সুজিৎ চট্টোপাধ্যায় : বইমেলায় সম্প্রতি এস বি আই অডিটরিয়ামে অধ্যাপক ও ই আই আই এল এমের চেয়ারম্যান ডাইরেক্টর ড: রমাপ্রসাদ ব্যানার্জি বেদস্থান: সত্যার্থীর ব্রহ্মজ্ঞান সাধন বেদ পথে শীর্ষক বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় দুটি বই প্রকাশ করলেন। অডিটরিয়াম ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। তবে কৌতূহলী পুস্তকপ্রেমী বেদ অনুরাগীদের তুলনায় ভিড় ছিল লেখকের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রী , শিক্ষক অশিক্ষকদের ভিড়। অনুশাসন যাকে বলে।বই প্রকাশ অনুষ্ঠানকে আকর্ষিত করতে হাজির করানো হলো ফিল্ম স্টার আবির চট্টোপাধ্যায়কে। আবির তাঁর কর্ম ব্যস্ততার মধ্যেও বই মেলায় আসার ছোটবেলার নস্টালজিক স্মৃতি চারণ করলেন। সদ্য প্রকাশিত বই এর গুরুত্ব নিয়ে বেশি ঘাঁটাঘাঁটি করলেন না। তবে অভাব পুষিয়ে দিলেন দক্ষিণেশ্বরে কর্তা কুশল চৌধুরী।

অনুষ্ঠানটি আন্তর্জাতিক স্তরে নিয়ে যাওয়ার জন্যই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল মার্কিন লেখিকা রোজান আর টেলরকে। ছিলেন মার্কিন এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ডিরেক্টর অধ্যাপক ড: মার্ক এইচ টেলরকে। সম্ভবত দুজনে স্বামী স্ত্রী। লেখিকা ভারতীয় সংস্কৃতি মেনে শাড়ি পরে এসে নমস্কার জানালেন। দর্শকের বিপুল হাততালিও পেলেন । ছিলেন জিনা এন্ড কোম্পানির ডিরেক্টর ও হেড এইচ আর লাকি কুলকার্নি, ই আই আই এল এম-এর প্রিন্সিপাল এডভাইসার ও মেন্টর এস কে দত্ত। অনুষ্ঠানের শেষ মুহূর্তে এলেন কলকাতার আলিপুর এলাকার এক প্রাচীন বেসরকারি নার্সিংহোমের এম ডি ও সি ই ও রূপক বড়ুয়া।
বই দুটির লেখক ড: রমাপতি ব্যানার্জি তাঁর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বৈদিক ধারায় বৈদিক সভ্যতার নিরিখে নতুন প্রজন্মকে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে ব্রতী। বৈদিক গবেষণার ফলশ্রুতি এই দুটি বই। তিনি জানালেন, জীবনের দিশা পেতে সহজ কথায় বৈদিক সংস্কৃতিকে তিনি সাধারণের কাছে ছড়িয়ে দিতে এই বইদুটি প্রকাশ করলেন। মুশকিল হলো বাঙালির আদর্শ বিদ্যাসাগর মশাই আবার বলেছেন, বেদ ভ্রান্ত। বারাণসী সংস্কৃত কলেজের প্রিন্সিপাল জেমস আর ব্যালেন্টাইন কলকাতা সংস্কৃত কলেজ পরিদর্শনে এলে তাঁকে এক লিখিত প্রতিবেদনে বিদ্যাসাগর জানিয়েছিলেন , সাংখ্য আর বেদান্ত যে ভ্রান্ত দর্শন সে সম্পর্কে এখনআর বিশেষ মতভেদ নাই। তবে ভ্রান্ত হলেও এই দুই দর্শনের প্রতি হিন্দুদের গভীর শ্রদ্ধা আছে। সংস্কৃতে যখন এগুলি পড়াতেই হবে তখন তার প্রতিষেধক হিসেবে ছাত্রদের ভালো ভালো ইংরেজি দর্শনশাস্ত্রের বই পড়ানো দরকার। বার্কলের বই পড়ালে সেই উদ্দেশ্য সাধিত হবে বলে মনে হয় না। কারণ সাংখ্য ও বেদান্তের মত বার্কলেও একই শ্রেণীর ভ্রান্ত দর্শনরচনা করেছেন।
নব হিন্দুবাদের প্রবক্তা স্বয়ং বঙ্কিমচন্দ্র তাঁর রচনাবলীতে দেবতত্ব ও হিন্দু ধর্ম প্রবন্ধে পৃষ্ঠা নম্বর ৭১০এ লিখেছেন , বেদ ভগবান প্রেরিত নয়। বেদ মানুষই লিখেছে। যে বুদ্ধদেবের কথা বলা হয় তিনিও তো বেদবিরোধী ছিলেন। আমরা যাঁরা শিক্ষিত নই, আমরা তো দোলাচলে। বেদ ভ্রান্ত না অভ্রান্ত কাকে সঠিক বলব?
বেদ অনুবাদের কথা বললে বলতে হয়, শ্রুতি বেদ এর মূল আকর গ্রন্থটি কোথায়? ফারসি অনুবাদ? বেনারস গাজীপুরের মহীধর, সায়নাচার্য এঁদের নাম যুক্ত করে বেদ রচনায় বহু ল্যাটিন, গ্রিক এমনকি আইরিশ কারোতর ভাষা ছ হাজার বছর আগে এল কোথা থেকে? এমন হাজার প্রশ্ন। রাষ্ট্র যখন নাগরিকের ন্যূনতম চাহিদা পূরণ করতে পারে না তখন অধ্যাত্মবাদী জ্ঞানের তত্ত্ব বাজারে ছাড়া হয়। হতাশাগ্রস্ত নাগরিক জীবন সমুদ্রের সংকটে খড়কুটো ধরে বাঁচতে চায়। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে রাষ্ট্রশাসক। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে বুদ্ধিজীবীরা রাষ্ট্রকে সাহায্য করেন তত্ত্বকথায়। তবে ড: রমাপতি ব্যানার্জি তাঁর বিশ্বাস ওআস্থাকে ইতিবাচক হিসেবে প্রচার করতেই পারেন। কিন্তু সনাতনী শ্রদ্ধার কথা যেভাবে ছড়ানো হচ্ছে তাঁদের ঘরে সুলভ সংস্করণ বেদ বা সংবিধান আছে তো? এই প্রশ্নটাও থেকে যায়।