দমদম পার্ক তরুণ সংঘে দেবী বন্দনার উন্মোচন

দিগদর্শন ওয়েব ডেস্ক: বাংলায় দুর্গাপুজোর প্রচলন নিয়ে আছে বহু বিতর্ক। কেউ বলেন ১৬০৬ সালে তাহেরপুরের জমিদার কংসনারায়ণ, কেউ বলেন নদীয়ায় জমিদার রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের পূর্বপুরুষ ভবানন্দ মজুমদার। যদিও ঐতিহাসিক সূত্র বলে, বাংলায় দুর্গাপুজোর প্রচলন ১৫১০ সালে।পুজোর আয়োজন করেন কোচবিহারের মহারাজা বিশ্বসিংহ।রাজবংশের সেই পুজো শুরু ভাঙ্গরাই মন্দিরে । দমদম তরুণ সংঘের পুজো সে অর্থে তেমন প্রাচীন নয়, তবে তরুণ বয়সেই খ্যাতির শীর্ষে ওঠা নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। ক্লাবের পথচলা ১৯৫৭ হলেও ১৯৮৬ সালে প্রথম পুজোর সূত্রপাত। এই এলাকার ধারে কাছে তখন কোনো বারোয়ারি পুজো ছিল না। পুজোর রোশনাই যখন কলকাতাকে উৎসবমুখর করে তুলত, দমদম পার্ক অঞ্চলের মানুষদের এলাকায় চাপা অন্ধকার। যখন ভি আই পি রোড গড়ে ওঠেনি , এলাকায় রাত্রি নামলে শোনা যেত শিয়ালের ডাক, খাল, নয়ানজুলি, গাছপালা, ঝোপঝাড়, জলাভূমি  আর গুটি কয়েক পরিবারের বাস। বিবর্তনের শর্তে আজকের দমদম পার্ক এখন কলকাতার ঈর্ষার বস্তু।

দমদম পার্ক তরুণ সংঘকে ঘিরে অনেকগুলি পুজো এখন বাংলার মানুষকে টেনে আনে দমদম , পার্ক অঞ্চলে। যেন একান্নবর্তী পরিবার তবে অনেকটা হেঁশেল আলাদা পরিবারের মত। উৎসবে এক ছাতার তলায়। আছে সুস্থ রেষারেষি। তবে তা সম্পর্ককে ছিন্ন করে নয়। তাই তো তরুণ সংঘের পুজোর উন্মোচনে আসেন পার্শ্ববর্তী প্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাবের হোতারা। ইষ্ট বেঙ্গল মোহনবাগান নিয়ে হয় খুনসুটি। নির্বাচনী দূষণে বাংলা যখন আক্রান্ত তখন দমদম তরুণ সংঘের সুসজ্জিত শামিয়ানার নিচে এলাকার মানুষদের জড়ো হওয়া, স্টেজে গুণী ও প্রবীণ ব্যক্তিত্বদের সম্বর্ধনা, আদিবাসী শিল্পীদের লোকনৃত্য,  নহবত খানায় সংখ্যালঘু শিল্পীদের পাঁজরভাঙা দমে সানাইয়ের সুর মূর্ছনা ও আতশবাজির রোশনাই তো বাংলার চিরাচরিত সংস্কৃতির উৎসবকে চিহ্নিত করে। সন্ধ্যায় একটু অভাব পরিলক্ষিত হয় পুজোর ঢাকের শব্দ না পেয়ে।অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কমিটি সভাপতি রবিন গাঙ্গুলি, সম্পাদক মন্ডলীর তিন সদস্য সুনন্দ মিত্র, সায়ন্তন কাঞ্জিলাল ও সৌর ঘোষ। কার্যকরী সভাপতি দেবীপ্রসাদ চ্যাটার্জি।বিশেষ অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত ছিলেন স্থানীয় অধিবাসী , রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কল্যাণ রুদ্র, ফুটবলার তরুণ বসু, রণেন রায়, দুবারের গিনিজ বিজয়ী অঙ্কনশিল্পী শুভদীপ চ্যাটার্জি। উপস্থিত ফোরাম ফর দুর্গোৎসবের সদস্যদের সম্বর্ধনা দেওয়া হয়।স্থানীয় মহিলা সদস্যদের মধ্যেও উদ্দীপনা দেখা যায়।

বিজ্ঞাপন

১৯৯৯ সাল থেকে  দমদম পার্ক তরুণ সংঘের থিম পুজোর শুরু। প্রথম বছর শিল্পী রূপচাঁদ কুন্ডুর  গ্রাম বাংলার থিম নিয়ে জনপ্রিয়তার ঢেউ। সেইট্র্যাডিশন আজও চলছে। সেরা পুরষ্কারে পুরষ্কারে তরুণ সংঘের ঘর ঠাসা।,২০২৪ এ বাসন্তী নবমীর সন্ধায়  এবছরের খুঁটি পুজোর শামিয়ানার নিচে উন্মোচন উৎসবে সামিল হলেন সাংবাদিকরাও। খুঁটি পুজোর উদ্বোধন ও প্রচ্ছদ উন্মোচন করেন স্থানীয় বিধায়ক ও রাজ্যের অগ্নিনির্বাপক মন্ত্রী সুজিত বসু। অন্যতম সম্পাদক সায়ন্তন কাঞ্জিলাল জানান, এবার পুজো ৩৯ তম বর্ষের।  মুক্তধারা থিমের দায়িত্বে অনির্বাণ দাস। সুজিত বোস তাঁর বক্তব্যে বলেন , আমার নিজের পুজো নিয়ে এখনও ভাবার সময় পাইনি অথচ বাসন্তী নবমীতে খুঁটিপুজো করে আগামী পুজোর থিম পর্যন্ত ভেবে ফেলেছে তরুণ সংঘ। সকলের থেকে তাই অনেকটাই এগিয়ে দমদম পার্ক তরুণ সংঘ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *