সুজিৎ চট্টোপাধ্যায় : ২৯ এপ্রিল। লোকসভা নির্বাচনের আবহে এবার অনেকটাই ম্লান খৃষ্টান ধর্মে বিশ্বাসী মানুষদের ইস্টার উৎসব। যা চারদিনব্যাপী পালিত হয়। গুড ফ্রাইডে, ইস্টার স্যাটারডে, ইস্টার সানডে ও ইস্টার মান ডে নামে। এই প্রতিবেদনে দুটি তথ্য খুঁজে দেখবো, সত্যিই কি এই দিনে যীশু ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন? আদপেই কি এই পরব যীশুর মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে শোক পর্ব? নাকি অতীতে দুর্গাপুজোর মতোই চারদিনব্যাপী ঋতু উৎসব? শস্যদেবীর আরাধনা? ইতিহাস কি বলছে?
শ্রদ্ধা ও ভক্তির সঙ্গে বিশ্বজুড়েই পালিত হয় ইস্টার উৎসব। খ্রিষ্টান ধর্মে বিশ্বাসীদের বাইবেলের নবতম অংশ নিউ টেস্টামেন্টে বলা হয়েছে, মতভেদের কারণেই দেশের রাজা ও পুরোহিতেরা পরম পিতা ঈশ্বরের প্রিয় পুত্র যীশুকে ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যা করে। যীশুর শিষ্যরা প্রভু যীশুর মৃতদেহ কবরস্থ করেন এক পাহাড়ি গুহায়। তিনদিন পর অলৌকিক উপায়ে যীশু কবর ছেড়ে উঠে শ্বেতশুভ্র পোশাকে দুহাত তুলে আকাশে তাকালে পরম পিতা তাঁকে স্বর্গে নিয়ে যান। এখন থেকেই বিতর্ক শুরু। যীশু তো রাজার রাজত্ব কেড়ে নিতে চাননি। বিদ্রোহও করেননি। তিনি তো পরম পিতা ঈশ্বরের এক নতুন ধর্মীয় মতবাদ প্রচার করেছিলেন। যে মতবাদ মানবপ্রেম। তবে কেন রাজা ও পুরোহিতদের চোখের বালি হলেন?
বিজ্ঞাপন
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে জানতে হবে সেই সময়ের ভৌগলিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। পিছিয়ে যেতে হবে ২০২৪ বছর আগে। যীশুর জন্ম বেথলেহেম নগরে। যীশুর জন্মের আগে থেকেই প্যালেস্টাইন ও জেরুজালেম ছিল ইহুদি জাতি অধ্যুষিত। যীশু নিজেও ছিলেন ইহুদি। ইহুদি কারা? বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্ট বলছে, পৃথিবীর প্রথম নারী ,পুরুষ আদম ও ইভ। (যদিও প্রথম নারী ইভ নন। সে অন্য এক গল্প।) । এই আদমের বংশধর মুসা। মুসা খ্রিস্টপূর্ব ১৩৯৯ অব্দে ইসরায়েলি বংশে ইমরানের ঔরসে ও জোচিবেদের গর্ভে জন্মান। পরবর্তী সময়ে ঈশ্বরের প্রেরিত দূত হিসেবে ইহুদি ধর্মের প্রবর্তন করেন। ইব্রাহিমের পুত্র ইসহাক, তাঁর পুত্র ইয়াকুব। ইয়াকুবের ১২টি পুত্রের নামে ১২টি গোষ্ঠী তৈরি হয়। এই গোষ্ঠীর একটিতে জন্ম নেন মহামানব ইয়েশুয়া। ইনিই বাংলায় যীশু ও ইউরোপে জেসাস নামে পরিচিত হন অনেক পরে।
সাধারণত ধারণা, যীশুর মাতৃভাষা হিব্রু। আসলে তাঁর ভাষা ছিল আর্মাইক। উচ্চারণ ভেদে আর্মাইচ।যীশু সেমেটিক ধর্মের ত্রুটি খুঁজে সঠিক পথে মানুষকে চালিত করতে চেয়েছিলেন। অমত ছিল রাজা ও পুরোহিতদের। সেই সময়ে ইহুদি দেবতা ছিলেন জেহবা। সেই ঈশ্বরের বার্তাবাহক ছিলেন মৌজেস। সেখানে যীশুকে মানবেন কেন? ফলে যীশু হলেন চক্ষুশূল। যীশুর জন্মকাল নিয়েও বিতর্ক আছে। আজকের হিসেবে ২০২৪ সাল আগে যীশুর জন্ম। কিন্তু যীশুর জীবনী লেখক রেঁনা বলেন, সম্রাট অগাস্টাস সিজারের রাজত্বকাল ৭৫০ রোমান অব্দে।হিসেবটা ছিল ভুল। ঐতিহাসিক সায়মন সেবাগমন্টে ফিউরির বক্তব্য, যীশুর জন্ম হয়েছে আরও চার বছর আগে। আবার ঐতিহাসিক আইজ্যাক আসিমভ বলেছেন, যীশুর জন্ম আরও আগে। ড: এস পি জে স্টুয়ার্ড এর মতে, যীশুর জন্মের হিসেবে এখন ২০৩০ সাল। ভারতীয় জ্যোতির্বিদ বরাহমিহির লিখেছেন, খ্রিস্টপূর্বের ১২অব্দের ২৬ অক্টোবর যীশু জন্মান। সে হিসেবে এখন ২০৩৪ সাল।
ফিরে যাই যীশুর মৃত্যু প্রসঙ্গে। যীশু তখন যুবক। রাজা হেরোদ মারা যান। যীশু ভেবেছিলেন, তাঁর বিরোধিতা বোধহয় শেষ হলো। তাই তিনি মা মেরীর সঙ্গে গালিল প্রদেশের নাজারথ নগরে ফিরে এলেন। কিন্তু পুরোহিতদের চক্রান্তে যীশু ক্রুশবিদ্ধ হন। দিনের শেষে সেনারা যীশুর মৃত্যু হয়েছে ভেবে ফিরে গেলে শিষ্যরা রাতে যন্ত্রণাকাতর যীশুকে ক্রুশ থেকে নামিয়ে অ্যালোভেরা পাতার রস দিয়ে শুশ্রুষা করে এক গুহায় লুকিয়ে রাখেন। তিনদিন পর একটু সুস্থ হলে যীশু পালিয়ে ইরান আফগানিস্থানের পথ ধরে ভারতে আসেন। কেননা বাইবেলে যীশুর ১২ বছর বয়স থেকে ৩০বছর বয়সের কোনও তথ্য নেই। এমন ধারণা অনেকের। জহরলাল নেহেরু পণ্ডিত ছিলেন। তিনি বিশ্ব ইতিহাস প্রসঙ্গ গ্রন্থে ( প্রকাশক,আনন্দবাজার১৯৯২, পৃষ্ঠা ৮২) লেখেন, যীশু তাঁর ১২গোত্রের সদস্যদের নিয়ে লাদাখ, তিব্বত হয়ে কাশ্মীরে থিতু হন। কবিশেখর ভুবনমোহন দাস নেহেরুর বক্তব্য সমর্থন করে লেখেন, যীশু ভারতে এসে বৌদ্ধ সংঘারামে শিক্ষা নিয়ে গৌতম বুদ্ধের ধর্মই প্রচার করেন। এটা ঠিকই যীশু কোনোদিন নিজের সৃষ্ট কোনো ধর্মের দাবি করেননি।
২০১৫ তে গোয়া থেকে প্রকাশিত ইংরেজি পত্রিকা নবহিন্দ টাইমস্ এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যীশুর লস্ট ইয়ারস সময়ে তিনি ভারতে চলে আসেন। অনেকে বলেন, ৩০বছর বয়সের পর স্বদেশে যীশু ফিরে যান। কেউ বলেন, তিনি ৪৯ বছর বয়সে কাশ্মীরেই মারা যান। সেখানে যীশুর সমাধি আছে। যীশুর মা , পত্নী ও ভক্তরাও কাশ্মীরে ছিলেন। যীশুর সমাধি যা ‘রোজা বাল মাজার’ নামে খ্যাত । তাই নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রযোজনায় ‘দি রোজা বাল সিরিন অফ শ্রীনগর’ নামে একটি তথ্যচিত্র তৈরি হয়। নাজারেথে মা মেরী একবার যীশুর বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন, তখনও নাকি যীশু একবার কাশ্মীরে পালিয়ে এসেছিলেন। যীশুকে নিয়ে এক বই লেখেন আর এস এস সহযোগী প্রতিষ্ঠাতা গণেশ দামোদর সভারকার। তাঁর দাবি, যীশু বিশ্বকর্মা ব্রাহ্মণ বংশে জন্ম নেন ভারতে। নাম ছিল কেশারাও কৃষ্ণ। তিনি ছিলেন একজন তামিল হিন্দু। শিবের উপাসক । খৃষ্টান ধর্ম তাই হিন্দু ধর্মের এক শাখা। সভারকর যীশু শৈব হিন্দু ছিলেন বইটি প্রকাশ করেন ১৯৪৬ সালে। তাঁর দাবি , এখন যে দেশটি প্যালেস্টাইন নামে পরিচিত,সে দেশ অতীতে ছিল হিন্দুভূমি। আরবি ভাষা তামিল ভাষারই একটি শাখা।
সভারকরের দাবির যৌক্তিকতা খোঁজার আগে দেখি ২০১৮ সালের ২৫ ডিসেম্বর বি বি সি ডিজিটাল নিউজে লন্ডনের কিংস কলেজের অধ্যাপক জোয়ান টেলর কি লিখেছেন। তিনি লিখেছেন_” প্রকৃত পক্ষে যীশুর যে চেহারার সাথে আমরা পরিচিত, তার উৎস বাইজান্টাইন যুগে চতুর্থ শতাব্দী বা তার পরবর্তী কালের। সে যুগের যীশুর চেহারা সম্পূর্ণ প্রতীকী। আমরা ভারতে যে বুদ্ধ মূর্তি দেখি, সেখানে বুদ্ধের নাক টিঁকালো,আবার চিন, জাপান, তিব্বতে সেই মূর্তির নাক চ্যাপটা। তেমন জেরুজালেমের ভুমিপূত্র যীশু কৃষ্ণকায়। ইউরোপে নাক উন্নত, ফর্সা, সোনালী চুল। হালকা লাল দাড়ি। আসলে ভক্তের কল্পনা তাদের দেশের সংস্কৃতির ওপর নির্ভরশীল। যীশু যখন ইশ্বরের প্রচার করতেন তখন কি তিনি কোনো পেশায় ছিলেন? সূত্র বলছে, হ্যাঁ। তিনি তার পালক পিতা জোসেফের কাছে ছুতোর মিস্ত্রির কাজ শেখেন। কারণ যীশুর পালিত পিতার ছিল না সংসার পালন করার আর্থিক সামর্থ। আসলে জোসেফের প্রথম স্ত্রী ও অনেক পুত্র কন্যা ছিল। যীশুর অল্প বয়সেই জোসেফ মারা যান। বৈমাত্রেয় ভাইবোনদের প্রতিপালন করার ভার ছিল যীশুর কাঁধে। যীশুর এই বৈমাত্রেয় ভাইদের নাম _জেমস্, জোসেস, সাধমন, মুদ্রস। কিন্তু বোনেরা ব্রাত্য থেকে গেছেন। তাঁদের নাম জানা যায়নি। যীশু নাকি ক্রুশবিদ্ধ অবস্থায় পরম পিতা ঈশ্বরের প্রতি গান গেয়েছিলেন আরামিক ভাষায় এলোই, এলোলামা শবক্তানী। অর্থাৎ, ঈশ্বর কেন তুমি আমাকে ত্যাগ করলে?
এবার আমরা দেখি গুড ফ্রাইডে আসলে কি? স্বামী প্রজ্ঞানানন্দ শ্রী রামকৃষ্ণ বেদান্ত মঠ থেকে প্রকাশিত শ্রী দুর্গা গ্রন্থে ৭৫ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, সূর্য বা অগ্নি পূজা থেকে শস্যাধিষ্ঠাত্রী কেন, সকল দেবদেবীর রূপ ও বিকাশের উৎপত্তি হয়েছে।সিরিয়া,পাশ্চাত্যের গ্রিস সাইপ্রাস, এথেন্স, ক্রিট প্রভৃতি দেশ ও দ্বীপে দুর্গাপূজার মতো কর্ন গডেসের পূজা ও উৎসবের নিদর্শন আমরা দেখতে পাই। শরৎকালে দুর্গা পূজার মতো পাশ্চাত্যেও ইস্তারাদেবীর উদ্দেশ্যে ইস্টার উৎসব( easter) শুরুর দিকে এই উৎসব
