পর্ব : ৬৫
বৈদিক সমাজেও নারী অস্তিত্ব ছিল সংকটে।
সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়: আগের পর্বেই বলেছি শুধু গণিকা নয়, বৈদিক যুগ থেকেই কয়েকটি ক্ষেত্রে অল্প সময়ের জন্য নারীর সম্মান অধিকার ছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়থেকে নারী সম্মান বলে কিছু ছিল না। তথ্য তাই বলে। এই পর্বেই সেই প্রসঙ্গেই বলব। ভারতীয় সমাজে প্রান্তবাসিনী ,,, গ্রন্থে চোখ রাখব। লেখক সুরেশ চন্দ্র বন্দোপাধ্যায় ও রমলাদেবী এই গ্রন্থের ধর্মীয় ও সামাজিক পরিবেশে নারীর স্থান প্রবন্ধে লিখেছেন,,,,,, ভারতীয় সাহিত্যে বারংবার নারী সম্ভোগের মাহাত্ম্য কীর্তন হয়েছে। একে বলা হয়েছে স্বর্গ ও এবং মর্ত্যে সর্বাপেক্ষা প্রশস্ত ভোগ, বিশেষত যৌবনে। পুরুষদের পক্ষে ললনা কটাক্ষের দুর্বার আকর্ষণের কথা আছে সাহিত্যের নানা প্রসঙ্গে। পুরুষ ও নারীর একত্র উপস্থিতিকে তুলনা করা হয়েছে আগুন ও ঘিয়ের সঙ্গে। আগুনের স্পর্শে যেমন ঘি গলে যায়, তেমনই এদের সান্নিধ্যে একজন অপরজনের প্রতি আকৃষ্ট হয়। নারী কটাক্ষের আকর্ষণীয় শক্তির দূর্বারতাকে লক্ষ্য করেই আচার্য শঙ্কর প্রশ্ন করেছেন ( মণিরত্নমালা,১২)_ প্রাজ্ঞ ধীর এবং সমদর্শনবিশিষ্ট কে? নিজেই উত্তর দিয়েছেন _ যে নারীর কটাক্ষে মোহিত হয়ে না। রমণীর রূপলাবণ্যে মোহিত হয়ে বহু ঋষিরস্খলন ঘটেছিল বলে পুরা কাহিনী থেকে জানা যায়। জনৈক কবি বলেছেন , নারীর অবলা বিশেষণটি ভুল। তার মোহিনী শক্তি অসীম।( পৃষ্ঠা ১০৯)
বিপথগামিনী স্ত্রীকে লাঠি পেটা করার বিধান দিলেও পুরুষের ক্ষেত্রে কোনো বিধান দেননি কৌটিল্য।
নারী পুরুষের অসাম্য যে কত প্রবল ছিল সেযুগে তার বর্ণনা আছে কঙ্কর সিংহের ধর্ম ও নারী প্রাচীন ভারত গ্রন্থে। লেখক অর্থ শাস্ত্রে ও নারী প্রবন্ধে লিখেছেন,,,,,, পতি পত্নী উভয়ের মধ্যেই ব্যভিচার থাকতে পারে। কিন্তু ধর্মশাস্ত্র ও স্মৃতিশাস্ত্রের বিচারে শুধু নারী শাস্তি পায় কেন এই প্রশ্ন করার অধিকার প্রাচীন ভারতে স্বীকৃতি পায়নি। কৌটিল্য অনুসরণ করেছেন সেই পথ। তিনি বলেছেন যে _ বিপথগামিনী স্ত্রীকে স্বামী শুধু অকথ্য অশ্লীল ভাষায় ভৎর্সনাই ঘোষণা করবে না। বাঁশের লাঠি দিয়ে , দড়ি দিয়ে বা হাত দিয়ে স্ত্রীর পিঠে তিনবার আঘাত করবে অবশ্য দণ্ড বিধানের ব্যবস্থা রেখেছেন কৌটিল্য।
লেখক কঙ্কর সিংহ আরও লিখেছেন, এখানেই মনু ও অন্যান্য শাস্ত্রকারদের অতিক্রম করেছেন কৌটিল্য। মনু এবং অন্যান্য শাস্ত্রকারদের বিধানে পত্নী কখনও পতিকে ভৎর্সনা করতে পারত না
আর বেণুদল ( বাঁশের সরু ছড়ি) দিয়ে স্বামীর শরীরে আঘাত , সেতো ভয়ানক পাপের কাজ। যে কোনও নারীর পক্ষে অসম্ভব ব্যাপার। স্বামী যদি গণিকাসক্ত হয় তাহলে স্ত্রী ঈর্ষাযুক্ত হতেই পারে। তাই কৌটিল্যের এই বিধান।,,,,,,,,, প্রাচীন ভারতের ধর্মে ও সমাজে পুরুষের গণিকাগমন খুব স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল। সেটা কৌটিল্য জানতেন। তাই বেশিদূর যেতে পারেননি। ( চলবে)
পরবর্তী পর্ব আগামী শুক্রবার ২৯ নভেম্বর,২০২৪