সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়: বাঙালির নাড়ির টান অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে এমনটাই তো বলে ইতিহাস। আফ্রিকার নিগ্রো বটু ও প্রোটো অস্ট্রেলিয়াড আদিবাসী জিনের সংযুক্তি ঘটে প্রথম বাঙালির। এরপর কেটেছে বহু যুগ। ইতিহাস বলে ব্রিটিশ নাগরিক জেমস কুক ১৭৭০ সালে অস্ট্রেলিয়ার ভূমিপুত্র আদিবাসীদের পরাস্ত করে অস্ট্রেলিয়া দখল নেন। এর ২৭ বছর পর অর্থাৎ ১৭৯৭ সালে স্কটিশ ব্যবসায়ী উইলিয়ম ক্লার্কের সঙ্গে প্রথম ১২ জন বাঙালি প্রথম পা রাখে অস্ট্রেলিয়ায়। গন্তব্য ছিল সিডনি। সেসময় সিডনির লোকসংখ্যা ছিল মাত্র ১৫০০। আজ সেসংখ্যা ৫০ লাখ। বাঙালি জাহাজে করে ব্যবসার জন্যই অস্ট্রেলিয়া পাড়ি দেয়। ক্লার্ক অস্ট্রেলিয়া অভিযান সেরে কলকাতায় ফিরে আসেন দুবছর পর। অস্ট্রেলিয়া অভিযানের সেই ইতিহাস তিনি লেখেন কলকাতায় বসে। যা উইলিয়াম ক্লার্ক জার্নাল নামে ইতিহাসে স্থান পায়। ব্রিটিশ উপনিবেশ অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় গভর্নর ছিলেন জন হান্টার। ব্রিটিশ সরকারের সহযোগিতা ছাড়া ব্যক্তিগত উদ্যোগে ক্লার্কের ও বাঙালির অস্ট্রেলিয়া অভিযান পছন্দ না করলেও সিডনিতে বাঙালি অভ্যর্থনা পায়। যদিও বাঙালির ইতিহাস নিয়ে উদাসীনতায় সেই বাঙালিদের নাম ইতিহাসে নেই।

সুতরাং বাঙালি পায়ে সর্ষে এই প্রবাদকে আর একবার সত্যি প্রমাণ করতে অস্ট্রেলিয়া পর্যটনের কথা ভাবতেই পারেন। সেই সুযোগ এনে দিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার পর্যটন বিভাগ। মঙ্গলবার বিকেলে ধর্মতলার ট্রাম ডিপোতে সাজিয়ে তোলা হয় একটি এক কামরার ট্রাম। গত ১৫০ বছরের ঐতিহ্যবাহী কলকাতার ট্রামে অস্ট্রেলিয়ার পর্যটনের তথ্য দিয়ে একটি কামরা সাজিয়ে তোলা হয়েছে। যেখানে অস্ট্রেলিয়ার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আ সংস্কৃতি স্থান পেয়েছে। ট্রামটি আগামী ১৫ দিন কলকাতা প্রদক্ষিণ করবে। প্রচার অনুষ্ঠানের উদ্বোধনে এদিন ধর্মতলা ট্রাম ডিপোয় সাংবাদিকদের সঙ্গে মিলিত হলেন অস্ট্রেলিয়ান কনসাল জেনারেল হিউ বয়লান। ছিলেন অভিনেত্রী রাইমা সেন ও কলকাতা পরিবহন বিভাগের সচিব ড: সৌমিত্র মোহন। কলকাতার ট্রামে একটুকরো অস্ট্রেলিয়া ঘুরছে কলকাতার রাস্তায় রাস্তায়। হিউ বয়লান বলেন, কলকাতার মানুষের সুনাম রয়েছে বিশ্ব পর্যটক হিসেবে। আমরা এই ট্রামটিকে এমন ভাবে সজ্জিত করেছি যেখানে কলকাতার নাগরিকেরা অস্ট্রেলিয়ার আদিম সৈকত , রাজকীয় স্থাপত্য ও বনাঞ্চলের প্রাণীদের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সাথে সাথে অস্ট্রেলিয়ার সংস্কৃতি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পাবেন। উৎসাহী কলকাতা তথা বাংলার মানুষকে আমরা স্বাগত জানাতে চাই অস্ট্রেলিয়ায়।ছেলেবেলার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে সুচিত্রা নাতনি রাইমা সেন ট্রামে চড়ার অভিজ্ঞতাব্যক্ত করেন।

অস্ট্রেলিয়ার মানুষ ট্রামের প্রতি দূর্বল। বাঙালিও ট্রাম সম্পর্কে নস্টালজিক। বাঙালির দুর্বলতা মাছ ভাজা ও আলু ভাজা।অস্ট্রেলিয়ার মানুষেরও পছন্দ ফিশ ফ্রাই অ্যান্ড চিপস্। তাছাড়া বিশ্বের নিরাপদ ভেজালবিহীন খাদ্যের জন্য চিহ্নিত এই দেশ। অস্ট্রেলিয়ানদের মানসিকতা কতটা অতিথিপরায়ণ বুঝতে বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম দেশ অস্ট্রেলিয়ার দ্য সিকার্স এর একটি গান আমি অস্ট্রেলিয়ান উদাহরণ হিসাবে যথেষ্ট। বাংলা তর্জমা করলে যার মানে আমরা এক কিন্তু আমরা বহু, পৃথিবীর সমস্ত দেশ থেকে আমরা এসেছি। আমরা একটি স্বপ্ন ভাগ করে এক কণ্ঠে গাইব আমি আপনি , আমরা অস্ট্রেলিয়ান। অস্ট্রেলিয়ায় রয়েছে ৪২৯ টি ভাষার জনগোষ্ঠী। বাংলাভাষীদের অবস্থান ২৪ তম। ভারতে জন্ম কিন্তু অস্ট্রেলিয়ায় বাস করেন এমন ভারতীয়র সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ ৭০ হাজার। সুতরাং অস্ট্রেলিয়া পর্যটনে অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের লাকেম্বা, মিন্টো, ওয়ালি পার্ক , ম্যাকোয়েরি ফিল্ডস ও ব্যাংকটাউন শহরতলীগুলি যদি সিডনি মেলবোর্নের সঙ্গে জুড়ে নেন তাহলে অস্ট্রেলিয়ার বুকে কয়েকটি টুকরো টুকরো বাঙালি স্থান খুঁজে পাবেন। তাই এবার পুজোর ছুটিতে বাঙালির গন্তব্য হোক অস্ট্রেলিয়া এমনটাই চান অস্ট্রেলিয়ার পর্যটন বিভাগ।