( saxons) সম্প্রদায়ের ভেতর জার্মানিতে পালন করা হতো।। পরে ইংল্যান্ডে, আমেরিকায় ও অপরাপর দেশে তা ছড়িয়ে পড়ে। ইস্তারাদেবী একদিকে অমৃতাধিষ্ঠাত্রী দেবী ( wine goddess) ও অন্যদিকে রণদেবী ( war goddess)। দেবীর দুপাশে সিংহ ও সর্প আছে। সিংহ সূর্যের প্রতীক আর সর্প মেঘ তথা বিদ্যুতালোকের প্রতীক। ইস্তারাদেবীর উৎসব এক সময়ে প্রচলিত ছিল। এই ইস্তারাদেবীর উদ্দেশ্যে বসন্তকালে অর্থাৎ ইংরাজি মার্চ বা এপ্রিল এবং বাংলা চৈত্র ও বৈশাখ মাসে উৎসবের অনুষ্ঠান করা হয় । এখনও ঠিক তাই চলে আসছে। ইস্টার এজন্য বসন্তোৎসব (spring festival) বলে প্রচলিত।
রবার্টসনও বলেছেন, “খ্রিস্টমাস ইজ এ সোলার ফেস্টিভ্যাল, ইস্টার ইজ অলসো সোলার ফেস্টিভ্যাল। সুতরাং বসন্তকালে বাসন্তী, দুর্গা, শরৎকালে শারদীয়া দুর্গা, যীশুখ্রিস্টের জন্মোৎসব ও ইস্তারোৎসব আসলে একই।,,,, এই ইস্তারাদেবীর উৎসবের আগে গুড ফ্রাইডে উৎসব। গুড ফ্রাইডেও বসন্তকালীন উৎসব। ফ্রিজিয়ার অধিষ্ঠাত্রী দেবী ফ্রিজিয়া ও ফ্রিগার নামানুসারে ফ্রাইডের নামকরণ হয়েছে।,,,,, ” মোটকথা, গুড ফ্রাইডে থেকে ইস্টার মান ডে পর্যন্ত খ্রীষ্ট সমাজের চারদিন ধরে যে উৎসব ছিল তা সম্পূর্ণ বসন্তকালে অনুষ্ঠিত হয়। বাসন্তী দুর্গা পুজারও সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী ও দশমী এই চারদিন ধরে অনুষ্ঠিত হয়। যীশুর জন্মদিন ২৫ ডিসেম্বর, না ৬জানুয়ারি সেই নিয়ে যেমন বিতর্ক আছে তেমন জন্মের বছর কিম্বা মৃত্যু নিয়েও ঐতিহাসিক বিতর্ক আজও আছে । এমনকি যীশুকে যে ঈশ্বরের সন্তান বলা হয়, তাই নিয়েও বিতর্ক আছে। বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত আরাফাত প্রকাশনীর তাওরাত ইঞ্জিল ও বাইবেল গ্রন্থে এম এম সুলতান মাহমুদ লিখেছেন, “হযরত ঈশার জন্মের পনেরো বছর পর কুরীনীয় সিরিয়ার শাসন ক্ষমতায় আসেন এবং এই সময়ে প্যালেস্টাইনে আদমশুমারি হয়। হযরত ঈশাকে দাউদের বংশের লোক বা রাজার বংশের লোক হিসেবে পরিচয় প্রদানের জন্য নাসারত গ্রাম থেকে আশি মাইল দূরের বেথলেহেম নগরে গর্ভবতী মরিয়মকে আনার কাল্পনিক গল্প সাজানো হয়।”
এই গ্রন্থে ঈশা বা বিবি মরিয়ম সম্পর্কে ইহুদীদের যে অভিযোগ তা মারাত্বক। সেখানে বলা হয়েছে, হযরত ইশা অর্থাৎ যীশু কুমারী মায়ের সন্তান।কুমারী আবার কীকরে সন্তানের মা হন? বাইবেল বলছে, যীশুর পিতা যোসেফ নন।যীশু ঈশ্বরের অলৌকিক শক্তির ফলে মরিয়মের গর্ভে জন্মান। আসলে যীশুর বাবা যীশুর মা মরিয়মের প্রেমিক রোমান সৈনিক প্যান্ডেরা । জনৈক ঐতিহাসিক শিমরোন যে যীশুর এক সমাধি আবিষ্কার করেন, তা মানতে রাজি না হয় না জেরুজালেমের চার্চ এ হোলি সেপাল ক্রে। এই চার্চের সংস্কারক ন্যাশনাল টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অফ এ্যাথেন্স। এই চার্চের নিচেই নাকি আছে যীশুর কবর। ৩০ বা ৩৩খৃষ্টাব্দে ক্রসিফিকেশনের পর এখানেই যীশুকে কবরস্থ করা হয় বলে দাবি চার্চ কর্তৃপক্ষের। ৩২৬ খ্রিস্টাব্দে এই সমাধিস্থল আবিষ্কার করেন রোমান সম্রাট কনস্টানটাইনের মা। তবে প্রত্নতত্ত্ববিদ ফেড্রিক হে বার্ট বলেছেন, কোনও লিখিত প্রমাণ চার্চ দেখাতে পারে নি। তাই এই দাবি মেনে নেওয়া যায় না।
