*
সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়: রবিবারের বারবেলা। সল্টলেকের বি এফ ব্লকের সুইমিং পুলের কাছে খোলা জায়গায় জমায়েত বাংলা পক্ষের। বিনে পয়সায় মাছ ভাত খাওয়ানোর উৎসব। সম্প্রতি জম্মুর নির্বাচনী জনসভায় চৈত্রের নবরাত্রিতে বিহারের আর জে ডি নেতা তেজস্বী যাদবের মাছ খাওয়া ও গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে রাহুল গান্ধীর নিজের হাতে রান্না করা খাসির মাংসের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছাড়া নিয়ে সমালোচনা করে মোদিজী বলেন, যাঁরা হিন্দু উৎসবে মাছ মাংস খান ও সেই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন তাঁরা দেশের অধিকাংশ নিরামিষভোজী হিন্দু জনগণের আবেগকে অপমান করেন। প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের প্রতিবাদে বাংলা পক্ষের বক্তব্য, আমরা হিন্দু কি না বা মাছ মাংস খাবো কি না সেই কৈফিয়ত কি ওঁকে দিতে হবে?
সেই প্রতিবাদে বাংলা পক্ষ সল্টলেকে মাছ ভাত খাওয়ানোর বিনে পয়সার ভোজের আয়োজন করে। মেনুতে ছিল ভাত, মুড়িঘন্ট, আলু ভাজা , মাছের মুড়ো দিয়ে তরকারি , রুই মাছের কালিয়া ও রসগোল্লা। উল্লেখ করা যেতে পারে এবারের লোকসভা নির্বাচনে সল্টলেকের প্রতিটি ওয়ার্ডে তৃণমূল পরাজিত হয়েছে বিজেপির কাছে। বারাসত কেন্দ্রের অন্তর্গত সল্টলেকের প্রার্থী ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী কাকলি ঘোষ দস্তিদার। বাংলাপক্ষের অধিনায়ক গর্গ চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, সল্টলেকে দুই রাজ্যের বহিরাগতরা বাঙালি অধিবাসীদের কুক্ষিগত করছেন। বাজারে মাছ মাংস বিক্রিতে আপত্তি জানাচ্ছেন। আমিষ খেলে ফ্ল্যাট ভাড়া দেওয়া হচ্ছে না। এটা বাংলা পক্ষ সহ্য করবে না। তাই শ্লোগান , মাছ ভাত ওই আসছে তেড়ে, ভাগ ভুজিয়া বাংলা ছেড়ে।
তিনি আরও বলেন, একই অভিযোগ আসছে লেকটাউন থেকে। আমরা সেখানেও এই মাছ ভাতের উৎসব করবো। সঙ্গে রাখব শুঁটকি মাছ। মাছের গন্ধে ওদের অর্ধভোজন করাবো। ভুজিয়া ও গুটখা যেমন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক তেমন বাংলা সংস্কৃতি বিরোধী। বাংলা পক্ষ সল্টলেক শাখার আরও কয়েকটি দাবিতে বলা হয়েছে সল্টলেকের দুর্গাপুজোর কমিটিতে বাঙালির কর্তৃত্ব রাখতে হবে। কোনো বহিরাগত যেন নবমী বা কোনোদিন আমিষ খেতে বাধা না দিতে পারে। সল্টলেকের ফুটপাথ সহ কমিউনিটি মার্কেটে সর্বত্র বাঙালির দোকান রাখতে হবে।
মোদীজির আমিষ খাওয়া নিয়ে আপত্তি।
তবে একটা কথা সত্যি। প্রধানমন্ত্রী শ্রাবণ মাসে ও নব রাত্রিতে মাছ মাংস খান যাঁরা তাঁদের মোঘল সংস্কৃতির মানুষ বলে যে ইঙ্গিত দিয়েছেন সেটি তিনি দেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতি সম্পর্কে অজ্ঞ সেটাই প্রমাণ করেছেন। তিনি আরও বলেন সংখ্যাধিক্যের নিরামিষাশী মানুষদের আবেগে আঘাত করা হয়েছে। অথচ ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেল্থ সার্ভে বলছে, দেশের ৭৮ শতাংশ পুরুষ ও ৭০ শতাংশ নারী আমিষভোজী। মাত্র দুটি রাজ্য গুজরাট ও রাজস্থানে আমিষভোজী ৩৯.৯ও ২৬.৮ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি বাংলা। আমিষভোজীর সংখ্যা ৯৮.৭ শতাংশ। এরপরেই তামিলনাড়ু ও অন্ধ্র ৯৮.৭ শতাংশ। কেরালা ৯৭.৪ শতাংশ। আসাম ৭৮.৬ শতাংশ, উত্তর প্রদেশ ৫৫ শতাংশ, মধ্যপ্রদেশে ৫১.১ শতাংশ, মহারাষ্ট্রে ৫৯ শতাংশ ও বিহারে ৯০ শতাংশ মানুষ আমিষভোজী। পূর্বাঞ্চলের ছোট রাজ্যগুলিতো ১০০ শতাংশ আমিষভোজী।
তামিলনাড়ুর শিবের মন্দিরে চিকেন ও মাটন বিরিয়ানি ভোগ দেওয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রী খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন তামিলনাড়ুর মুনিয়ান্দি স্বামী মন্দি যেটি মাদুরাইয়ে ভাদক্কামপট্টির এক গ্রামের শিবের মন্দিরে চিকেন ও মাটন বিরিয়ানি ভোগ দেওয়া হয়। পুরীতে জগন্নাথদেবের মন্দিরে বিমলা মন্দিরে দুর্গাপুজোর অষ্টমীতে ছাগ বলি দিয়ে পরুসা অর্থাৎ প্রসাদ দেওয়া হয়। যোগী রাজ্য উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুরে তারবুলহা দেবীর মন্দিরে চৈত্র মাসের নব রাত্রিতে ছাগ বলি দিয়ে প্রসাদ বিতরণ হয়। বাংলার কথা উল্লেখ করা অপ্রয়োজনীয়। মোদী জি বিবেকানন্দকে আদর্শ বলেন। তিনি নিশ্চয়ই জানেন বিবেকানন্দের মাছ মাংসের প্রীতির কথা । যে সময়ে বাঙালি হিন্দু পরিবারে রাম পাখি অর্থাৎ মুরগি খাওয়া নিষিদ্ধ ছিল তখন তিনি শিষ্যের বাড়িতে মুরগি রান্না করিয়ে খান। আমেরিকায় গিয়ে যাঁর বাড়িতে অতিথি হয়ে ছিলেন সেখানে প্রথম দিনেই ডিনারে বিফ স্টেক খান। সেই প্রেক্ষিতে বাংলা পক্ষের এই মাছ ভাত উৎসব তাৎপর্যপূর্ণ।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমিষ খাবারের ছবি ভিডিওতে দিয়ে দেশের অধিকাংশ নিরামিষভোজী মানুষদের মনে আঘাত দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তব তথ্য বলছে, দেশে প্রতি দশ জনের সাত জন আমিষ খান।