বেশ্যার বারোমাস্যা

পর্ব: ৬৩

বিদুর দাসী গর্ভে জন্মেছেন। সুতরাং অনুশাসন না থাকলেও অন্ধ ধৃতরাষ্ট্রকেই ব্রাহ্মণ উপদেষ্টারা রাজা করেন।

সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়: গত ৬২ নং পর্বে জানিয়েছিলাম, মহাভারতের রাজধর্ম আলোচনায় বামন কুব্জ, অন্ধ , খঞ্জ, ক্ষীণকায় ব্যক্তি , নপুংসক, বুদ্ধিহীন ব্যক্তি ও অবশ্যই স্ত্রীলোক। সেক্ষেত্রে মহাভারতে ধৃতরাষ্ট্র তো অন্ধ ছিলেন তিনি কী করে হস্তিনাপুরের রাজা হলেন এই প্রশ্নের উত্তর জানাবো। এই প্রসঙ্গে সুকুমারী ভট্টাচার্য লিখেছেন, যেহেতু ধৃতরাষ্ট্র ক্ষত্রিয় রাজার ক্ষেত্রজ পুত্র আর কানীন পুত্র মহর্ষি বেদব্যাসের ঔরস পুত্র সেহেতু কিছুটা অনুশাসনে ছাড় দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া এই প্রতিবেদকের ধারণা ধৃতরাষ্ট্রকে বাদ দিলে সেই মুহূর্তে একমাত্র বিদুর ছিলেন যোগ্য ব্যক্তি। কিন্তু তাঁকে কুরুবংশের সিংহাসনের উত্তরসূরি করা যায় না। কারণ বিদুর তো দাসীপুত্র। বিদুরের জন্ম বৃত্তান্ত আমরা জানি, কুরু রাজমাতা অম্বিকাকে ক্ষেত্রজ পুত্রের জন্ম দেওয়ার জন্য ঋষি ব্যাসদেবের শয্যাসঙ্গিনী হতে বাধ্য করেন ভীষ্ম ও সত্যবতী। কিন্তু ব্যাসদেবের কদর্য চেহারার ভয় পেয়ে দ্বিতীয়বার এক দাসীকে অম্বিকা পাঠান ঋষির শয়নকক্ষে। সেই সূত্রে সেই দাসী পুত্র বিদুর। ধৃতরাষ্ট্র পাণ্ডু দুজনের চেয়েও যোগ্য হলেও বংশসূত্রে দাসী গর্ভে জন্মানো একজনকে কি করে কুরু রাজ্যের উত্তরাধিকারী করা যায়?

গীতার নবম অধ্যায়ের ৩২ নং শ্লোকে বলা হয়েছে পাপ যোনি নারী যদি আমার শরণে আসে তাকেও স্থান দেব।

ফিরে যাব আবার বেশ্যা প্রসঙ্গে। সেযুগে শুধু বেশ্যারা নয়, সাধারণ নারীরও সম্মান ছিল না। মহাভারতের অঙ্গ হিসেবে যে গীতার কথা বলা হয়, সেখানে কৃষ্ণ বলছেন নবম অধ্যায়ের ৩২ নং শ্লোকে, আমার শরণাপন্ন যে আসবে তাঁকেই আমি স্থান দেব। এমনকি শুদ্র ও নারী এইসব পাপ যোনিরাও যদি শরণে আসে আমি তাদের স্থান দেব। অর্থাৎ নারী পাপযোনি। অবশ্য গীতা ভক্তরা কৃষ্ণের মাহাত্ম্য প্রচারে বলেন কৃষ্ণ নারীর গুণাবলী নিয়েও অনেক কথা বলেছেন। ঠিক। বলেছেন। কিন্তু সেসব কথার মূল নারীর গুণ সতীত্ব , পাতিব্রত্য ও পতিভক্তি। কৃষ্ণ নিজে কিন্তু ১৬ হাজার পাপযোনি থেকে উদ্ভুত নারীর সঙ্গসুখ উপভোগ করেছেন। কঙ্কর সিংহ তাঁর ধর্ম ও নারী গ্রন্থের নারী নিন্দায় মহাভারত প্রবন্ধের শেষে রবীন্দ্রনাথের উক্তি উল্লেখ করে লিখেছেন ,,,,, এখানে আবার রবীন্দ্রনাথের কথা মনে পড়ে যায়, স্ত্রীলোককে সাধ্বী রাখিবার জন্য পুরুষ সমস্ত সামাজিক শক্তিকে তাহার বিরুদ্ধে খাড়া করিয়া রাখিয়াছে তাই স্ত্রীলোকের কাছে পুরুষের কোনো জবাবদিহি নাই। ইহাতেই স্ত্রীলোকের সহিত সম্বন্ধে পুরুষ সম্পূর্ণ কাপুরুষ হইয়া দাঁড়াইয়াছে।( রবীন্দ্রনাথ, লোকহিত, রবীন্দ্র রচনাবলী ১২, পৃষ্ঠা ৫৪৮)। এই বিষয়টি কঙ্কর সিংহ আলোচনা করেছেন তাঁর গ্রন্থের ১৩৪ নং পৃষ্ঠায়।

নারী মাত্রই যে বৈদিক শাস্ত্রে মানসিক অত্যাচারিত হয়েছে তাই নয়, নারীকে অশুভ কুকুর, শকুন বেজি, ইঁদুর সমান দেখা হত। এই সম্পর্কেসুকুমারী ভট্টাচার্য তাঁর প্রাচীন ভারতে নারী ও সমাজ গ্রন্থে লিখেছেন,,, তৈত্তিরিয় সংহিতা স্পষ্ট ভাষায় লিখেছে , নারী কেবলমাত্র যৌন সম্ভোগের বিষয় ( ২/৩;১০/৭)। গরু, জমি, এবং নারীকে অতিমাত্রায় ব্যবহার করা ঠিক নয়, অন্যথায় তারা হয় মরবে নয়ত রুগ্ন হয়ে পড়বে।( তদেব ১২/৩৯) ( চলবে)

আগামী পর্ব , শুক্রবার ২২ নভেম্বর,২০২৪

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *