*
সুজিৎ চট্টোপাধ্যায় : কর্পোরেট দুনিয়ায় সংস্কৃতি এখন বিপন্ন। লীনা চাকী নকশি কাঁথা লিটিল ম্যাগাজিনের সাধু সমাজ ভাবনা বিষয় নির্ভর সংখ্যায় বাউল আশ্রম এখন ভাঙনের পথে শীর্ষক নিবন্ধে লিখেছেন, বাউল সাধনার উদ্ভব ওপতনের ইশারা দিয়ে গেছেন বাউল গবেষক উপেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য।,,,,, আশ্রমের এই ভোগদখলার্ট লড়াইটা আগেও ছিল, কিন্তু সীমাবদ্ধ ছিল শিষ্যদের মধ্যেই। অবৈষ্ণব এবং গুরুর শিষ্য নয়, এমন কেউ সেই ব্যূহে ঢুকতে পারত না। গুরুর উত্তরাধিকারী হওয়ার যোগ্যতা দেখিয়েই আশ্রমের রক্ষক হত। এখন রাজনীতি গ্রামের মানুষদের মনোবল বাড়িয়ে দিয়েছে, পালটে দিচ্ছে অধিকারবোধের। সংজ্ঞা। আশ্রমের সীমানা ভেঙে যাচ্ছে।
লীনা চাকী তাঁর নিবন্ধ শেষ করেছেন,,,,,, বাউলের গান সাধনার কথা বলে, গুরু তাঁর শিষ্যকে মৌখিক শিক্ষা দেন গানের মাধ্যমে। এটাই নিয়ম ছিল। পরে গান যখবাউল আশ্রমের গন্ডির বাইরে চলে এক, তখন থেকেই বাউল গায়কের আবির্ভাব। এখন বাউলগান অর্থ রোজগারের বড় মাধ্যম, গানেই বাউলের পরিচয়। ফলে শিষ্য একতারা নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে আশ্রম ছেড়ে। সাধনায় তাদের আস্থা নেই। যেমন আস্থা নেই গুরুর আশ্রমটিকে টিকিয়ে রাখার। এটাই বাউলের ট্র্যাডেজি।,,,,
এই সাংস্কৃতিক সংকটে প্রবাসী বাঙালি হিসেবে লালন গীতির পাঁচটি গান গুরু প্রণাম হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। এছাড়াও কোভিডের স্মৃতিকে স্মরণ করে নিজের লেখা ও সুরে পাঁচটি গান প্রকাশ্যে এনেছেন শিল্পী কুশল চট্টোপাধ্যায়। শীর্ষক প্রজেক্ট লকডাউন। নিজেকে শিল্পী হিসেবে প্রচারে অনীহা শিল্পীর। শনিবার গোধূলিবেলায় কলকাতা প্রেসক্লাবে আয়োজিত ১০ টি গানের প্রকাশ অনুষ্ঠানে কুশল চট্টোপাধ্যায় জানান, করোনা প্রবাহে দেশের বাইরে সুদূর ক্যালিফোর্নিয়ায় বসে মানসিক স্থিতি বজায় রাখতে সঙ্গীতের আশ্রয় নিই। তখন মনে হয়েছিল ২৫০ বছর আগের বাংলার ভূমিপুত্র লালন শাহের গান আমার মত অনেকের মনের ভিটামিন জোগাবে।অনুষ্ঠানে এলবাম প্রকাশ করলেন অভিনেত্রী দেবস্রী রায়, রাজ্য সরকারের আধিকারিক অনুপম হালদার, চিকিৎসক সুমন কল্যাণ সেন প্রমুখ।
লালন ফকিরের গান আধুনিক বাঙালিদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথের প্রচেষ্টা ছিল প্রশংসনীয়। রবীন্দ্রনাথের বাউল আঙ্গিকের গানের প্রভাব লালনের গানে প্রভাবিত হয়েই। লালনের গানের দেহতত্ত্ব, সহতত্ত্ব,প্রেমতত্ত্ব, মানব প্রেম, জাতিভেদহীন তত্ত্ব কবিকে আকৃষ্ট করেছিল। মুশকিল হচ্ছে, বাঙালির ইতিহাস সম্পর্কে উদাসীনতা আমাদের সত্ত্বাকে সংকটে ফেলছে। ফলে লালনের জীবন কাহিনী নিয়ে মনের মানুষ ছবিটি সম্পর্কে প্রয়াত লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বলেছিলেন, লালনের জীবনী ভিত্তিক প্রকৃতঐতিহাসিক তথ্য ভিত্তিক এই ছবি নয়।
তাই প্রশ্ন ওঠে লালনের সব গানের স্বরলিপি কি লেখা হয়েছিল? কিছু কিছু স্বরলিপি অবশ্য রবীন্দ্রনাথের উদ্যোগে তৈরি হয়, কিন্তু বাকি গান? সেখানে কিছু মিশেল হয়নি তো? কারণ লালন যে নিজের প্রচার সম্পর্কে উদাসীন ছিলেন সে কথা তাঁর জীবন তথ্য মেলে। সুতরাং আজ আর বিষয়টি প্রাসঙ্গিক না হলেও প্রশ্ন তো থেকেই যায়। তবে নিঃসন্দেহে আজ সাংস্কৃতিক সংকটের যুগে প্রবাসী কুশল চট্টোপাধ্যায়ের প্রয়াসের প্রশংসা না করাটা কৃপণতা হয়ে যাবে। এই মুহূর্তে পকেটের পয়সা খরচ করে ব্যবসায়িক লাভ লোকসান না ভেবে এমন কিছু কুশল যদি প্রচেষ্টা চালান সেটাও বাংলা সংস্কৃতির জন্য কুশলই হবে।