পর্ব : ১০২

পর্যটক উইলিয়াম ফিঞ্চ
সুজিৎ চট্টোপাধ্যায় : হারেমের কাহিনী গ্রন্থের লেখক সাযযাদ কাদির লিখেছেন , পর্যটক উইলিয়াম ফিঞ্চ (১৬০৮-১১) মোঘল জেনানার কিছু বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করেছিলেন সিরহিন্দ বেড়াতে গিয়ে। রাজ -উদ্যানের যেখানে নুড়িপাথর দিয়ে তৈরি দুটি পথ মিলেছে সেখানে ছিল এক অষ্টবর্গ মহল। ওই মহলে রমণীদের জন্য ছিল আটটি কামরা। মাঝখানে ছোটখাট একটি জলাশয়। কামরাগুলির উপরে আরও আটটি কক্ষ ছিল _ সেগুলির চারপাশে চমৎকার দরদালান। আর সবার উপরে ছিল এক মনোরম চৌত্রী বা চবুত্র ( চবুতর)_ অবসর বিনোদনের স্থান। পুরো ভবনটি পাথরে নির্মিত। অসংখ্য চিত্র ও মূর্তি দিয়ে সজ্জিত। দুপাশে দুটি জলাশয়। চারপাশে সাইপ্রাস গাছের সারি। মাঝখানে পাথরের এক চত্বর। কিছুটা দূরে আর একটি মহল।

লাহোরে মোঘল হারেম
লাহোরেও ছিল এমন অনেক প্রাসাদ। লাহোরে চলত এক ছোটখাট দিওয়ানখানা – মুঘল শাসক রাজকার্য পরিচালনা করতেন সেখানে বসে। এর পিছনেই ছিল শয়নকক্ষ। সামনে ছিল প্রশস্ত এক বাঁধানো আঙিনা। ডানপাশে ছোট এক দোতলা মহল। যার প্রতি তলায় আটটি করে কক্ষ। কক্ষগুলির জানলা দিয়ে নদী দেখা যেত। ওই মহলের জেনানাদের কড়া নজরে রাখার জন্য কক্ষগুলির দরজা বন্ধ রাখা হতো বাইরে থেকে। কিন্তু বজ্র আঁটুনি ,ফস্কা গেরো। এত কঠোর ব্যবস্থার পরেও হারেমের জেনানাদের কাছে পৌঁছে যেত তাদের প্রণয়ী । কখনও জেনেনারা চলে যেত রাতের অন্ধকারে অভিসারে। সম্ভবত প্রহরীদের ঘুষ দিয়ে। এই সব কক্ষের পাশে টানা বারান্দায় সম্রাটের সিংহাসন পাতা থাকত। সেখানে জেনানারার সেজেগুজে ঘোরাফেরা করতেন
পর্যটক ফিঞ্চ লিখেছেন, এই ভবনের দেয়ালে ও সিলিংয়ে আঁকা থাকত দেবদূত, গাছ ও দেবদেবীর ছবি। তবে দেবীদের কদাকার চিত্র কেন আঁকা হয়েছিল পর্যটক ফিঞ্চ বুঝতে পারেননি। সেসব বীভৎস ছবি জেনানাদের জন্য রীতিমত ভয়ের বস্তু হওয়াই স্বাভাবিক। সম্ভবত কোনো লুট করে আনা এইসব জেনানারা যাতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা না করে তারজন্য হয়ত একটা ভয়ের পরিবেশ রিচনাইট ছিল উদ্দেশ্য। (চলবে)
পরবর্তী পর্ব : আগামী শুক্রবার ১১ এপ্রিল,২০২৫
