বেশ্যার বারোমাস্যা

পর্ব ৭৪

মনুসংহিতায় ছত্রে ছত্রে নারী অবমাননা বর্ণিত হয়েছে।

সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়: প্রাচীন যুগে শুধু যে দেহপোজীবী সমাজে শোষিত হয়েছে এমন নয়। পুরো নারী জাতি হয়েছে ধর্মীয় বিধিতে ব্রাত্য। এই সম্পর্কে উল্লেখ করব কঙ্কর সিংহের ধর্ম ও নারী প্রাচীন ভারত গ্রন্থের নারীর সম্পত্তিতে অধিকার শীর্ষক প্রবন্ধ। লেখক লিখেছেন, প্রাচীন ভারতে পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় সমাজে পুরুষই ছিল পরিবারের সর্বময় কর্তা।, সবরকম স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তির মালিক। ধর্মশাস্ত্রের বিধানে পুরুষই পরপর পিতৃসম্পত্তির উত্তরাধিকারী হত। এই পরম্পরা থেকে বিচ্যুত হলেই সেটা হত অধর্ম। ধর্মশাস্ত্রের বিধানে নারী ছিল সম্পূর্ণরূপে পুরুষের অস্থাবর সম্পত্তি। তার কোনো স্বাতন্ত্র্য স্বীকৃত হয়নি বৈদিক ধর্মে। স্মৃতিশাস্ত্রকার মনু বলেছেন, পিতা রক্ষতি কৌমারে, ভর্তা রক্ষতি কৌমারে, ভর্তা রক্ষতি যৌবনে। রক্ষন্তি স্থবিরে পুত্রা ন স্ত্রী স্বাতন্ত্র্যমর্হিত।। ( মনুসংহিতা ৯/৩) অর্থাৎ স্ত্রীলোককে কুমারী অবস্থায় পিতা, যৌবনে স্বামী এবং বার্ধক্যে পুত্র রক্ষা করবে, স্ত্রীলোক কখনও স্বাতন্ত্র্য লাভের যোগ্য নয় ।

ঋষি কক্ষিবান

লেখক লিখেছেন, নারী ছিল প্রাচীন ভারতে, বিনিময়যোগ্য দ্রব্যসামগ্রী তুল্য। তাকে অনায়াসে দান _বিক্রয় এবং উপহার দেওয়া যেত। তাতে নারীর মতামত নেওয়ার কোনো প্রশ্নই উঠত না। প্রাচীন ভারতের আকর গ্রন্থ ঋগবেদে নারীকে পশুর মত হস্তান্তরিত করা হচ্ছে তা স্পষ্টভাবেই দেখা যায়। উপ মা শ্যাবা: স্বনয়েন দত্ত্বা বধূমন্তো দশ রথাসো অস্তু। ষষ্ঠি: সহস্র মনু গব্য মাগাৎ সনৎকক্ষীবা অভিপিত্ত্বে অহ্নাম।।( ঋগবেদ ১/২৬/৩) অর্থাৎ স্বনয় কর্তৃক প্রদত্ত ও শ্যামবর্ণ অশ্ব যুক্ত বধূসমন্বিত দশখানি রথ আমার নিকট উপস্থিত হল। এই সহস্র ষষ্ঠিসংখ্যক গাভী উপস্থিত করা হল। কক্ষীবান গ্রহণ করে পরিদিনেই তা আপনার পিতাকে দান করলেন। এই রচয়িতা ঋষি কক্ষিবান। ঋগবেদের প্রথমদিকের সূক্ত এটি। অন্য আর একটি ঋকে দেখা যায়, দ্বষা অগ্নে রথি নো বিংশতিং গণ বধূমন্তো মঘবা মহ্যং সংরাট। অভাবর্তী চায়মানো দদাতি দুণাশেয়ং দক্ষিণা পার্থ বানাম।।( ঋগবেদ ৬/৫/৮২) অর্থাৎ হে অগ্নি! চয়মানের পুত্র, ঐশ্বর্যশালী সম্রাট অভ্যবর্তী আমাকে রথ ও রমণী সহকারে বিংশতি গোমিথুন প্রদান করেছেন। পৃথুর বংশধরের এ দান অক্ষয় অর্থাৎ কেউ এর বিলোপ করতে সমর্থ নয়।( চলবে)

পরবর্তী পর্ব আগামী সোমবার ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪

******

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *