পর্ব ১০৬

সুলতান ফিরোজ শাহ বাহমিনি।
সুজিৎ চট্টোপাধ্যায় : সুলতান ফিরোজ শাহের হারেমের জেনানারা সব এদেশের নয়। আরব, সারকাসিয়ান, জর্জিয়ান, তুর্কি, রুশ, ইউরোপীয়, চিনা, আফগান, রাজপুতানি, বাঙালি, অন্ধ্র , মারাঠি ও অন্যান্য জাতির নারী। এইসব সেরা জেনানাদের সংগ্রহের ভার ছিল বণিকদের। দেশবিদেশ ঘুরে সেরা পণ্য সংগ্রহ করতেন বণিকরা। সুলতানদের হারেমে মৃত্যু কারণে বা উপহার হিসেবে অন্য কোন রাজ প্রতিনিধিদের সেই সব জেনানাদের দিয়ে দিলে হারেম পূর্ণ করতে হত। পর্যটক মানুচচি (১৬৫৩_১৭০৮) তাঁর ভারতভ্রমণ কালে লিখে গেছেন, আওরঙ্গজেবের জ্যেষ্ঠ পুত্র শাহ আলমের বার্ষিক আয় ছিল দু কোটি টাকা। তাঁর মহলে ছিল b দু হাজার রমণী। পিতার চেয়ে কম ছিল না তার হারেমের জৌলুস।

ইতালির পরিব্রাজক মানুচি লিপিবদ্ধ করেছেন মোঘল হারেমের গোপন তথ্য।
এবার বলব সেই সব হারেমের জেনানাদের শ্রেণীবিভাগ সম্পর্কে। সাযযাদ কাদির তাঁর হারেমের কাহিনী জীবন ও যৌনতা গ্রন্থে ২০ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, অন্ত্য বৈদিক যুগের আগে থেকেই সুস্পষ্ট শ্রেণীবিভাগ ছিল হারেমে। তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণ উপনিষদে উল্লেখ আছে রাজসভার মহিমা বর্ধনকারী দ্বাদশ রত্নের মধ্যে রয়েছেন মহিষী ( প্রধান রাণী), ববতা ( প্রিয় রাণী) ও পরিবৃত্তি ( পরিত্যক্ত স্ত্রী)।

কাশীর হিন্দু রাজা তন্ব’র ছিল ১৬ হাজার রক্ষিতা ।
এই বিভাজন থেকে স্পষ্ট হয় রাজকীয় বহু বিবাহ ব্যবস্থায় ছিলেন তিন রাণী। যাদের প্রধান ছিলেন রাজমহিষী। বুদ্ধদেবের সময়েও এই ব্যবস্থা ছিল। বেনারসের অর্থাৎ কাশীর রাজা তম্ব-র হারেমে ছিল ১৬ হাজার রমণী। তবে প্রধান রাণী ছিলেন সুষোন্দী । বুদ্ধদেবের সমসাময়িক উদয়ন পালিয়ে গিয়েছিলেন রাজা প্রদ্যোতের কন্যা বাসবদত্তার সঙ্গে। কৌসম্বিতে প্রত্যাবর্তনের পর তিনি প্রধানরাণী করেছিলেন তাঁকে। উদয়নের পত্নী ছিলেন আরও কয়েকজন। তাঁদের মধ্যে মগন্দিয়া, সমাবতী ( কোষাধ্যক্ষের পালিতা কন্যা ) গোশকা, গোপালমাতা( কৃষক কন্যা) । ভারতে এসে মুসলিম নবাবরা হিন্দুদের এই প্রথা অনুসরণ করেন।( চলবে)
আগামী পর্ব ২৫ এপ্রিল, শুক্রবার,২০২৫
