পর্ব : ৬৪
শুধু ভারতে নয়, প্রাচীন যুগে মিশরেও পেশাগত ভাবে বেশ্যা নারীরা যোগ্য সম্মান থেকে বঞ্চিত ছিলেন।
সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়: বৈদিক বা পরবর্তী যুগে ভারতে বা মিশর , গ্রিস, রোমের সেই প্রাচীন সভ্যতার যুগেও গণিকা কেবল নয়, গৃহস্থ ঘরের নারীও যোগ্য সম্মান বা পুরুষের সমানাধিকার পেতেন না। সেই প্রসঙ্গে বর্ণনা দিতে হলে গণিকা প্রসঙ্গ বাদ পড়ে যাবে। ইচ্ছে রইল পরবর্তী সময়ে নারীর মূল্যায়ন নিয়ে আলাদা আলোচনা করা। বরং ফিরে যাই গণিকা প্রসঙ্গে। সুকুমারী ভট্টাচার্যের প্রাচীন ভারতে নারী ও সমাজের পৃষ্ঠা নম্বর ৬৩ । লেখিকা এই গ্রন্থে প্রাচীন ভারতে গণিকা প্রবন্ধে লিখছেন,,,,,,, গণিকার ভূমিকা সম্বন্ধে কামশাস্ত্রে পড়ি যে, রাজা অথবা ধনী নাগরিকের দলবলের সঙ্গে কাব্য নাটক শিল্প ইত্যাদির আলোচনা করা ; ধনীর গৃহে অনুষ্ঠিত উৎসব গোষ্ঠীতে অংশগ্রহণ করা। ভিন্ন ভিন্ন বণিক বা ধনী নাগরিকের গৃহে এই গোষ্ঠীর আয়োজন হত। সেখানে প্রচুর পানভোজনের ব্যবস্থা থাকত এবং গণিকাদের প্রথমে পরিবেশন করা হতো যেন তারাই প্রধান অতিথি।
বৈদিক যুগে উৎসবে মূল আকর্ষণ ছিল গণিকাদের নাচগান।
লেখিকা লিখছেন,মাঝে মাঝে সমস্ত দলটাই নগরের বাইরে যেতেন যানবাহনের সাহায্যে সেখানে মোরগের বা ভেড়ার লড়াই অথবা অভিনয় হতো; সন্ধেয় সকলে ফিরে আসতেন। গ্রীষ্মকালে জলক্রীড়া, বসন্তে বসন্তোৎসব ইত্যাদি বিভিন্ন ঋতুতে উপযোগী উৎসব হতো। কামসূত্র ১/৪/৩৪-৪১,৪২] গ্রামবাসীরা এদের উৎসব দেখে বর্ণনা করবে ও অনুকরণ করবে।[ কামসূত্র ১/৪)৪৯] এইসব উৎসব গণিকারাও নিশ্চয়ই উপভোগ করত; কিন্তু এগুলো অনুষ্ঠিত হতো প্রধানত রাজা, বণিক বা ধনী নাগরিকদের স্বার্থে ও নির্দেশে। গণিকারা ছিল কতকটা অলংকরণ কতকটা মার্জিত বিনোদনের উপকরণ।
বৈদিক যুগে যেসব গণিকা নাট্যাভিনয় করতেন তাদের ছিল বাড়তি কদর ধনী সমাজে।
সেযুগে গণিকাদের একাংশ নাট্যাভিনয়ও করতেন। নটী নামে পরিচিত হলেও জেট কোন পুরুষের সম্ভোগ্যা ছিলেন।সমাজের তাতে আপত্তি ছিল না। বেশ্যাগমনে বাস্বৈরিণী গমনেও সমাজে বিধিনিষেধের ছিল না। অবশ্য এই নারী যদি ব্রাহ্মণ বংশের হতো তাহলে পুরুষের শাস্তির বিধান ছিল।কোনোটি রক্ষিতা নারী যদি তার প্রভুর পরিত্যক্তা হতেন সেক্ষেত্রেও কোন নিষেধ ছিল না। কিন্তু যদি কোনো নারী কারো রক্ষিতা হতেন সেক্ষেত্রেঅন্য পুরুষ হাত বাড়ালে শাস্তির বিধান ছিল। তবে পূরুষের ক্ষেত্রে সেই শাস্তি লঘু, নারীর ক্ষেত্রে গুরুতর। ( চলবে)
আগামী পর্ব সোমবার ২৬ নভেম্বর,২০২৪