বেশ্যার বারোমাস্যা

পর্ব : ৫৮

সুজিৎ চট্টোপাধ্যায় : কামশাস্ত্রের রচয়িতা বাৎস্যায়নের জন্ম গণিকাপল্লীতেই । মনোবিজ্ঞানী সুধীর কক্কর তাঁর দ্য অ্যাসেটিক অব ডিজায়ার উপন্যাস গ্রন্থে বাৎস্যায়নের মুখে যে সংলাপ বসিয়েছেন সেখানে আছে বাৎসায়ন বলছে, আমি অবশ্যই ভাবনায় পড়েছি, আমার মা আমাকে অপছন্দ বিকরতেন্ট কি না, আমি হৃষ্টপুষ্ট মিষ্ট স্বভাবেরই শিশু ছিলাম । তাতে তার বিরাগভাজন হবার কি আছে? কিন্তু আমার জন্যই তাঁর অপরূপ সুন্দর শরীরটিতে খুঁত ধরল। মাত্রই তো ত্রিশ বছর বয়স তাঁর তখন, দূরদূরান্তের লোক জানে অবন্তিকাই হল কোশাম্বীর মুকুটমনি। মনন মুখোপাধ্যায় তাঁর প্রাচীন ভারতের সাহিত্যে ও সমাজে যৌনতা প্রবন্ধে লিখেছেন,,,,, প্রাচীন ভারতের সাহিত্যে বারাঙ্গনাদের মধ্যে ফুটে উঠেছে নারীত্বের বর্ণময় রূপ গৃহঙ্গনাদের মধ্যেই শুধু সৌন্দর্যময়তার প্রকাশ ঘটবে এমন কোনো কথা নেই। সংস্কৃত সাহিত্য জুড়ে বারঙ্গনাদের অঙ্গসৌষ্ঠব ও সুবাস। বিশাখা দত্তের মুদ্রারাক্ষসে দেখা যায় রাজপথের মর্যাদা বাড়ায় জনপদ বধূরা। ভবভূতির মালতী মাধবে গণিকা কুবলয়াবলীর ছলনার কথা আমাদের জানা। দামোদর গুপ্তের কুট্টনীমত বারঙ্গনাদের সমাজের সচিত্র পরিচয়। রাজতরঙ্গিনীতে বার স্ত্রী সুদর্শনা, পানঙ্গলা ও কমলার কথা।

লেখক তাঁর প্রবন্ধে আরও লিখেছেন,,,,,,, কালিদাসের নলোদয় কাব্যেও এই মদ্যপ অবস্থায় নরনারীর যৌন উৎশৃঙ্খলতার কথা বলেছেন।_ কামিদের সঙ্গ কামিনীরাও মদ পান করছে। মদে ভর্তি পাত্রগুলিরওপর বসছে অনেক ভ্রমর মেয়ে -পুরুষ সমান নেশার ঘোরে মদে ভর্তি পাত্রগুলিতে হাত দিতেই উড়ে গেল ভ্রমরের দল। আর মত্ত নারী_ পুরুষ পাপ পূণ্যের হিসেব ভুলে যে যার সঙ্গে শুয়ে পড়ল। কালিদাসের লেখায় ধরা পড়েছে উন্মত্ত নাগরীদের এক অবাধ যৌনাচারের দৃশ্য। কুলার্ণবতন্ত্রে সাধন প্রক্রিয়া সম্বন্ধে বলা হয়েছে আলিঙ্গনং চুম্বনঞ্চ স্তন দোয় মর্দনন্তথা । দশ্নং স্পর্শনং যোনির্বিকাশ্যে লিঙ্গঘর্ষণম।। প্রবেশ স্থাপনং শক্তের্ণব পুষ্পানি পুজনে।

কুরুক্ষেত্রে গণিকা শিবির যুদ্ধচলাকালীন।

মহাভারতে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ কতদিন চলবে কেউর জানত না ।বিভিন্ন রাজ্যের রাজারা দুই পক্ষে লড়তে এসেছেন। কিন্তু রাতে যখন যুদ্ধ বিরতির তখন তো মদে ও নারী ছাড়া কি সম্ভব? কেননা কার কবে মৃত্যু কে জানে? তাই দুপক্ষের যৌথ সিদ্ধান্তে কুরু পাণ্ডব রাজ্যের সেরা গণিকাদের এনে রাখা হয়। যুধিষ্ঠির আদেশে দেন যেন এই সুসজ্জিতা, সুগন্ধি দ্রব্যানুলিপ্ত, সুখে আলয় স্বরূপা বেশ স্ত্রীগণের যত্ন ভালো করে করা হয়। এঁদের দৃষ্টি ও বাক্য ছিল রমণীয। (চলবে)

আগামী পর্ব ৪ নভেম্বর, সোমবার ,২০২৪

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *