২১ জুলাই সভার সুর কাটল শুরুতেই, অরূপ বিশ্বাসের ভুল ঘোষণা

শ্রীজিৎ চট্টরাজ : মেঘ বৃষ্টির আবহাওয়ায় রংবেরংয়ের ছাতা নিয়ে কর্মী সমর্থকরা ধর্মতলা তেমাথা ভরিয়ে তুললেন। কিন্তু অভিষেক বন্দোপাধ্যায় তাঁর ভাষণে বললেন, যাঁরা ছাতা নিয়ে দলের রাজনৈতিক সভায় আসেন তাঁরা আজন্মদলের প্রতি আনুগত্য রাখবেন কিনা সন্দেহ আছে। ভাষণে দলের দাদাগিরি যাঁরা করছেন তাঁদের এবং যাঁরা আঞ্চলিক নেতা বা পুরসদস্য বা পঞ্চায়েত দিদস নিজেদের জয় নিয়ে ভেবেছেন সেসব তালিকা তৈরি করেছি ভোটের পর। আগামী তিনমাসে তাঁদের জন্য কি ব্যবস্থা করেছি দেখতে পাবেন। বিজেপি ৮০ হাজার বুথে মদ। বিলি করেছে বুথ পিছু ৫ হাজার টাকা। মোট ৪০ কোটি টাকা খরচ করেছে। এলাকায় লক্ষ করবেন যত মাতাল চোর চিটিংবাজ বিজেপি করে। তাহলে তৃণমূল নেতা কর্মী মদ খান না এমনটাই বোঝাতে চাইলেন? মদ কি দলে নিষিদ্ধ ? তেমন অবশ্য বললেন না। ব্যবহার করলেন বামেদের শ্লোগান। শহীদের রক্ত হবে নাকো ব্যর্থ। আমাদের সংগ্রাম চলছে। এবারের সভার বৈশিষ্ট্য গুরু পূর্ণিমা হলেও গতবারের মত প্রবীণ গুরু সুদীপ বন্দোপাধ্যায় ও সৌগত রায় বলার সুযোগ পেলেন না। বরং বাগদা থেকে জিতে আসা সর্ব নবীন বিধায়ক মতুয়া পরিবারের মধুপর্ণা ঠাকুরকে বলতে দেওয়া হল। অর্থাৎ আগামী নির্বাচনে গরিষ্ঠ মতুয়া ভোট সংগ্রহের একটা সুপরিকল্পনা বলা যায়। যদিও জীবনের শুরুতে লক্ষাধিক লোকের সামনে কথা বলতে গিয়ে গলা শুকিয়ে কাঠ হওয়ার যোগাড়।অবশ্য সামলে নিয়েছেন নিজেকে।

এদিকে অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের বক্তব্যে ছিল না সি পি এমের বিরূদ্ধে কোনো বক্তব্য। তবে কি জোটের স্বার্থ রাখতে সি পি এম কে উহ্য রাখলেন? নাকি ধর্তব্যের মধ্যে রাখলেন না? মঞ্চে ঘোষণায় ছিলেন অরূপ বিশ্বাস। কুচবিহারের সদ্য বিজয়ী বিধায়কের নাম বলতে গিয়ে বললেন অন্য জনের কথা। ভুল শুধরে দিতেই অরূপ বিশ্বাসের বিরক্তি শোনা গেল তাঁকে ভুল নির্দেশ দেওয়ার জন্যই ভুল ঘোষণা। যাইহোক দুপুর একটার কিছু পরে অখিলেশ যাদবকে সঙ্গে নিয়ে মঞ্চে এলেন মমতা বন্দোপাধ্যায়। , নেত্রীর গুণগান নিয়ে শ্লোগান দিতে দিতে গলা ছিঁড়ে যাওয়ার উপক্রম অরূপ বিশ্বাসের। এতদিন শুনেছি এশিয়ার মুক্তিসূর্য ইন্দিরা গান্ধী। এবার অরূপ বিশ্বাস জানালেন ভারতের মুক্তিসূর্য মমতা বন্দোপধ্যায়ের। মমতা মনে করিয়ে দিলেন ওরে আমার জয়ধ্বনি কমিয়ে অখিলেশ যাদবকে স্বাগতম জানা। অরূপ বিশ্বাস বাধ্য ভক্তের মত ঘাড় নেড়ে অখিলেশের নামে জয়ধ্বনি দিতে শুরু করেন।