বিজ্ঞাপন
ইতিহাসে যীশুর মাতামহী অ্যানার কোনও পিতৃ পরিচয় না মিললেও যীশুর পিতামহের নাম মিলেছে। যীশুর পুনরুত্থানকে হিব্রু ভাষায় বলা চিজা। যীশুর মাতৃভাষা আরামিক। যার অর্থ আরোগ্যলাভ। ওল্ড টেস্টামেন্ট বাইবেল বলছে, বেথপিত্তর উপত্যকা বেয়ে যীশু যান ঈশ্বরের দেশে। কাশ্মীরের ঝিলম নদীকে প্রাচীন ফার্সি ভাষায় বলা হতো বেহাত। বলা হয়, কোনও মানুষকে ক্রুশবিদ্ধ করার তিনঘন্টার মধ্যে উদ্ধার করা গেলে ক্ষত স্থান মস্তকি ও অ্যালা ভেরার ভেষজ মিশ্রণ লাগলে তাঁকে বাঁচানো সম্ভব।সুতরাং কাশ্মীরে যীশুর সমাধি একথার কিছুটা যুক্তি থাকলেও থাকতে পারে। ২০০৭ সালে ইজরায়েলের সমাধি নিয়ে একটি তথ্যচিত্র বানান বিখ্যাত পরিচালক জেমস ক্যামেরন। তিনিও বলেছেন, সেখানে প্রাপ্ত ১০ টি শবাধারের দুটিতে তিনি যীশুর ও মেরীর নাম পেয়েছেন। শিমরন অবশ্য দাবি করেছেন, ওই সমাধিতে নাম আছে যোসেফ পুত্র যীশু, ও তাঁর পুত্র যুডা ও জেমস দুই ছেলেরও নাম।
যীশুর ছেলে? যীশুর নাকি এক বান্ধবী ছিলেন। নাম তাঁর ম্যাগডোলেন । গালিল সাগরের তীরে তিনি প্রথম পরিচিত হন ম্যাগডোলেনের সঙ্গে। ম্যাগডোলেনের ছিলেন বারবণিতা। নিউইয়র্কের জনৈক সুজান ওলসন দাবি করেছেন, তিনি যীশুর ৫৯তম পুরুষ। তাঁর দাবি , যীশু কাশ্মীরে চলে আসেন।সেখানেই মৃত্যু। সেখানেই তাঁর সমাধি রোজাবেল। ফলে যীশুর জন্ম ও মৃত্যু নিয়ে বিতর্ক আজও থেকে গেছে। এদিকে ইস্টার উৎসব যে আসলে শস্য দেবীর পুজো সেকথাই তো বলছেন ইউরোপের গবেষকরা । আরও গবেষণা চলছে। শুধু এখন অপেক্ষায় থাকা। এর মধ্যে আবার বিষ্ফোরক তথ্য এসেছে চিন থেকে। করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই ২০২০ সালে ভারতের নাগাল্যান্ড, মিজোরাম ও মেঘালয়ে ছড়িয়ে পড়ে একটি খবর। চিনে প্রভু যীশু জন্ম নিয়েছেন মহিলা অবতার হিসেবে।নাম তাঁর ইয়াং ঝিয়াংবিন। তাঁকে চিনে ডাকা হচ্ছে লাইটনিংদেং নামে।নতুন নিউ টেস্টামেন্ট বাইবেল লেখা হয়েছে।নাম দ্য ওয়ার্ড অ্যাপিয়ার্স ইন দি ফ্লেস। যদিও নাগাল্যান্ডের ব্যাপটিস্ট চার্চ কাউন্সিল রাজ্যবাসীকে সতর্ক করে জানিয়েছে, চার্চ আলমাইটি গড ফ্রম চায়না নামে এক প্রতিষ্ঠান খ্রিষ্টানদের কাছে অপপ্রচার চালাচ্ছে। বিতর্ক থাকে। আবার মানুষের ধর্ম বিশ্বাসও থাকে। ২৯ এপ্রিল শ্রদ্ধার সঙ্গে বিশ্ব জুড়ে পালিত হবে যীশুর প্রয়াণ দিবস। অত্যাচারী রাজশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদেরও মুখ যীশু।