নহলী ন্যাশনাল থিয়েটার ফেস্টিভ্যাল

দিগদর্শন ওয়েব ডেস্ক: ২০০৫ সাল থেকে নিরন্তর নাট্যচর্চার সঙ্গে যুক্ত কলকাতার নহলী নাট্যদল। গত ১৩ এবং ১৪ সেপ্টেম্বর দু’দিন ব্যাপী থিয়ে এপেক্স নাট্যগৃহে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল তাদের জাতীয় নাট্যউৎসব, ‘নহলী ন্যাশনাল থিয়েটার ফেস্টিভ্যাল’। দু’দিনের এই নাট্য উৎসবে মঞ্চস্থ হয় বর্তমান সময়োপযোগী মোট ছ’টি নাটক। প্রথম দিন অর্থাৎ ১৩ সেপ্টেম্বর মঞ্চস্থ হয় কথক পারফর্মিং রেপার্টয়ার-এর ‘খুড়ি মা’, ‘বোলপুর টেগোর রিসার্চ একাডেমী’র ‘সন্ন্যাসী বিদ্রোহ’ এবং মধ্যপ্রদেশের নাট্যদল ‘ইন্দ্রাবতী নাট্য সমিতি’র নাটক ‘খগম’। ১৪ সেপ্টেম্বর, উৎসবের শেষ দিন মঞ্চস্থ হয় ‘নহলী’র ‘মধুবংশীর গলি’, ‘দমদম ঐচ্ছিক’-এর ‘বান’ এবং ‘ইফটা’ নাট্যদলের নাটক ‘কমরেড তবু মনে রেখো’।
মুন্সি প্রেমচন্দের গল্প অবলম্বনে নির্মিত খুড়িমা নাটকটি। কৈশোরে বিয়ে হয়ে অকালে স্বামী-সন্তান হারা বুড়ি কাকিমা তাঁর সমস্ত সম্পদ দিয়ে দিয়েছিল তাঁর ভাইপোকে। তাঁর একমাত্র আশা ছিল, জীবনের শেষ দিনগুলোতে একটু উষ্ণতা পাওয়ার। কিন্তু প্রতিশ্রুতি রাখেনি ভাইপো। এক বৃদ্ধা রমণীর জীবন যুদ্ধের গল্প, বিশ্বাস ভঙ্গের গল্প, অসহায়তার গল্প উঠে আসে এই নাটকে। নাটকটি নির্দেশনায় ছিলেন কৃতি মজুমদার।
সন্ন্যাসী বিদ্রোহ নাটকের পটভূমি ঐতিহাসিক। ব্রিটিশরা এ দেশে এসেছিল মুনাফা লুঠতে। খাজনা দেওয়ার চাপে বাংলার সাধারণ প্রজারা সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছিল। বাংলা জুড়ে তখন নেমে আসে দূর্ভিক্ষ, মন্বন্তর। এমন একটা দুঃসময়ে বাংলার অশান্ত আকাশে উদয় হয় ভবানী পাঠকের। তিনি ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে শুরু করেন সন্ন্যাসী বিদ্রোহ। সেই সব ঐতিহাসিক ঘটনা উঠে আসে এই নাটকে। নির্দেশনায় দেবযানী মুখার্জী।
মহাভারত মহাকাব্যের একজন ঋষির নাম খগম। তাঁর শাপে তাঁর বন্ধু সহস্রপাদ মুনি ঢোঁড়া সাপ হয়ে যান। মূলত এই বিষয়কে কেন্দ্র করেই সত্যজিৎ রায় লিখেছিলেন ‘খগম’। মধ্যপ্রদেশের নাট্যদল ‘ইন্দ্রাবতী নাট্য সমিতি’ সেই গল্পকেই নাট্যরূপ দিয়েছে। মহাভারতের গল্পকেই বর্তমানে নতুন করে ঘটিয়েছেন লেখক আর তাকেই সার্থক রূপদান করেছেন নির্দেশক শিব নারায়ন কুন্দের।
এক আদর্শবান শিক্ষক ও এক ছাত্রের গল্প উঠে আসে মধুবংশীর গলি নাটকে। ছাত্রটি তার প্রিয় মাস্টারমশাইয়ের ছাঁচেই নিজেকে গড়তে চেয়েছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে তার সামনে উন্মোচিত হয় মাস্টারমশাইয়ের অন্য রূপ। নির্দেশনায় অপু আইচ।
বাঙালি সমাজের বর্ণ বিদ্বেষের মূলে আঘাত হেনেছিলেন শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু। এ নাটকে রূপসী বাগদি তার উপর হওয়া অবিচারের প্রতিকার দাবি করে। ব্রাহ্মণ্যবাদের বিরুদ্ধে তার এই প্রতিবাদের আশ্রয় হয়ে ওঠেন মহাপ্রভু। কিন্তু যুগে যুগে নিপীড়িত মানুষ যেভাবে স্বপ্নভঙ্গের শিকার হয়েছেন, এখানেও তার ব্যতিক্রম ঘটে না। কিন্তু প্রতিবাদ জারি থাকে। মহাশ্বেতা দেবীর গল্প অবলম্বনে নির্মিত এই ‘বান’ নাটকটির নির্দেশনায় সুদীপ্ত ভূঁইয়া।
একসময়ের বাম রাজনীতি করা কবি পরিবর্তন এর পর রং পাল্টে ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন শাসক দলের। ১১ বছর আগে বাংলার আকাশের কালো মেঘ সরাতে পথে নেমেছিলেন সেই কবি দেবদত্ত। সেই সময় তিনি ছোট পত্রিকায় লেখালেখি করতেন। ক্ষমতা পরিবর্তনের পর দ্রুত ছবিটা পাল্টে গেলো, বড় প্রকাশনা, সরকারি পদ, পুরষ্কার। আজ এই বিখ্যাত কবির ইন্টারভিউ নিতে আসে এক জুনিয়র সাংবাদিক। তাদের কথোপকথনের সঙ্গে সঙ্গে পরতে পরতে খুলতে থাকে দেবদত্তের অতীত, তার জীবন, তার রাজনীতি, তার আপোষ, তার স্বার্থপরতা, তার অসহায়তা। আর সময়ের আয়নায় আমরা যেন নিজেদেরকেও দেখতে পাই। ‘কমরেড তবু মনে রেখো’র নির্দেশনায় দেবাশিস দত্ত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *