণ ছিল না।

রামচন্দ্রের পিতামহী ইন্দুমতী ছিলেন শাপগ্রস্থ অপ্সরা।

আসলে ইন্দুমতী ছিলেন স্বর্গের অপ্সরা। নাম হরিণী। মহর্ষি ত্রিনবিন্দু ইন্দ্রত্ব প্রাপ্তির জন্য তপস্যায় প্রায় সিদ্ধিলাভ করতে চলেছিলেন। নিজের দেবরাজের সিংহাসরক্ষায় অপ্সরা হরিণীকে পাঠান মহর্ষি ত্রিনবিন্দুর আশ্রমে। কাম নৃত্যে ঋষির তপস্যা ভঙ্ করাতে। তপস্যা তো ভঙ্গ হল কিন্তু ঋষির অভিশাপগ্রস্থ হলেন অপ্সরা হরিণী। মর্ত্যে মানব রূপে জন্ম নিতে হল। অপ্সরা হরিণী বিদর্ভ রাজ ভোজের কন্যা হিসেবে জন্ম নেন। অপ্সরা হরিণী বলেন দেবরাজ ইন্দ্রের আদেশ পালনে তাঁর ধর্ম। তবে কেন অভিশাপ? ঋষি বিষয়টি বুঝতে পেরে বলেন, পৃথিবীতে যেদিন স্বর্গের ফুল দর্শন করবেন হরিণী সেদিন তিনি শাপমুক্ত হয়ে স্বর্গে ফিরে যাবেন। ইতিমধ্যে দশরথের জন্ম হয়েছে। রাজা অজ ও রাণী ইন্দুমতী রাজপ্রাসাদের বাগানে প্রেমালাপ করছিলেন তখন দেবাদিদেব মহাদেব দক্ষিণ মহাসাগরের তীরে গোকর্ণ মন্দিরে অবস্থান করছিলেন। দেবর্ষি নারদ তাঁর সাক্ষাতের জন্য দ্রুত আকাশ পথে উত্তর থেকে দক্ষিণে যাচ্ছিলেন। তাঁর গলার একটি স্বর্গীয় ফুলের মালা থেকে একটি ফুল পরে ভূপৃষ্ঠে। সেই রাজা অজের বাগানে। সেই ফুল ইন্দুমতীর দৃষ্টিগোচর হওয়া মাত্র ইন্দুমতীর শাপমুক্তি ঘটে। অদৃশ্য হয়ে তিনি স্বর্গে ফিরে যান।

রাজা দুষ্মন্তের স্ত্রী শকুন্তলা অপ্সরা মেনকার কন্যা।

স্ত্রীর অন্তর্ধানে শোকবিহ্বল রাজা অজ পুত্র দশরথের হাতে রাজ্যভার দিয়ে বানপ্রস্থে চলে যান রাজা অজ। এমনই এক অপ্সরা মেনকা। তাঁর কন্যা শকুন্তলা। এই দুজনের কথা বিস্তারিত তথ্য মেলে কালিদাসের রঘুবংশম কাব্যে। হিন্দু শাস্ত্রে স্বর্গে ২৬ অপ্সরাদের উল্লেখ আছে। মুসলীম ধর্মে বলা হয়েছে বেহস্তের অর্থাৎ স্বর্গের ৭২হুরের কথা। আরবি ভাষায় হুর অর্থ হাওয়া। হাওয়া একটি বহুবচন। স্ত্রীবাচক শব্দ। সূরা আন নাবা ৩১-৩৩ এ বলা হয়েছে মুত্তাকিদের জন্য রয়েছে স্ফীত স্তন বিশিষ্টা সমবয়সী বালিকা। পুরুষদের জন্য বেহস্তে হুরের কথা থাকলেও নারীদের জন্য কি সেই সম্পর্কে তথ্য নেই। খ্রিস্টানদের আদি ধর্মগ্রন্থ পুরাতন বাইবেল। বা আদি বাইবেল। ইংরেজিতে বলা হয় ওল্ড টেস্টামেন্ট। সেখানে ঈশ্বর আদম নামে এক পুরুষের সৃষ্টি করেন। তাঁর একাকী জীবন দূর করতে ঈশ্বর লিলিথ নামে এক নারীকে পাঠান। আদম তাঁর ইচ্ছেমত যৌন সঙ্গিনী হিসেবে তাঁকে পেতে চান। কিন্তু পুরুষের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে দাসত্বের শিকার হতে আপত্তি করেন। আদমের অভিযোগে ঈশ্বর লিলিথকে ফেরত নিয়ে ইভকে পাঠান। ইভ আদমের দাসত্বকে মেনে নেন। (চলবে)

আগামী পর্ব ২৬ আগষ্ট ,২০২৪

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *