বেশ্যা বারোমাস্যা

পর্ব: ২৫

সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়: আজকের পর্ব শুরু করছি আরতি গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রসঙ্গ দেবদাসী বইএর লেখা থেকে। লেখিকা লিখেছেন,,,,,,,,,,, মনোরঞ্জনই ছিল এই দেবদাসীদের অবশ্য কর্তব্য। এই মনোরঞ্জন রাজার রাজপুরুষদের এবং পুরোহিতদের। প্রধানত পুরোহিতবর্গের চেষ্টায় এবং সহায়তায় এই প্রথাচলে এসেছে যুগযুগান্তধরে। অদ্যাবধি মন্দিরের আশ্রয়ে, দেবতার নামে চলে এসেছে এই নির্লজ্জ নারী মাংসের ভোজ । লেখিকা অবশ্য সমাজতত্ত্ববিদদের এই প্রথার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের কথাও বলেছেন। পাশাপশি এও বলেছেন, বৈচিত্র্যের তথ্য দিতে সমাজতত্ত্ববিদরা যত উৎসাহ দেখিয়েছেন ততটা উৎসাহ দেখান নি এর বীভৎসতার উৎস খুঁজতে। ঐতিহাসিকেরা অধিকাংশই এইসব ব্যাপারে থেকেছেন উদাসীন। দাসপ্রথার বিরূদ্ধে আমেরিকার আব্রাহাম লিঙ্কনের নাম উল্লেখ করেছেন লেখিকা। বর্ণ বৈষম্যের বিরূদ্ধে মার্টিন লুথার কিংয়ের প্রতিবাদী আন্দোলনের কথাও উল্লেখ করেছেন।

ভারতে প্রথম দেবদাসী প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে সফল হন সমাজসংস্কারক ও ডা: মুথুলক্ষ্মী রেড্ডি।

লেখিকা বলেছেন, যে খ্রিষ্টান সম্প্রদায় দাসপ্রথার বিরূদ্ধে প্রতিবাদ করে সেই রাজশক্তিই গড়ে তোলে রোমান সাম্রাজ্য। ধর্মগুরু পোপ নতুন করে শুরু করেন দাসপ্রথা। লেখিকা লিখেছেন ,,,,, দাসত্বের ইতিহাসে সবচেয়ে নির্যাতিত নারী সম্প্রদায়। মানব সভ্যতার যে কোন বিপর্যয়ের সময় নারী জাতিই প্রথম বলি হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। নারীদেহ চিরকালই উপভোগের সামগ্রী হিসেবে চিহ্নিত। সামান্য মানবমর্যাদাও তাই তার কাছে অপ্রাপ্য থেকে গেছে । পণ্যের মত দাসী বিক্রয় করা হয়েছে হাটে। বিংশ শতাব্দীর শেষপ্রান্তেও এই পণ্য ব্যবসাতেও ভাঁটা পড়েনি। তা চলেছে অব্যাহত গতিতে। লেখিকা লিখেছেন ,,,, নারী পণ্যের একটি হাট মন্দির প্রাঙ্গণ। দেবদাসী প্রথা এই হাটের শর্ত। এ প্রথা নতুন নয়। যুগযুগ ধরে চলেএসেছে। ভারতবর্ষে এই দেবদাসী প্রথা ব্যাপক। ভারতীয় নারী সমাজে বহু যুগ ধরেই এই প্রথার প্রভাবে অত্যাচারিত। এক মনস্বিনী মহিলার নেতৃত্বে ১৯২৯ সালে দেবদাসী প্রথার উচ্ছেদ সংগ্রাম শুরু হয়। তারফলে দেবদাসী প্রথা বিলোপসাধনের জন্য মাদ্রাজ বিধানসভায় আইন প্রণয়ন করা হয়।

এই প্রথা নিষিদ্ধ হওয়া ভারতবর্ষের ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। এই মহিলা হলেন ডা: মুথুলক্ষ্মী রেড্ডি। ডা,: রেড্ডি দৃঢ় চিত্তে এই প্রথা অবসানের জন্য চেষ্টা করেন সমাজের সমস্ত বাধা অতিক্রম করে। এছাড়া বোম্বাই বিধানসভায় ডা: হরিজিৎ সিং কৌরও একই চেষ্টা করেন।১৯৪৭ সালে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে দেবদাসী প্রথা নিষিদ্ধ করা হয় আইনের সাহায্যে। কিন্তু দুঃখের বিষয় ভারতে দেবদাসী প্রথা আজও বিলুপ্ত হয়নি। দেবদাসী প্রথার শুরুরইতিহাস প্রসঙ্গে লেখিকা আরতি গঙ্গোপাধ্যায় লিখেছেন,,,,, পৃথিবীর প্রাচীনতম সভ্য দেশ হিসেবে চিহ্নিত মিশর। মিশরের ইতিহাসে আমরা প্রথম দেখি দেবদাসী বৃত্তির সূচনা। প্রাচীন মিশরের দেবতা ছিলেন আমন। মিশরের ফারাও বা রাজারা প্রথমে এই আমন তাঁর স্ত্রী মুই ও তাঁদের পুত্র খনযু বা চন্দ্র দেবতার পুজো প্রচলন করেন । খ্রিস্ট ধর্মের প্রায় ১৪০০ বছর আগে রাজ তৃতীয় আয়েস হোটেপ থিবস নগরীতে মহাসমারোহে মন্দির নির্মাণ করে এই ত্রিদেবতার মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন। তবে এর আগে থেকেই বিভিন্ন ফারাও এই মন্দির প্রতিষ্ঠার কাজ চলত থাকে। মধ্য এশিয়ার বিভিন্ন ন্ডেশ থেকে বিপুল পরিমাণে ধনরত্ন নিয়ে এসে ঐশ্বর্য্যের নিরিখে দেবমন্দির নির্মাণ ও ভোগের উপকরণের জন্য দাসদাসী, ভূসম্পত্তি ও রত্নরাজি জড কর হয়। মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণকারী পুরোহিতও যথেষ্ ক্ষমতার অধিকারী হন। ( চলবে)

পরবর্তী পর্ব: আগামী শুক্রবার ১২ জুলাই

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *