বেশ্যার বারোমাস্যা

পর্ব: ২১

সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়: এই পর্বের বিষয় সমকাম। নারীর সমকাম। বিষয়টি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা তৈরি করতে প্রথমে নির্মল কুমার বন্দোপাধ্যায় স্বদেশচর্চা লোক শারদ ২০১৬ সংখ্যায় কাম ও কামনার বহ্নিশিক্ষা নারীর শরীর শীর্ষক প্রতিবেদনে কি লিখেছেন সেটা একটু দেখে নেওয়া যাক। লেখক লিখেছেন,,,,,,,,, পায়ের নখ থেকে মাথার চুল পর্যন্ত _ সৌন্দর্যের কারুকার্য। প্রতিটি অঙ্গে কাম _ কামনার বহ্নি, যা তীব্র আকর্ষণীয়। আকর্ষণীয় কী কেবল নারীর অঙ্গসৌষ্ঠভ, নারীর রূপ? এর চেয়েও তীব্র আকর্ষণীয় মেয়েদের বুক, তার দুই স্তনযুগল । পত্রপুটে ঢাকা অনাঘ্রাত দুটি ফল। মেয়েদের বয়সের সাথে সে স্তনযুগল কখন কেমনভাবে ফোটে, কী অবস্থায় থাকে, সে খবর আছে পুরুষের কাছে_ যে স্তন নিটোল, দুধের আধার, কিংবা লাবণ্যের , তার নাম পয়োধর। যে যৌবনের নির্ঘোষ , যাকে কিছুতেই চেপে রাখা যায় না, তার নাম উরসিজ কিংবা উরজ কিংবা উরসিরুহ। যে স্তন সবে ফুটেছে জীবনানন্দ যাকে বলেছেন, কিশোরীর স্তন, তার সংস্কৃত নাম কুচকলিকা। সেই স্তনই যখন উগ্র হয়, তখন তার নাম কুচকুম্ভ ।

লেখক বলেছেন, দু দুটি গৃহ যুদ্ধ, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও পরবর্তী সময়ে মেয়েদের শিক্ষার সুযোগ, এছাড়া আর্থিক স্বাধীনতা কিছু মেয়েদের করায়ত্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নারী নিজের অস্তিত্বের দাবিদার হল। ফলে যৌনতার ভোগদখল একতরফা আর পুরুষের অধিকারে থাকল না। হিন্দু ধর্মে যৌনতা নিয়ে বিশেষ করে মেয়েদের যৌন স্বাধীনতা নিয়ে প্রচন্ড রক্ষণশীল। অথচ পুরাণে এমন বহু ঘটনা আছে যেখানে নারীর যৌন স্বাধীনতা উল্লেখ হয়েছে। যেমন ভগীরথের জন্ম কাহিনী। দেবলোকে আগেই স্থির হয়েছিল রঘু বংশে স্বয়ং বিষ্ণু জন্ম নেবেন। কিন্তু রঘু বংশের নিঃসন্তান রাজা দিলীপের হঠাৎ মৃত্যুতে সেই দিন বিধান মিথ্যে হতে চলে। প্রয়াত রাজা দিলীপের স্ত্রী যদি গর্ভবতী না হয় তবে সন্তান হবে কিকরে? সন্তান না হলে সেই বংশে ভবিষ্যতে রামচন্দ্র আবির্ভূত হবেনই বা কি করে? দেবাদিদেব মহাদেবের বরে রাজা দিলীপের দুই স্ত্রী যৌন মিলন করেন। ফলে ভগীরথের জন্ম। এই যদি রামায়ণের পূর্বকথা হয় আর রামায়ণ রচনার কাল যদি ১৪ শতক হয়, তখন যে নারীর সমকাম ছিল তা প্রমাণ হয়।

ইংরেজিতে নারী সমকামীদের লেসবিয়ান বলা হয়। লেসবিয়ান শব্দটি গ্রিক দ্বীপ লেসবোন । খ্রিস্টপূর্ব ৬ শতাব্দীতে কবি সাফো এই দ্বীপেই জন্মান। বিভিন্ন প্রাচীন লেখ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে ঐতিহাসিকেরা বলেন , একদল তরুণীকে সাংস্কৃতিক চর্চার জন্য কবি সাফোর সঙ্গে ছিলেন। কবিররচনায় সেযুগের মেয়েদের অনেক তথ্য তিনি লিপিবদ্ধ করেছেন। যুগে যুগে পুরুষ ঐতিহাসিকের অধিকাংশ মনে করেছেন নারীর সমকামিতা উন্মাদনার ফসল। নারীবাদী লেখিকা নাওমি ম্যাককর্মিকের বক্তব্য, নারীর যৌনতা পুরুষের দ্বারা নির্মিত , যাদের লেসবিয়ান যৌন অভিমুখতার প্রাথমিক নির্দেশক হল অন্য নারীদের সাথে যৌন অভিজ্ঞতা। নারী সমকামিতার চল দেশে প্রকাশ্যে শুরু হতেই সেই প্রভাব চলচ্চিত্রে পড়বে এটাই স্বাভাবিক।১৯৯৮ সালে নভেম্বর মাসে রিলিজ করে দীপা মেহেতার ছবি ফায়ার। মূল দুই চরিত্রে ছিলেন শাবানা আজমি ও নন্দিতা দাস । মজার কথা ছবিটি রিলিজ হতেই উদার চিন্তার মানুষ যেমন ছবিটি গ্রহণ করেন, তেমন গোঁড়া রক্ষণশীল মানুষ সর্বসমক্ষে ছবির তীব্র সমালোচনা করলেও লুকিয়ে ছবিটি দেখতে যান নিষিদ্ধ বস্তু আস্বাদনের মনস্তাত্ত্বিক বিক্রিয়া থেকে।( চলবে)

আগামী পর্ব: ২২ শুক্রবার ২৮ জুন ,২০২৪

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *