পর্ব : ৫২
নারীর স্তন সৌন্দর্য পুরুষের প্রধান দুর্বলতা।
সুজিৎ চট্টোপাধ্যায় : স্তন শব্দের বুৎপত্তিগীত অর্থ যে শব্দ করে। নারীর স্তনের স্বাস্থ্যের প্রতি পুরুষের এক বিশাল দুর্বলতা।অথচ ভারতে স্তন ঢেকে রাখার চল আগে ছিল না। ব্লাউজ তো আধুনিক বক্ষ্যআবরণী । উত্তর পশ্চিম ভারতে কাঁচুলি ব্যবহারের চল থাকলেও বঙ্গে ছিল না কোনো বুক ঢেকের রাখার আলাদা বস্ত্র। শাড়ি দিয়েই বক্ষ আবরণী করে নিতেন বাংলার মেয়েরা। ধনী পরিবারে ওড়নার ব্যবহার থাকলেও নিচুতলার সমাজে এসবের বালাই ছিল না। স্তনের সঙ্গে পুরুষের আকর্ষণ সম্পর্কে ল্যারি ইয়ং ব্রায়ান আলেকজান্ডার ২০১৮ সালে প্রকাশিত তাঁদের বই দি কেমিস্ট্রি বিটুইন: লাভ ,সেক্স অ্যান্ড দি সায়েন্স অফ অ্যাট্রাক্টশন গ্রন্থে লিখেছেন,শৈশবের ভালোলাগা স্মৃতি কাজ করেছেন, নারীর স্তন সম্পর্কে পুরুষদের অবসেশন ঘটে যখন সে মায়ের কোলে শুয়ে দুধ খায় এবং মায়ের অক্সিটোসিন হরমোন নির্গত হয় যার দরুন স্তনের সঙ্গে পুরুষের পাকাবাঁধন যোগ্যতাখোঁজে আর তার জন্য সেবড়ো মাপের স্তনের প্রতি আকৃষ্ট হয়। যারা বেশ্যালয়ে যাতায়াত করে তারাও সুন্দর মুখমণ্ডলের বদলে বর্তুল স্তন আর খাঁজের খদ্দের হয়ে ওঠে। পুরুষ যখন চোখে দেখে, ছোঁয়, মুখ দেয়, টেপে, তখন তার অবচেতনায় শৈশবের ভালোলাগা স্মৃতি কাজ করে।
ব্যাবিলনের রাজা হামুরাবী।
রামকৃষ্ণ রায় তাঁর স্বদেশচর্চা লোক আদিরস সেকাল – একাল শারদ ২০১৬ সংখ্যায় স্তন বিচিত্রা প্রবন্ধে লিখেছেন,,,,,,, ব্যাবিলনের রাজা হামুরাবির সময় যে সব স্তন্যদাত্রী – ধাত্রীদের নিযুক্ত করা হত, যে কোনও কারণে হোক তাদের কোনও একটি স্তন কেটে নেওয়া হত। স্তন অপসারণের রেওয়াজ চালু থাকার সংবাদ পাওয়া যায় হার্বার্ট নদীতটাঞ্চলবর্তী অস্ট্রেলিয়ান আদিবাসী , টাঙ্গানাইকা ও কাসাঙ্গলৌয়া হ্রদাঞ্চলীয় মেয়েদের মধ্যে। শ্রীরথের ( Roth) বর্ণনাকে বিশ্বাসযোগ্য বলে মেনে নিলেও দেখি, অস্ট্রেলিয়ান মেয়েরা দুটি স্তনই নাকি কেটে ফেলত, তাহলে ওরা সন্তানদের স্তন্যদান করে মানুষ করে তুলত কিভাবে? হয়তো আসল ব্যাপারটা এই যে সমস্ত বন্ধ্যানারীদের দুগ্ধদানের প্রয়োজনীয়তা থাকত না, সেইসব বিশেষ শ্রেণী নারীদেরই করা হত স্তনবিহীন।
প্রাচীন ভারতে মেয়েদের একসময়ে মেয়েদের স্তনকর দিতে হত।
লেখক রামকৃষ্ণ রায় আরও লিখেছেন, এবার বলি স্তনপূজার কথা। শিবলিঙ্গ পূজার পিছনে যে বিশ্বাস, যুক্তি আর ভূমিকা রয়েছে _ স্তনপূজা’র পিছনেও সেরূপ কতকগুলি ভূমিকা আছে। স্তনের প্রথম ভূমিকা প্রেমের ক্ষেত্রে নারী সৌন্দর্য ও আকর্ষণ বৃদ্ধিতে অথবা যৌন কাম চরিতার্থ করতে। ইহুদিদের ভাষায় কাব্বালাহ্ শব্দটি নারী স্তন সৌন্দর্যের চরম পরাকাষ্ঠ প্রকাশে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যুগ হতে যুগ, কাল হতে কালে মানুষ ( আসলে পুরুষ) নারী স্তনের পূজা করে আসছে এ দুটির রূপবর্ণনায়, স্তুতিতে রূপমুগ্ধ প্রেমিক স্তন- মহিমা ঘোষণা করেছে, বন্দনা জানিয়েছেন আর ভক্তির মাত্রা চরমসীমায় পৌঁছে থেমেছে স্তনপূজায় । স্তনের প্রধান ভূমিকা দুটি ক্ষেত্রেই প্রধানভাবে দেখা যায়, প্রথমটি পুরুষচিত্তে সুখানুভবের কামনা জাগায় আর সেই স্তন থেকেই নিঃসরিত সুখের পীযূষধারা সন্তানের কণ্ঠে ঢেলে তার ক্ষুণ্ণিবৃত্তি নিরসন করে। তাই একদা স্তন প্রেমী রোমানদের টেবিলে শোভা পেত স্তনাকৃতি সুবর্ণমন্ডিত পানাধার আর দেবী ম্যাডোনার পূজা করা হত দুগ্ধদাত্রী জীবনদাত্রী জননীরূপে ( চলবে)
আগামী পর্ব : ১৪ অক্টোবর ২০২৪