পর্ব:১৩৬

রাজ দরবারে গণিকা।
সুজিৎ চট্টোপাধ্যায় : বৈদিক যুগে গণিকারা শুধু যৌনকর্মী ছিল তেমন নয়। শ্রেণী অনুযায়ী গণিকারা রাজার ছত্রধারী, ভৃঙ্গার, ব্যজন বহনকারিণী এবং শিবিকা ও পীঠিকাস্থিত নৃপতির পরিচর্যাকারিণী গণিকাগণ প্রথম , মধ্যম এবং উত্তমভেদে তিনশ্রেণীভূক্ত হবে। গণিকা যদি দুর্ঘটনায় বা বৃদ্ধা বয়সে রূপ হারালে তাকে মাতৃকা করা হতো। অর্থাৎ সেই গণিকা আর তখন উপভোগ্যা থাকে না। সেই নারী পরিণত হবে গণিকাদের মাতৃস্থানীয়া।

গণিকাদের সর্ম্পকে কিছু নীতি নির্ধারণ করেছিলেন চাণক্য।
গণিকারা মনে করলে রাজকর্মী হিসেবে কাজ ত্যাগ করতে পারত। সেক্ষেত্রে নিস্ক্রয় অর্থাৎ রাজকার্য থেকে মুক্তির মূল্যস্বরূপ রাজাকে চব্বিশ হাজার পণ ( ৮০ কড়ি) দিতে হতো। গণিকা পুত্রকে আট বছর বয়স থেকে রাজার কুশীলবের কাজ করতে হতো। কুশীলব অর্থাৎ চারণ । গণিকাপুত্রের নিষ্ক্রয় মুল্য ছিল ২০০০ পণ। গণিকাদাসী ভগ্ন স্বাস্থ্যের হলে অর্থাৎ ভোগীর যোগ্যতা হারালে রাজার মহানসে অর্থাৎ রান্নাঘরে কাজ করতে হত। যদি কোনো গণিকাদাসীকেকেউ সম্ভোগের উদ্দেশ্যে অবরুদ্ধ করে রাখত, তাহলে সেই দাসীকে মাসিক কিছু বেতন দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন চাণক্য।

ললিতবিস্তার গ্রন্থ
গণিকার উত্তরাধিকারী গণিকার অর্জিত ধন সম্পদের দাবিদার হতে পারত। তবে সেই ধন সম্পদের হিসাব রাখত গণিকাদের প্রধান। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় গণিকা নিজের দেহদানের প্রতিদানে অর্জিত অর্থ নিজের ইচ্ছেমত খরচ করতে পারত না। অতিব্যয় করলে প্রধান গণিকা বাধা দিত। গণিকারা যে যে শাস্ত্রানুযায়ী প্রশিক্ষণ দেওয়া হ’ত তার সাক্ষ্য বহন করত ধ্রুপদী সাহিত্যের কিছু গ্রন্থ। কোনো এক অজ্ঞাতনামা লেখকের রচিত বৌদ্ধ গ্রন্থ ললিত বিস্তরে উল্লেখ আছে রাজা শুদ্ধোধন পুত্র গৌতমের জন্য এমন একটি কন্যার সন্ধান করেছিলেন যে শাস্ত্রে বিধিজ্ঞকুশলা গণিকার মত হবে। (চলবে)
পরবর্তী পর্ব শুক্রবার ৮ আগস্ট,২০২৫