অখিলেশ জানালেন,শহীদের স্মৃতি নিয়ে আজকের অনুষ্ঠান একটা আলাদা মাত্রা দেয়। তৃণমূল ভাগ্যবান তাঁরা এমন সমর্থক পেয়েছেন , যাঁরা দলের জন্য প্রাণ দিতে পারে।হয়ত অখিলেশ জানেন না ,১৯৯৩ সালের ২১ জুলাই যাঁরা জীবন দেন তাঁরা ছিলেন কংগ্রেসের কর্মী। অখিলেশ বিজেপির সমালোচনায় বলেন, এমন দল যারা অন্য দলের নেতাদের ধার নেয়, অন্য দলের শহীদদের ধার নেয়। তাহলে তৃণমূল কি কংগ্রেসের শহীদ ধার নিলেন না,?তখন তো তৃনমূলের জন্মই হয়নি। আজ অবশ্য এসব যুক্তির কোনো দাম নেই। বিজয় শেষ কথা। ইতিহাস লেখা হয় বিজয়ীকে নিয়ে।

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর মাইক হাতে নিলেন মমতা বন্দোপাধ্যায়।প্রথমেই অভিনন্দন জানালেন অখিলেশকে। বলেন, আপনারা উত্তরপ্রদেশে যে খেল দেখিয়েছেন জবাব নেই। দলের কর্মীদের উদ্দেশ্যে বললেন, আমি বৈভব নয়, বিবেক চাই। উত্তরবঙ্গে আমাদের হারার কারণ হয়ত দুর্ভাগ্য।২৬ এর নির্বাচনে আশাকরি মালদহের আমসত্ব পাবো। মহিলাদের সম্পর্কে বলেন লোকসভায় আমরা প্রস্তাবিত ৩৩: শতাংশ নয়,৩৮ শতাংশ মহিলা সদস্য আমরাই একমাত্র দল দিয়েছি।মমতা ব্যানার্জ ২১ জুলাই সম্পর্কে তাঁর কবিতা আবৃত্তি করে বিষয়টি মনে রাখতে বলেন। মমতা বললেন দেড় কোটি মানুষকে দারিদ্র্যসীমার ওপরে নিয়ে এসেছি। এটা অবশ্য ঠিক নাহলে বাংলার মানুষ দেড়শ টাকা কিলো বেগুন কিনে খেলেন কি করে? ৫০ টাকা কিলো পেঁপে ,৪০ টাকা কিলো আলু ,৫০ টাকা কিলো পেঁয়াজ কিনে খাচ্ছেন কীকরে?

মমতা আরও বললেন,১০ লক্ষ চাকরি আছে।কিন্তু বিরোধীরা কেস করায় চাকরি দিতে পারি না। অঝোর বৃষ্টির মধ্যে মমতা ঘন ঘন বিখ্যাত কবির কবিতা উল্লেখ করতে গিয়ে বলে বসলেন সারে জাঁহাসে আচ্ছা নজরুলের রচনা। কবি ইকবাল বেঁচে থাকলে দুঃখ পেতেন কি না সেটা তিনিই বলেন। এক নেতা চিরকুট অরূপ বিশ্বাস মারফত পাঠিয়ে ভুল সংশোধন , করতে গিয়ে খেলেন ধমক। বৃষ্টি থামতেই মমতা বললেন, আমি ভাষণ দিয়েই বৃষ্টি থামিয়ে দিলাম। পাঠকের মনে হতেই পারে তানসেনের কথা। যাঁর গানে বৃষ্টি এসেছিল। জাতীয় সঙ্গীত দিয়ে অনুষ্ঠানে শেষ করেন মমতা বন্দোপাধ্যায়। তাই বা বলি কি করে? জাতীয় সঙ্গীতের পরও মমতা ব্যানার্জি বক্তব্য রেখে গেলেন আরও দশ মিনিট। তবে এবারেশহীদ দিবসে ননঅনেকগুলি পাখি মারলেন দিদি। ২৬ এর বিধানসভা নির্বাচনের সুর বেঁধে দিলেন, দলের দুর্নীতিগ্রস্থ নেতা কর্মীদের সাবধান করলেন। অখিলেশকে নিয়ে এসে সর্বভারতীয় প্রচার কেড়ে নিলেন।

শেষে শুধু একটি ধিক্কার বাংলা টিভি চ্যানেলগুলিকে। একমাত্র জি ২৪ ঘণ্টা ছাড়াআদিবাসী নেতা দুলাল মুর্মুর আদিবাসী ভাষায় যে বক্তব্য রাখলেন সেটি অগ্রাহ্য করল। অর্থাৎ মূল মিডিয়া এখনও ব্রাহ্মণ্যবাদী প্রচার মাধ্যম প্রমাণিত হলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *