*
দেবাশিস দত্ত
শ্রীজিৎ চট্টরাজ; কলকাতার লালবাজারের পাশে যেখানে মার্টিন বার্ন বিল্ডিং, সেখানেই প্রথম নাট্যমঞ্চ দ্য প্লে হাউস গড়ে ওঠে। কলকাতার প্রথম প্রসেনিয়াম থিয়েটার। বহু বিদেশির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভূমিকায় কলকাতায় বিস্তৃতি লাভ করে নাটক থিয়েটার। এঁদের অন্যতম রুশ নাগরিক লেবেদফ।১৭৯৫ সালে ২৭ নভেম্বর কাল্পনিক সংবদল নামে বাংলা নাটকের মঞ্চায়ন শুরু। এরপর বাংলা বাণিজ্যিক থিয়েটার প্রতিষ্ঠিত হয় বাঙালি নাটক অনুরাগীদের হাত ধরে। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে বঙ্গ বিভাগের জেরে একটি প্রতিবাদী রাজনৈতিক বাতাবরণ গড়ে ওঠে যার ফলে বাম চিন্তাধারার যুব সমাজ নাটককে প্রতিবাদের অস্ত্র হিসেবে গ্রহণ করে।২০ শতাব্দীর শুরু থেকে সেই ধারা গ্রূপ থিয়েটার নামে পরিচিত হতে থাকে শতাব্দীর শেষার্ধে শহর কলকাতা ছেড়ে নাট্য আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে বাংলার জেলায় জেলায়। বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্বদের দল গড়ে ওঠে। বলিষ্ঠ নাট্য প্রযোজনায় একটি নতুন দর্শকশ্রেণী তৈরি করে।
কিন্তু নাটককে পেশা হিসেবে গ্রহণ করার পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। আজও খুব একটা সেই ছবির পরিবর্তন হয়নি। কলকাতার উপকণ্ঠ দমদমে নাটকে মনপ্রাণ সঁপে ছিলেন দেবাশিস দত্ত। গড়ে তোলেন অ্যাস্থেটিকস আদতে যা একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ও ডিজাইন সংস্থা।নিজের বাড়ির দুটি তল ও ছাদে গড়ে তুলেছেন নাটকের দুনিয়া। সেখানেই দর্শক গ্যালারি সম্বলিত মঞ্চ। যেখানে ছোট ছোট সংস্থা তাঁদের বড় বড় ভাবনাকে নাট্যরূপ দিয়ে মঞ্চায়ন করেন। নাট্যকর্মীরা নাটক নির্মাণ করে যদি অর্থাভাবে মঞ্চস্থ করতে না পারেন সেটা অনেকটাই প্রসব যন্ত্রণার মত।নিজের যেহেতু অভিজ্ঞতার মধ্যে রূঢ় বাস্তবকে দেখেছেন তাই নাট্য ব্যাক্তিত্ব দেবাশিস দত্ত গড়ে তোলেন থিয়েএপেক্স অডিটোরিয়াম। এখানে নীড় ছোট ক্ষতি নেই আকাশ তো বড় তত্ত্বে বিশ্বাসী নাট্যকর্মীরা রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে নাট্য প্রযোজনা করেন। এখানেই হয় নিয়মিত বিভিন্ন নাট্য প্রতিযোগিতাও উৎসব।
দেবাশিস অনুরাগী বেশ কিছু নাট্যকর্মী আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর,২০২৪ থেকে ২৯ নভেম্বর সপ্তাহব্যাপী ডিলিনিয়েটর দেবাশিস শিরোনামে নাট্য উৎসবের আয়োজন করেছেন দেবাশিস দত্ত নির্দেশিত অভিনীত সাতটি দল তাঁদের নাটক মঞ্চায়ন করবেন থিয়েএপেক্স অডিটোরিয়ামে। নব্বইয়ের দশক থেকে থিয়েটার চর্চা ও ১৯৯৮ এ নিজের নাট্যদল ইনস্টিটিউট অফ ফ্যাকচুয়াল থিয়েটার আর্টস ( ইফটা) গড়ে তোলেন। রাজ্যের ও রাজ্যের বাইরে প্রাযদশটি গ্রুপের নির্দেশনা, মঞ্চ নির্মাণ ও পরিকল্পনার কাজ করছেন। নিজের বেশকয়েকটি প্রযোজনা পরিবেশন করেছেন দেশবিদেশে। বহু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নাট্য প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন।২০২০ সালে ৫ অক্টোবর বাড়ির ছাদে একটি অডিটোরিয়াম একটি ব্ল্যাকবক্স, আর্টিস্টদের মেকাপ রুম ও গেস্ট রুম গড়ে তুলেছেন।
নাট্য উৎসবের প্রেক্ষিতে শুক্রবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে দেবাশিস দত্ত ছাড়াও ছিলেন উৎসবের মাল্যবান নাটকের নির্দেশক সুদীপ্ত ভূঁইয়া, কালিম্পং ইন নাটকের পরিচালক কলিকা মজুমদার ও ইফ্টার নির্দেশক প্রসেনজিৎ ভট্টাচার্য। ঘোষণা হয় উৎসবের উদ্বোধক বিভাষ চক্রবর্তী। সাতদিনের নাট্য উৎসবে নাটক মঞ্চস্থ হওয়ার পর থাকবে নাট্যবিষয় নিয়ে আলোচনা। আলোচনা করবেন নাট্যব্যাক্তিত্ব মণীশ মিত্র, অরূপ রায়, সলিল সরকার, রঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায় ভর্গনাথ ভট্টাচার্য প্রমুখ।