রামকৃষ্ণ মিশন গোলপার্কের উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের অনুষ্ঠানে প্রশংসিত হলেন সুদীপ পাল

দিগদর্শন ওয়েব ডেস্ক: রামকৃষ্ণ মিশনে সম্প্রতি এক উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের অনুষ্ঠানে ধ্রুপদ পরিবেশন করেন শিল্পী সুদীপ পাল। বিবেকানন্দ ছিলেন উচ্চাঙ্গসংগীত প্রেমী। নিজেও ভালো গান গাইতেন। তবে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের বোদ্ধা সব যুগেই সীমিত। বিবেকানন্দ বলেছিলেন, উচ্চাঙ্গের সঙ্গীত বলিয়া যাহা পরিচিত, তাহাতে যাহাদের মন একাগ্র হয়, সাধারণ পর্যায়ের সঙ্গীত তাহাদের ভালো লাগে না। ইহার বিপরীতটিও সত্য। দ্রুত -লয়ের সঙ্গীত শ্রবণমাত্র মন তাহাতে আকৃষ্ট হয়। ছেলেরা হালকা সঙ্গীত পছন্দ করে, কারণ তাহাতে লয়ের দ্রুততা মনকে বিষয়ান্তযাইবার কোন অবকাশ ভিড়ে না। উচ্চাঙ্গের সঙ্গীত জটিলতর, এবং তাহা অনুধাবন করিতে হইলে অধিকতর মানসিক একাগ্রতার প্রয়োজন: সেইজন্যই সাধারণ সঙ্গীত যাহারা ভালোবাসে, উচ্চাঙ্গের সঙ্গীত তাহাদের ভালো লাগে না।( বাণী ও রচনা ৩:৪৩৩-৪৩৪)

বিবেকানন্দ তাঁর সাঙ্গীতিক ধারণায় কীর্তনকে মেয়েমানুষী এবং কামাদি নীচ ভাবের উদ্রেককারী বলে বাতিল করেন। কিন্তু ধ্রুপদকে দেশের যথার্থ সংগীত আখ্যা দেন। তিনি যত্নের সঙ্গে ধ্রুপদ শেখেন। বীরেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী লিখেছেন,,,, নায়ক গোপাল ,,, আলাউদ্দিনের ( খিলজি) সভায় ছিলেন। তিনি যেসব রাগ আলাপ করতেন আমীর খসরু সেই সব রাগ রাগিণী অন্তরাল থেকে শুনে ফার্সি ভাষায় একেকটি নাম দিয়ে গেয়ে শোনাতেন। গোপাল প্রাচীন ছন্দ প্রবন্ধযুক্ত হিন্দুস্থানী গান গাইতেন , কিন্তু বৈজু বাওরা ধ্রুপদী সংগীতে চার তুক বা কলি বিশিষ্ট ধ্রুপদ গানের প্রথম প্রবর্তন করেন। সেই ধ্রুপদই বিবেকানন্দ শিখেছিলেন, রবীন্দ্রনাথ ঐ ধ্রুপদেই অভ্যস্ত ছিলেন।

উত্তর কলকাতার বিদ্যাসাগর কলেজের স্নাতক সুদীপ পালের জন্ম উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের ঘরানায়। সুদীপ পাল গান শিখেছেন হরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য , ভবানীশঙ্কর মজুমদার, সুবোধ রঞ্জন দে, প্রণব কুমার দে, পঞ্চাননভট্টাচার্য প্রমুখের কাছে। রামকৃষ্ণ মিশনের অনুষ্ঠানে ইমন কল্যাণে আলাপ দিয়ে অনুষ্ঠান শুর সুদীপ পালের। দক্ষিণ ভারতে এই রাগের নাম যমুনা কল্যাণী। অনেকে বলেন পারস্যের ইয়ামন রাগটিকে আমীর খসরু ভারতীয়রাগে পরিবর্তন করেন। বিলাবল রাগের মিশ্রণে এই রাগের সৃষ্টি তাই নামকরণ ইমন কল্যাণ।

এরপর বিভিন্ন আঙ্গিকের ধ্রুপদ পরিবেশন করেন। আকর্ষনীয় ছিল বিষ্ণুপুরী ঘরানার জনক গোপেশ্বর বন্দোপাধ্যায়ের তুহি জগৎ গুরু।ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের বিস্তৃতি লাভ করে বিষ্ণুপুর মল্ল রাজদরবারে। সময়টা সম্ভবত ১৩৭০।ধ্রুপদ গানের বাংলায় প্রচলনের অন্যতম শিক্ষক গোপেশ্বর বন্দোপাধ্যায়। সবশেষে শিল্পী সুদীপ পাল পরিবেশন করেন ধামার ইয়ে কৌন মুরলী বাজাবতা।প্রাচীন যুগের ধ্রুব গানের বিবর্তন ধামার। সম্ভবত স্বামী হরিদাস ধামার গানের সৃষ্টিকর্তা। স্থায়ী, অন্তরা , সঞ্চারী ও আভোগের চারটি স্তবকে এই গান রাধাকৃষ্ণের প্রেমের বর্ণনা পরিবেশিত হয়। এই গানের বৈশিষ্ট্য তালবাদ্যে পাখোয় ব্যবহৃত হয় । তালের নামেই এই গানের নামকরণ । অর্থাৎ ধামার তাল ব্যবহার হয়। প্রতিটির গানে শিল্পীর অধ্যাবসায় ও আন্তরিকতার যুগলবন্দি শ্রোতাদের মুগ্ধ করে। শিল্পীর সঙ্গে সঙ্গত করেন পাখোয়াজ বাদনে রত্নাঙ্কুর মিত্র, হারমোনিয়ামে প্রদীপ পালিত ও তানপুরায় অসীমকুমার পাইন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *