শ্রীজিৎ চট্টরাজ : বলাকা কাব্যগ্রন্থে রবীন্দ্রনাথ ১৩২১ সালের ২৯ পৌষ লিখেছিলেন, যতক্ষণ স্থির হয়ে থাকি, যত কিছ বস্তুভার । ততক্ষণ নয়নে আমার নিদ্রা নাই; ততক্ষণে এ বিশ্বেরে কেটে কেটে খাই কীটের মত; ততক্ষণ চারিদিকে নেমে নেমে আসে আবরণ ; দুঃখের বোঝা শিশু বেড়ে যায় নূতন নূতন ; এ জীবন সতর্ক বুদ্ধির ভারে নিমেষে নিমেষে বৃদ্ধ হয় সংশয়ের শীতে, পক্ক কেশে।,,,,,,, জীবনের সবচেয়ে কঠিন সত্য বার্ধক্য ও বার্ধক্যে মৃত্যুর প্রতীক্ষা। তারাশঙ্করের কবি উপন্যাসে অবাক চরিত্র স্বভাবকবি নিতাই লিখেছিল কালো যদি মন্দ হবে গো,কেশ পাকিলে কান্দ কেনে? কবি নিতাই লিখেছিল, ভালোবেসে মিটল না এ স্বাদ, কুলাল না এ জীবনে! হায় জীবন এত ছোট কেনে? জীবন সায়াহ্নে পৌঁছে আমরা ভাবি, ঠিক একই কথা।
তারুণ্যের স্তর পেরিয়ে প্রৌঢ়ত্ব যখন জানান দেয়- হে মানব, বৃদ্ধত্বের জন্য প্রস্তুত হও , অনেকে মেনে নিতে পারেন না। নিজেকে বিচ্ছিন্ন মনে করেন। একাকীত্ব গ্রাস করতে থাকে তখন। বিচ্ছিন্ন দ্বীপবাসী মনে করে নিজেকে। ভারতে প্রবীণ নাগরিকদের নিয়ে এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে দেশের একশ প্রবীণ নাগরিকের ৪৩ জন মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত। প্রধান অভিযোগ, পরিবারের পরবর্তী প্রজন্মের বিরূদ্ধে। কলকাতায় প্রবীণদের নিয়ে কাজ করেন এমন কিছু সংস্থা নিজেদের মত করে যে সমীক্ষা করেছেন সেখানে মুখ্য সমস্যা উঠে এসেছে তিনটি। এক, শারীরিক অসুস্থতা যা প্রাণশক্তিতে ঘাটতি আনে। দুই, দৈহিক ও মানসিক নিরপত্তা তিন, অবশ্যই একাকীত্ব। করোনা প্রবাহে যেমন জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে তেমন কিছু ইতিবাচক প্রভাবও আছে। অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা প্রবাদকে মিথ্যে প্রমাণ করে সামাজিক দায়বদ্ধতার কথা ভেবেছেন। প্রবীণ ও দুস্থদের পাশে দাঁড়ানোর এমনই এক সংস্থা প্রবীন একান্ত। দীপশঙ্কর চ্যাটার্জি, ডা: দিলীপ ঘোষ, শাশ্বতী চ্যাটার্জির এক সফল উদ্যোগ।
সম্প্রতি দক্ষিণ কলকাতার ঐতিহ্যময় সুজাতা সদনে প্রবীণ একান্ত সংগঠনের প্রথম বার্ষিক অনুষ্ঠান জোনাকি ২০২৪ আয়োজিত হয়।অনুষ্ঠানে সামাজিক কর্মকাণ্ডের জন্য সম্বর্ধিত করা হয় সংগঠনের মূল কমিটির ব্যক্তিত্বদের। এছাড়াও সোশ্যাল হিরো এওয়ার্ড তুলে দেওয়া হয় চার সামাজিক সৈনিককে। অনুষ্ঠানের আর এক পর্ব ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সমগ্র সমবেত নৃত্য পরিবেশন করে কিংকিনি নৃত্য সংস্থা। সংগীত পরিবেশন করেন অভীক দাস ও দিয়া রায়চৌধুরী। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ছিলেন পৌষালি সেনবরাট। সমগ্র অনুষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন শম্পা দত্ত।অনুষ্ঠান বিন্যাসে কিছুটা সুর কাটলেও আন্তরিকতা আবেগের স্পর্শে সেই ত্রুটি ভরাট হয়ে যায়। দর্শকদের বিপুল উপস্থিতি প্রমাণ করে প্রবীণ একান্ত সংগঠন তাঁদের কতটা একান্ত আপন।