বেশ্যার বারোমাস্য

পর্ব:৪৫

সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়: রূপকথার গল্পে আমরা পড়েছি সুয়ো রাণী আর দুয়ো রাণীর কথা। পুরাণে পড়েছি পাটরাণী আর রাণীর কথা। আসলে পাটরাণী রাজাদের প্রধান স্ত্রী। বাকিরা সোজা কথায় উপপত্নী। রূপকথার সুয়োরাণী অর্থও প্রধান রাণী। বাকিরা দুয়ো। অর্থাৎ উপপত্নী। আরেকটু নির্মম ভাষায় রক্ষিতা। অন্দরমহলে বাস ছিল এই রক্ষিতাদের। খুব বেশিদিনের আগের ঘটনা নয়। বাংলাদেশের লেখক, সাংবাদিক সাযযাদ কাদির তাঁর দিব্য প্রকাশ প্রকাশনার থেকে প্রকাশিত হারেমের কাহিনী জীবন ও যৌনতা গ্রন্থে লিখেছেন, পাতিয়ালার অধিপতি মহারাজা ভূপিন্দর সিং প্রথম যৌবনে প্রেমাচারের জন্য এক প্রাসাদ বানিয়েছিলেন লীলা- ভবন নামে। এই প্রাসাদটি ছিল পাতিয়ালা শহরের ভূপিন্দর নগরআর যাওয়ার রাস্তার ওপর বারাদারি উদ্যানের কাছে। এর প্রবেশপথ ছিল মাত্র একটি। বিশাল লৌহ ফটকের পর উদ্যানের ভেতর দিয়ে গেছে সেই আঁকাবাঁকা পথ। রাস্তা থেকে প্রাসাদের ভেতর কয়েক গজ জায়গা যাতে দেখা যায় সেজন্যই অমন আঁকাবাঁকা করা হয়েছিল পথটি। প্রাসাদের চারপাশের দেয়াল ছিল ৩০ ফুট উঁচু, ও দীর্ঘ ইউক্যালিপ্টাস ও অন্যান্য গ্রীষ্মমন্ডলীয় গাছের সারি। এতেও ভেতরটা হয়েছিল লোকচক্ষুর আড়াল। আঁকাবাঁকা পথ ধরে কয়েকশ’ গজ যাওয়ার পর চোখে পড়ত অপূর্ব সুন্দর এক ফুলের বাগান অমন বাগান সারা ভারতে আর দুটি ছিল না সেকালে।,,,,, ভবনে একটি বিশেষ কামরা ছিল_ যা অভিহিত হতো প্রেম -কানন নামে। এটি বিশেষভাবে নির্দিষ্ট ছিল মহারাজার জন্য। কামরার চার দেয়ালই আবৃত ছিল প্রাচীন ও দুর্লভ ছবিতে।বিখ্যাত শিল্পীদের আঁকা ওই ছবিগুলো আসলে ছিল পুরোপুরি কামকেলি _ বিষয়ক যৌন – আসনের কয়েকশ ভঙ্গি।( পৃষ্ঠা ৯৭)

পাতিয়ালার রাজা ভূপিন্দর সিংয়ের রমণীবিলাস ছিল বহুচর্চিত।

লেখক লিখেছেন , মহারাজা ভূপিন্দর সিং জাঁকজমকপূর্ণ পার্টির আয়োজন করতেন প্রায়ই। অপূর্ব বিলাসের জন্য বিশেষত খ্যাতি পেয়েছিল সে সব পার্টি। বিশেষ বিশেষ উপলক্ষে ওইগুলোতে মহারাজা তাঁর প্রিয় রমণীদের আমন্ত্রণ জানাতেন তাঁর সঙ্গে স্নানে অংশ নিতে। ওই স্নানলীলায় তিনি দু তিনজন বিশ্বস্ত অমাত্য এবং পরিবারের কয়েকজন প্রিয সদস্যদেরও ডাকতেন মাঝে মাঝে। গ্রীষ্মকালে সুইমিং পুলের জন্য পানি আনা হতো নিকটবর্তী খাল ও জলাধার থেকে। আর গরম পানিকে সহনীয় করে তোলার জন্য বরফের বিশাল বিশাল খণ্ড ফেলা হতো তাতে। ওই ভাসমান বরফগুলো ধরে ধরে সাঁতার কাটত পুরুষ ও মহিলা সঙ্গীরা, তাদের হাতেথাকত হুইস্কির গ্লাস। মহিলারা সর্বাঙ্গে সুগন্ধি মেখে সুইমিং পুলে নামতেন , ফলে মিষ্টি গন্ধে ভুরভুর করত পানি।,,,,,,,, লীলা -ভবনের সুইমিং পুল সত্যিই যেন হিমবাহে পরিণত হতো গ্রীষ্মকালে। নেয়ার তাপমাত্রা যখন ১৪৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট, তখন ওই পুলের পানি ৫০ ডিগ্রি ফারেনহাইট ( ১০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড) -এর উপরে উঠতো না। এসব অনুষ্ঠানে কচিৎ আমন্ত্রণ পেতেন কোনো বিদেশি। ওই সময় মোতিবাগ প্রাসাদে যদি কোনও ইউরোপীয় বা আমেরিকান মহিলা থাকতেন মহারাজার অতিথি হয়ে এবং তার সঙ্গে যদি মহারাজার আসনাই থাকত তবে টাকার অনুমতি দেয়া হতো বরফশীতল সেই স্বপ্নসায়রে ভেসে বেড়ানোর।( পৃষ্ঠা ৯৮)

সে যুগে আরব হারেম।

আরবের রাজা উজির ও ধনী সমাজের গন্যমান্যরা নিজেদের আর্থিক ক্ষমতার মত হারেম তৈরি করতেন। বৈদিক যুগের কোন রাজা বা কোন ঋষির আশ্রমে কত গরু অর্থাৎ গো -ধন আছে তার নিরিখে বিচার হত কার কত কৌলিন্য তেমন রাজাদের ক্ষেত্রেও কার হারেমে বিশ্বের কত সেরা সুন্দরীর আছে তার নিরিখে যাচাই হতো রাজার কৌলিন্য। হারেম শব্দটির উৎপত্তি আরবি শব্দ থেমে।করার অর্থ অবৈধ। তুর্কিরা শব্দটিকে পরিচ্ছন্ন করতে শব্দটির সঙ্গে যোগ করে লিক। ফলে তুর্কি ভাষায় বাড়ির যে অংশে মহিলারা থাকেন তার নাম হয় হারেমলিক।ইউরোপেই আবার হারেমকে বলে সেরালিয়ো। ইটালিয়ান ওর ফরাসি ভাষার মিশ্রণে শব্দটির দৃষ্টি। ইটালিয়ান ভাষায় সেররালিয়ন কথার অর্থ বন্যপ্রাণীর খাঁচা। ল্যাটিন শব্দ সেরার মানে গরাদ। হিন্দুদের অন্তঃপুর আর্ট মুসলিমদের হারেম। দুটোরই অর্থ নিরাপদ, সংরক্ষণযুক্ত আশ্রিতা নিবাস যা লোকচক্ষুর আড়ালে। ( চলবে)

পরবর্তী পর্ব শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর,২০২৪

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *