সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়: রাত পোহালেই জল্পনাকল্পনার অবসান। নতুন লোকসভায় নতুন সাংসদদের গৃহপ্রবেশ ঘটার প্রাথমিক বোধন হতে চলেছে ৪ জুন। সপ্তম দফার ভোটের শেষে আগামিকাল জন গনেশ নির্বাচিত প্রতিনিধি পাবেন রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। কেউ জিতবেন। কেউ হারবেন। দেশের ৫৪৩ জন সাংসদের বৃহত্তম অংশ তাঁদের নেতার নেতৃত্বে দেশ পরিচালনা দায়ভার গ্রহণ করবেন। লাখ টাকার এক কথা। মোদী কি গ্যারেন্টিতে জনতা আস্থা রাখবেন নাকি, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় সরকারের কাজকর্মের প্রতিবাদে বিরোধীদের হাতে তুলে দেবেন আগামী পাঁচ বছরের দায়। সংবাদমাধ্যমগুলি ইতিমধ্যে নির্বাচন পূর্ব সমীক্ষা করে, তেমন ভোট পরবর্তী সমীক্ষাগুলি এখন আলোচনার বিষয়। পেশাদার সব সমীক্ষক সংস্থাই জানিয়েছে ক্ষমতায় আবার ফিরছেন মোদী।৩০০ থেকে প্রায় ৪০০ ছুঁই ছুঁই আসন নিয়ে আবার মোদী। এরাজ্যে নাকি রাজ্যের শাসক দল হতে চলেছে দ্বিতীয়। রাজ্যের ৪২ টি আসনের মধ্যে বিজেপি পেতে চলেছে প্রায় ২৫ থেকে ২৮ টি আসন। এই অনুমান যদি সত্যিই হয়, তাহলে বাংলায় হবে পট পরিবর্তন।হিন্দু রাজ্য প্রতিষ্ঠায় বাংলার ভূমিকা হবে প্রথম সারিতে। এমনটাই তো আগেই জানিয়ে রেখেছেন মোদী শাহ জুটি।
গোটা দেশের ক্ষেত্রেও নাকি অপেক্ষা করছে গৈরিক ঝড়। সে ঝড়ের উড়ানে উড়ে যাবে দেশের বিরোধী দল। এসবই হবে গণতন্ত্রের শর্তে। ইতিমধ্যেই গতকাল অরুণাচল ও সিকিম বিধানসভার নির্বাচনে ব্যাপক জয় পেয়েছে বিজেপি ও সঙ্গী দল। ফলে লোকসভা নির্বাচনের ফল বেরোনোর আগেই বাড়তি মনোবল যুগিয়েছে গৈরিক সমর্থকদের। এখন দেখার আগামীকাল অরুণাচল ও সিকিম লোকসভা আসনে গৈরিক আধিপত্য বজায় থাকে কি না। দেশের প্রধান বৈদ্যুতিন মাধ্যম ও দৈনিক সংবাদপত্রগুলি পেশাদার সমীক্ষা সংস্থা দিয়ে যে সব নির্বাচন পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সমীক্ষা করিয়েছে তাতে কম বেশি সব সংস্থাই বিজেপির গতবারের ৩০৩ আসনের চেয়ে বেশি প্রায় সাড়ে তিনশ আসন বিজেপি পেতে চলেছে বলে জানিয়েছে। অস্বীকার করার উপায় নেই যে মূল স্রোতের এই সংবাদ মাধ্যমগুলি বিজেপির কোটি কোটি টাকা বিজ্ঞাপণ বাবদ পেয়েছে। অন্যদিকে লক্ষ লক্ষ গ্রাহকের পছন্দের ইউটিউব ও ডিজিটাল মাধ্যমের সাংবাদিকেরা বিজেপির সংখ্যা গরিষ্ঠতা না পাওয়ার কথা জানিয়েছে।
বাস্তবে কি হতে চলেছে? এই প্রসঙ্গে বিজেপির বক্তব্য, সত্যিই ফলাফল প্রতিফলিত হয়েছে সমীক্ষায়। অপর দিকে কংগ্রেস সহ বিরোধীদলগুলি জানিয়েছে, বিরোধী শক্তিকে মানসিক দূর্বল করার প্রচেষ্টা। ভোট বাক্স খুললেই বোঝা যাবে বিজেপির করুণ অবস্থা। কলকাতায় মমতা ও অভিষেক বন্দোপাধ্যায় যেমন দলের কর্মীদের গণনা কেন্দ্রে শেষ পর্যন্ত থাকতে অনুরোধ করেছেন একই কথা বলেছেন বিহারে তেজস্বী যাদব ও উত্তরপ্রদেশে অখিলেশ যাদব। বয়সে নবীন হলেও দিগদর্শন ইউটিউব ও নিউজ পোর্টাল দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে একটি অনুমান করেছে। দিগদর্শনের অনুমান এরাজ্যে বিজেপি পেতে চলেছে ৯ থেকে ১৪ টি আসন। অপরদিকে তৃণমূল বাকি আসন দখল করবে। দু তিনটি আসন পেতে পারে বাম কংগ্রেস। তবে বাম কংগ্রেসের ভোট শতাংশ বাড়বে। তাতে উত্তরবঙ্গে বিপদে পড়বে তৃণমূল ও দক্ষিণবঙ্গে বিজেপি।
কেন্দ্রীয় স্তরে উত্তরপ্রদেশ ও বিহারে বিজেপি এবার চাপে। মহারাষ্ট্রে শরিকদলের কারণে বিজেপি পড়বে বিপদে। দক্ষিণ ভারতে একমাত্র কর্ণাটক ছাড়া আর কোথাও অস্তিত্ব থাকবে না। কিন্তু ভোট শতাংশ কিছু বাড়বে। ইতিমধ্যে তাড়াহুড়ো করে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন সাংবাদিক সন্মেলনে জানিয়েছে দেশে কোথাও অশান্তি হয়নি। কিন্তু এই গরমে দীর্ঘ সময় ধরে নির্বাচন করায় ৩৩ জন ভোটকর্মী তাপপ্রবাহের শিকার হয়ে মারা গেছেন। অনেক বুথে ভোটাররাও অসুস্থ হয়ে পড়েন। নির্বাচনী ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর আর এক দফা নাটক শুরু হবে। আগামীদিনে গণতন্ত্র কতটা সুরক্ষিত হবে সেটা নোঝা যাবে আগামীদিনে। কেন্দ্রীয় স্তরে দিগ দর্শনের হিসেব শাসকদল বিজেপি সর্বোচ্চ পেতে পারে ২২০ থেকে ২৩৭ আসন। শুধু কিছু তথ্যের ভিত্তিতেই অনুমান। সেই অনুমান কতটা সঠিক হবে কিম্বা হবে না সেই বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে আগামীকাল রাতে।