দিগদর্শন ওয়েব ডেস্ক : বাবরি মসজিদ গুঁড়িয়ে অযোধ্যায় রামলালার মন্দির নির্মাণ হয়েছে। যা ছিল পহেলি ঝাঁকি। কাশী মথুরা আভি বাকি। কত শ্রমিক হৃদয়ে যক্ষ্মার জীবাণু নিয়ে কাশতে কাশতে মন্দির নির্মাণ করেছেন তার পরিসংখ্যান প্রযুক্তিবিদদের কাছে নেই। যাঁরা বিশ্বকর্মার মত হাতুড়ি ছেনি নিয়ে প্রস্তর টুকরোকে শিল্পে পরিণত করেছেন, সাদা মার্বেলের সিঁড়ি মসৃণ করেছেন গতর খাটিয়ে, দীর্ঘ নির্মাণকালে কতবার কেশেছেন সে হিসেব কে রেখেছে? বুকের পাঁজরে রাজরোগ পুষে তাকে আত্মার আত্মীয় করে কাজ করে চলেছেন বছরের পর বছর। শুধু ঈশ্বরের বাসস্থান কেন, গণতন্ত্রের মন্দির নতুন সংসদ ভবন যাঁরা নির্মাণ করলেন কিম্বা আজও খনি শিল্পে , ইঁটের ভাটায় শ্রমদান করছেন বুকে অভিশাপ নিয়ে, বিজ্ঞান তাকে বলছে মারণ রোগ। বিজ্ঞানের পরিভাষায় সিলিকোসিস। ১৯৫৯ সালে ২৯ ডিসেম্বর প্রখ্যাত পদার্থ বিজ্ঞানী রিচার্ড ফাইনম্যান ক্যালটেক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সেমিনারে একটি বক্তৃতা দেন। বিষয় দেয়ার ইজ প্লেনটি অফ রুম এট দ্যা বটম: এন ইনভেনশন টু এন্টার এ নিউ ফিল্ড অফ ফিজিক্স। আমরা জানতে পারি ন্যানো টেকনোলোজি প্রযুক্তি। তিনি তাঁর ছাত্র এলবার্ট হিক্সের সাহায্যে একটি ধারনা দেন ।বাংলায় যাকে বলে ডাক্তারকে গিলে খাওয়া। আসলে তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন, ন্যানো টেকনোলজি সাহায্যে যক্ষ্মা কিম্বা সিলিকোসিস রোগীকে রোবটের সাহায্যে রোগমুক্তি ঘটাবেন। না সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। কেননা শ্রমিকের শ্রম দরকার রাষ্ট্রের। তাঁর রোগমুক্ত হৃদয় নয়। প্রতি বছর ১৭ মিলিয়ন শ্রমিক পেশাগত স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছেন। ভারতে সেই সংখ্যা ১৭ শতাংশ। ভারতে গুজরাট , রাজস্থান, পন্ডিচেরি, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ছত্তিশগড়, ঝাড়খণ্ড ওড়িশা ও বাংলার খনি শ্রমিক , নির্মাণ শ্রমিক,অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরি ও স্লেট পেন্সিল শিল্পের সংগঠিত ও অসংগঠিত শিল্পের শ্রমিকদের বুকে পালিত হচ্ছে রাজরোগ।
১৯৯৯ সালেই ইণ্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ সমীক্ষায় জানিয়েছিল আমাদের দেশে তিন মিলিয়ন মানুষ চরম বিপদসীমার আছেন। যাঁদের মধ্যে ১.৭ মিলিয়ন খনি বা খাদানে০.৬ মিলিয়ন কাঁচ বা মাইকার মত নন মেটালিক পণ্য নির্মাণে যুক্ত ০.৭ মিলিয়ন শ্রমিক ও গৃহ নির্মাণ শিল্পে ৫. ৩ মিলিয়ন শ্রমিক। জীবন জীবিকার গ্যারেন্টি নেই এঁদের জীবনে। এরাজ্যে সরকারি পরিসংখ্যানে সিলিকোসিসে আক্রান্তের সংখ্যা মাত্র ৮৮। কিন্তু টিভি নাইন বাংলা চ্যানেলে অন্তর্তদন্তে উঠে এসেছে বিষ্ফোরক তথ্য। রাজ্যের ৩৯ টি ব্লকে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা কয়েক লক্ষ। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন সিলিকোসিসে আক্রান্ত হতেই পারেন পরিবহন ও রং শিল্পের কর্মীরাও। কলকাতার কাছে মিনাখাঁ ও দেগঙ্গার ঘরে ঘরে মলিন মুখে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন বাংলার বিশ্বকর্মারা। মৃত্যুও হয়েছে কয়েকজনের। মাথার ওপরে নেই তাঁদের আবাস j যোজনার ঘর, নেই একশ দিনের কাজ। সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত রাখতে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের রোগীর পেশস্ক্রিপশনে অসুখের নাম লুকিয়ে রাখা হয়।
সম্প্রতি প্রতিবাদী এইসব পরিবারের পক্ষে আদালতের শরণাপন্ন হলে মহামান্য কলকাতার উচ্চ আদালতের নির্দেশে একটি বিশেষ কমিটি হতভাগ্য পরিবারগুলির পাশে দাঁড়িয়েছে। আলোচনার ভিত্তিতে আপাতত পাঁচজন আক্রান্তের জন্য পেনশনের তালিকায় নাম নথিভুক্ত হয়েছে। কিন্তুএতো সিন্ধুতে বিন্দু।আদালতের নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত মা মাটি মানুষের প্রবক্তারা নিশ্চুপ ছিলেন কেন? লাখ লাখ হতভাগ্যের ভবিষ্যত কি? সরজমিনে বাংলার এই হতভাগ্য বিশ্বকর্মার খাদান ও গ্রাম ঘুরে আক্রান্ত ও তাঁদের অসহায় পরিবারের হাল হকিকত সংগ্রহ করেছে টিভি নাইন বাংলার সাংবাদিকেরা। নতুন নিউজ সিরিজ মৃত্যুর সঙ্গে ঘর- দুয়ার।
দেখুন রবিবার ২৩ জুন। রাত ঠিক ১০ টায়।