পর্ব: ৫
আমেরিকায় স্বামীজী
সুজিৎ চট্টোপাধ্যায় : বিবেকানন্দ ৩০ জুলাই শিকাগো পৌঁছেছিলেন। অনুষ্ঠান শুরু ১১ সেপ্টেম্বর। অর্থাৎ একমাস দশদিনের মধ্যে আমন্ত্রণ পত্র না পেলে ভাষণ দেওয়া তো পরের কথা, অনুষ্ঠান স্থলে ঢুক্তৈর পারবেন না। এই চিন্তা যেমন ছিল বিবেকানন্দের আরেক চিন্তা ছিল হাতে টাকা কম। এই টাকায় দুমাস শিকাগোর মত দামী শহরে থাকা অসম্ভব। একটা সূত্রে বিবেকানন্দ জানতে পারলেন বোস্টন শহরে থাকেন এক মার্কিন নাগরিক মি: রাইট। তাঁর সঙ্গে সম্মেলনের চেয়ারম্যানের সম্পর্ক ভাল। তিনি যদি এক কলম লিখে বিবেকানন্দ সম্পর্কে অনুরোধ করেন হেয়ারম্যান ফেরাতে পারবেন না। দ্বিতীয়ত বোস্টন শহরে থাকা খাওয়া খরচ তুলনামূলকভাবে কম। তাই বিবেকানন্দ সোজা বোস্টনে চলে গেলেন।
আমেরিকান বোস্টন শহর ১৮৯৩।
ট্রেনে পরিচয় আমেরিকান মাঝবয়সী এক মহিলা মিস ক্যাথেরিন স্যানবর্নের সঙ্গে। ভদ্রমহিলা ছিলেন বোস্টনের নাগরিক । তাঁর খামার বাড়িতে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা হলো। সেই মহিলার সূত্রে বোস্টনের শিক্ষিত সমাজে পরিচিত হয়ে বিভিন্ন ক্লাব গীর্জায় দার্শনিক ভাষণ দিতে শুরু করেন বিবেকানন্দ। স্থানীয় সংবাদপত্রে ছাপা হতে থাকল ইন্ডিয়া থেকে আসা এক সাধুর পরিচয়। এখানেই পরিচয় হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জন হেনরি রাইটের সঙ্গে।
বিবেকানন্দের পোশাক পরিকল্পনা ছিল রাজা অজিত সিংয়ের।
অস্বীকার করার উপায় নেই বিবেকানন্দের ব্যাক্তিত্ব ছিল আকর্ষণীয়। দ্বিতীয়ত ইংরেজিতে কথা বলার সাবলীলতা। তাছাড়া অজিত সিংয়ের প্রাসাদ থেকে যখন বিবেকানন্দ সোজ বোম্বাই এলেন জাহাজ ধরতে তখন তাঁকে রাজস্থানী গেরুয়া পাগড়ি পরিয়ে দেন রাজা অজিত সিং। দেন সিল্কের গেরুয়া পোশাকে । কিন্তু শীতের পোশাক ছিল না। বিবেকানন্দের দার্শনিক কথাবার্তায় মোহিত হন রাইট সাহেব। তিনি এতটাই প্রথম আলাপেই মোহিত হন যে তাঁর ৪ নং অরলিংটন স্ট্রিটের বাড়িতে থাকতে দেন। সেখানেই বিবেকানন্দ রইলেন বেশ কয়েকদিন। তারপর বোস্টন থেকে শিকাগো যাওয় ট্রেনের টিকিট কিনে দেন রাইট সাহেব। রাইট সাহেবের চিঠি সূত্রে সম্মেলনে বক্তব্য রাখার অধিকার পেলেন বিবেকানন্দ।
আমেরিকার সম্মেলনে বিবেকানন্দ।
সম্মেলনের প্রথম দিন ১১ সেপ্টেম্বর অভ্যর্থনামূলক ভাষণ ও ২৭ সেপ্টেম্বর সমাপ্তির দিবসের ভাষণ ছাড়াও সাধারণ সম্মেলনে বিবেকানন্দ লঞ্চটির ভাষণ দেন ১৫,১৯,২০ ও ২৬ সেপ্টেম্বর। ক্রমিক অনুসারে ভাষণগুলির বিষয় ছিল ভ্রাতৃভাব , হিন্দুধর্ম, ভারতে খ্রিস্টান মিশনারী এবং হিন্দুধর্ম ও বৌদ্ধধর্মের সম্পর্ক। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ ছিল ১৯ সেপ্টেম্বর। বিষয় হিন্দুধর্ম। এদিন তিনি লিখিত বক্তব্য পেশ করেন। এছাড়াও স্বামীজী বিজ্ঞান বিভাগে চারটি বক্তব্য রাখেন।২২ সেপ্টেম্বর। বিষয় গোঁড়া হিন্দুধর্ম ও বেদান্ত,২৩ সেপ্টেম্বর ভারতের বর্তমান ধর্মগুলি ২৫ সেপ্টেম্বর সকালে বলেন আগের বক্তব্যের সার সংক্ষেপ ও বিকেলে বলেন হিন্দুধর্মের স্যার
আমেরিকান নাগরিকদের সঙ্গে বিবেকানন্দ।
নিরঞ্জন ধর তাঁর বিবেকানন্দ অন্য চোখে গ্রন্থে রাইট প্রসঙ্গে লেখেন ,,,,,,, বিবেকানন্দের আমেরিকা যাত্রার উদ্দেশ্য কেবল বেদান্ত প্রিচার্ট ছিল না। ধনকুবের ও দানবীরদের দেশ থেকে অর্থ সংগ্রহও তাঁর অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল। বস্তুত স্বামীজী ব্যাপারটাকে খানিকট লেনদেনের আকারের দেখেছিলেন। তাঁর মতে আমেরিকাবাসীদের আধ্যাত্মিকক্ষুধা মেটাবার ব্যবস্থা তিনি করবেন, বিনিময়ে তাঁদের কাছ থেকে তিনি অর্থ -সাহায্য নেবেন। নিজের ও পারিবারিক প্রয়োজনে তিনি যে সেখানে প্রচুর অর্থ সংগ্রহ করেছিলেন তা আমরা ইতিপূর্বে গৃহী বিবেকানন্দ প্রবন্ধে দেখিয়েছি। ভারতীয় কাজের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের সিংহভাগও তিনি আমেরিকা থেকে জোগাড় করেছিলেন। একমাত্র বেলুড় মঠ নির্মাণ করতেই সে -যুগে যে। বিপুল অর্থ ব্যয় হয়েছিল তা থেকেই এ- সম্পর্কে একটা মোটামুটি ধারণা করা যাবে।( পৃষ্ঠা ৪৫)
বিষয়টির বিশ্লেষণকরতে আগামী পর্বে গৃহী বিবেকানন্দ প্রসঙ্গে আলোচনা করব যারফলে আমেরিকান নাগরিকেরা বিবেকানন্দের সিস্টার্স অ্যান্ড ব্রাদার্স সম্বোধনে মোহিত হলেন কেন তার রহস্য বোঝা সহজ হবে।( চলবে)
আগামী পর্ব বুধবার ,১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