বেশ্যার বারোমাস্যা

পর্ব: ৮৭

চারণকবি মোরারি বাপু মুম্বাইয়ের গণিকাদের রাম জন্মভূমিতে আমন্ত্রণ করে সমালোচনার মুখে পড়েন।

সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়: এবার সুদূর গ্রিস ছেড়ে চলুন ভারতে ফিরে আসি। রাম মন্দির প্রস্তুতিকালে সেখানে মুম্বাইয়ের যৌনকর্মীদের আমন্ত্রণ জানান চারণকবি মোরারি বাপু। তাঁর মুখ থেকে তুলসীদাসের মানসগণিকা শুনতে অযোধ্যায় আসেন মুম্বাইয়ের প্রায় ২০০ গণিকা। জনৈক যৌন কর্মীর বক্তব্য ছিল, এই আমন্ত্রণে আমরা গর্বিত। এই প্রথম কোনও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারছি আত্মসম্মান বজায় রেখে। আমরাও ঈশ্বরের শরণাপন্ন হতে চাই জন্মান্তরে যেন এই অভিশপ্ত জীবনে ফিরে আসতে না হয়।

অযোধ্যায় গণিকারা।

মোরারি বাপুর এই কাজে বেজায় খাপ্পা দান্তীয়া মন্দিরের মোহন্ত ভরত ব্যাস। তিনি বলেছেন, রাম জন্মভূমিতে যৌনকর্মীদের উপস্থিতি সমাজের জন্য অমঙ্গল। এই পবিত্র শহরে রামভক্তরা আসেন পাপমুক্ত হতে। প্রায়শ্চিত্ত করতে। সেখানে বেশ্যাদের জড় করা পাপ। বিরোধীরা এখানেই থেমে থাকেনি। মোরারি বাপুর বিরুদ্ধে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগীজীর কাছে জোরালো অভিযোগ জানিয়েছেন জ্যোতিষ শোধ সান্থন সংগঠনের প্রধান প্রবীণ শর্মা । তিনি বলছিলেন, যৌনকর্মীদের প্রতি যদি বাপুর এত মমত্ব তাহলে তাঁদের অর্থ দিন মোরারি বাপু অবশ্য এইসব মন্তব্য গায়ে মাখেননি। যৌনকর্মীদের সমাজে সম্মানীয় স্বীকৃতি দিতেই তিনি তাঁদের ডেকেছিলেন। তাঁরা এসেছেন। বাপুর উদ্দেশ্য সফল, তাতেই তিনি খুশি।

বনবাস থেকে অযোধ্যায় প্রত্যাবর্তনে রামচন্দ্রকে প্রথম সম্ম্বর্ধনা জানান রাজ্যের গণিকারাই। এমনটাই লিখেছেন বাল্মীকি ।

প্রশ্ন ওঠে, সত্যিই কি রামকথা শুনিয়ে সমাজের এই হতভাগ্যদের জীবন উন্নত করা যায়? আবার অন্যদিকে বলা যায়, ঈশ্বরের সন্তান যদি সবাই হন, তবে ঈশ্বরের কাছে আসার অধিকার তো সবার আছে। দেশের সব তীর্থস্থানেই গণিকালয় আছে। গৈরিক পণ্ডিতেরা কি রামায়ণ পড়েননি? রামচন্দ্র দীপাবলির দিন যখন রাজ্যে ফেরেন, অযোধ্যার দ্বারে আলোর বর্তিকা নিয়ে তো প্রথমে নগরগণিকারাই অভ্যর্থনা জানায়। রামচন্দ্র যখন হরধনু ভঙ্গ করে সীতাকেবিয়ে করে রাজ্যে ফেরেন যৌতুক হিসেবে শ্বশুর জনক রাজা বহু গণিকা উপহার দেন জামাইকে। এই তথ্য কি বাল্মীকি রামায়ণে নেই? ( চলবে)

পরবর্তী পর্ব আগামী শুক্রবার,১৪ ফেব্রুয়ারি,২০২৫

******

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *