বিষাদ পুজোর গল্প শোনালেন জি কে রোড পূর্বাঞ্চল প্রভাতী সংঘ

দিগদর্শন ওয়েব ডেস্ক: ঢাক গুড় গুড় না করে বলে ফেলাই ভালো, বাংলায় ইতিহাস বলছে, ঢাক বাদ্যের সঙ্গে দুর্গাপুজোর কোনো সম্পর্কই ছিল না। এমনকি ভূমিপুত্র বাঙালির সঙ্গেও দুর্গাপুজোর কোনো সম্পর্কই ছিল না ৭০০ বছর আগে পর্যন্ত। বাঙালির আদি লৌকিক ধর্ম ধর্ম ঠাকুরের থানে বাদ্যি বাজাতেন অন্ত্যজ শ্রেণীর মানুষ। লৌকিক ধর্মের ব্রতে উৎসবেরও অঙ্গ ছিল ঢাক। রাঢ় বঙ্গের অন্ত্যজ মানুষ গাজন চড়কেও বাজাতেন ঢাক। পুরুলিয়ার প্রবাদ , গাজনের ঢাকে কাঠি পড়লে নাকি সজনে ডাঁটা ফাটতে শুরু করে। ঢাকের বোলে গাওয়া হত গান, শিব ব্যাটা বোয়ো, বউয়ের পাতে ভাত খেয়েছে, পেট করেছে লেও। পরবর্তীকালে ব্রাহ্মণ ও উচ্চবর্ণের বিভিন্ন পুজো ও সতীদাহের অনুষ্টানে ঢাকের ব্যবহার হতে থাকে। তন্ত্রসাধনায় নরবলির মুহূর্তেও ঢাকের বাদ্যি ছিল বিধিসম্মত।

প্রচলিত তথ্য,১৬০৬ খ্রিস্টাব্দে নদীয়ার কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের পূর্বপুরুষ ভবানন্দ মজুমদার প্রথম দুর্গাপুজোর প্রচলন করেন।কিন্তু এমন তথ্যও আছে, ১৫১০ সালে কুচবিহারের রাজা বিশ্বসিংহ প্রথম দুর্গাপুজো শুরু করেন। দুর্গাপুজো যেহেতু আর্য সংস্কৃতি, সেখানে দেবী দুর্গার বোধনে স্নান পর্বতে ভীমবাদ্য হিসেবে ঢাক ও বিজয়বাদ্য হিসেবে কাঁসর বাজানোর বিধি নির্দেশ আছে। ধীরে ধীরে লৌকিক দেবতার পুজো ঢাক ও কাঁসর হিন্দু পুজো দুর্গা আরাধনায় স্থান করে নেয়। যুগ যত আধুনিক হয়েছে , উৎসবে পার্বণে ঢাকের ব্যবহার কমেছে। এখন তো ঢাকি বিদায়ের খরচ বাঁচাতে রেকর্ড করা ঢাকের বোল বাজানো হয়। অনেক মন্দিরে ঢাক কাঁসর ঘণ্টার যন্ত্র বাজে তালে তালে। ফলে ঢাক এখন আর পেশা নয়। কিছুটা পারিবারিক ঐতিহ্যের শিল্প হিসেবে ভালোবাসা, কিছুটা উৎসবের পরিবেশে বাড়তি রোজগারের আশা। বাকি বছরের দিনগুলি জন মজুর খাটা, ভাগচাষ ভরসা। নুন আনতে পান্তা ফুরায়। সমীক্ষা বলছে,১০০ দিনের গ্রামীণ কাজে এখন কাজ মিলছে ৪২ দিনের। ফলে দারিদ্রতা এখন দুয়ারে দুঃখ।

রবিবার বিকেলে কলকাতা প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করে পূর্ব কলকাতার জি কে রোড পূর্বাঞ্চল প্রভাতী সংঘের কর্মকর্তারা জানান, এবার ৫৯ তম বর্ষে বাংলার ঢাকিদের জীবনের বারোমাস্যা এবারের থিম।বছর ভর তাঁদের দারিদ্র্যের জীবনের কিছুটা স্বস্তি পূজোয় পাওয়ার দক্ষিণা। আমরা উৎসবের মূহূর্তে তাঁদের জীবনশৈলীকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। প্রাচুর্য দিয়ে নয়, আন্তরিকতার দিয়েই আমরা এবারের বিশেষ পরিস্থিতিতে পুজোর আয়োজন করেছি। সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন প্রতিমাশিল্পী সুজয় চৌধুরী, ভাবনা ও শব্দব্রহ্ম রূপায়ণে বিপাশা কুন্ডু চৌধুরী, যুগ্ম সম্পাদক মৃণাল মুখার্জি, তন্ময় দাশগুপ্ত, কোষাধ্যক্ষ রাজীব কুন্ডু। প্রধান অতিথি ছিলেন উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্যা লেখিকা দেবারতি মুখোপাধ্যায় ও দীপ প্রকাশনের দীপ্তাংশু মণ্ডল।

অনুষ্টানে ছিলেন দুর্গাপুজো সমন্বয় কমিটির শ্বাশত বসু। শাশ্বত বসু বলেন, দুর্গাপুজো শুধু মাত্র পুজো নয় , দেশের জিডিপি’র সাত থেকে ৮ শতাংশ। ইউনেস্কো তাই স্বীকৃতি দিয়েছে। প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়। এরমধ্যে প্রান্তিক মানুষদেরও কিছু রোজগার হ্য়। অথচ প্রতিবার রাজ্য সরকারের অনুদান নিয়ে বিতর্কের পাশাপশি আইনি সমস্যা হয়।মহামান্য বিচারকের নির্দেশ মেনে পূজিত কমিটিসেই টাকা খরচ করে। এবারও মামলা হয়েছে। বিচারকের নির্দেশেই এবারেও আমরা চলব। অনুদানের টাকা আমরা জনহিতে খরচ করি
বিধিসম্মতভাবেই। সেই হিসেব প্রশাসনের কাছে জমা দিই। সংগঠনের পক্ষে আমন্ত্রণ জানিয়ে বলা হ্য়, আগামী ৩ অক্টোবর প্রথমা তিথিতে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সকলের উপস্থিতি তাঁরা কামনা করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *