পর্ব : ৩৯
গ্রিক মহাকবি হোমারের রচনায় যৌনকর্মীর কোনো উল্লেখ নেই।
সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়: বেশ কয়েকটি ধারাবাহিক পর্বে ভারতে বৈদিক যুগের বারবণিতা ও দেবদাসী প্রথা সম্পর্কে আলোচনা করেছি। এই পর্বে চোলুন যাওয়া যাক গ্রিসে। হোমারের কাব্যে বেশ্যা প্রথার উল্লেখ না থাকলেও সেই সময়ে যে দেহদান মেয়েরা করতেন না পেশা হিসেবে সে কথা হলফ করে বলা সম্ভব নয়। নিকোলাওস এ ভ্রিসিমটজিস লিখিত গ্রিসের প্রেম ও যৌনতা বিষয়ে লেখা গ্রন্থের বাংলা অনুবাদ করেছেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। অনুবাদ গ্রন্থটির প্রকাশক আহমদ পাবলিশিং হাউস , ঢাকা, বাংলাদেশ।
গ্রিক আইন প্রণেতা সলোন প্রথম পতিতালয় প্রতিষ্ঠা করেন।
অনুবাদক লিখেছেন, খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীর সূচনায় আইন প্রণেতা সলোন ( খ্রিস্টপূর্ব ৬৩৯_ ৫৫৯) যখন এথেন্সে সর্বপ্রথম পতিতালয় প্রতিষ্ঠা করেন, এরপর থেকেই সেখানে নিয়ন্ত্রণহীন পতিতাবৃত্তির অবসান ঘটে । সলোনের উদ্দেশ্য ছিল প্রজননের বয়সে উন্নীত কিশোরদের যৌন বাসনা চরিতার্থ করতে সহায়তা করা , যাতে তারা বয়ঃপ্রাপ্তির সন্ধিক্ষণে সমাজের বিশিষ্ট মহিলাদের সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া থেকে নিজেদের বিরত রাখতে পারে। এ ব্যাপারে এথেনয়োস লিখেছেন, হে মহামতি সলোন , আপনি আমাদের কল্যাণ করেছেন। আমাদের নগরী যেহেতু উত্তেজনায় উদ্দীপ্ত তরুণদের দ্বারা পরিপূর্ণ, যারা শাস্তিযোগ্য অপরাধ করে বসতে পারে। কিন্তু আপনি মহিলাদের সংগ্রহ করে সুনির্দিষ্ট স্থানে রেখেছেন, যেখানে তাদেরকে যাদের প্রয়োজন তারা সেখানে গিয়ে নিজেদের মতো করে ব্যবহার করতে পারে।( পৃষ্ঠা ৫৬-৫৭)
সহচরীসহ গ্রিক পুরাণের প্রেমের দেবী আফ্রোদিতি।
রাজা সোলন এথেন্সে নির্মিত প্রথম পতিতালয়গুলি থেকে আদায়কৃত কর দিয়ে সলোন একটি মন্দির নির্মাণ করেন প্রেমের দেবী আফ্রোদিতির নামে। পতিতা বা বেশ্যা ( whore)শব্দটিকে গ্রিক ভাষায় বলা হয় পোমে। যা সৃষ্টি পেনরেমি শব্দ থেকে। অর্থ বিক্রয়যোগ্য। অর্থাৎ যে নিজেকে অর্থের বিনিময়ে বিক্রয় করবে। এই গ্রিক শব্দ থেকেই পর্নোগ্রাফি শব্দ। গ্রিসে পতিতাদের বিভিন্ন শ্রেণী ছিল। বিষয়টি নির্ভর করত মেয়েদের কোথা থেকে মিলত সেই হিসেবে। চামাইতাইপে বলা হত যারা নিজেদের বাসস্থানের বাইরে পুরুষদের সাথে মিলিত হত। তারাশায়িত অবস্থায় ( chamai typto= to lie down ) নিজেদেরকে ভোগ করতে দিত। পারিপাটেটিকে অর্থাৎ বিচক্ষণশীল, যারা রাস্তায় গ্রাহকের জন্য অপেক্ষা করত, গ্রাহক তাদের নিজস্ব পছন্দ করা স্থানে নিয়ে যেত।আরেক গোষ্ঠীকে বলা হত গেফাইরিডে যারা শহরের সেতুগুলির কাছে চলাফেরা করত। আরেক ছিল কাটাক্লেইসটে অর্থাৎ আবদ্ধ, যাদেরকে রাখা হপতিতালয়ে। কিন্তু খদ্দের ধরতে তারাথাকত শহরের বারোয়ারি স্নানগারে।
অনুবাদক আনোয়ার হোসেন মঞ্জু তাঁর অনূদিত গ্রন্থে লিখেছেন ,,,,,,, পতিতালয়ের আরেকটি নাম ছিল Oikiskot বা ছোট বাড়ি।, যা এসেছে Oikos বা বাড়ি থেকে । এই যোগসূত্র অনুসারে এখনও কোন কোন ভাষায় যেমন ইতালীর ভাষায় casa অর্থাৎ বাড়ি শব্দ থেকে উৎপত্তি হয়েছে ক্যাসিনো বা পতিতালয়। এথেন্সে সলোন যে পতিতালয়গুলি স্থাপন করেছিলেন সেগুলো ছিল নগরীর উপকন্ঠে উত্তর পশ্চিম দিকে অবস্থিত একটি কবরস্থানের পাশেই? এলাকাটির নাম ছিল কেরামকোস ( চলবে)
পরবর্তী পর্ব : আগামী শুক্রবার ৩১ অগাষ্ট,২০২৪