হাওড়ার আলমপুরে ২০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠান পালন করল শিশমহল

*

শ্রীজিৎ চট্টরাজ : রবীন্দ্রনাথের রসিক মন চিরকুমার সভায় লিখলেন, দেশে অন্ন জলের হল ঘোর অনটন, খাও হুইস্কি সোডা আর মুরগি মটন। আবার অন্যত্র লিখেছেন, অভয় দাও তো বলি আমার উইশ কি? একটি ছটাক সোডার জলে বাকি তিন পোয়া হুইস্কি। ঠাকুর পরিবার নিয়ে তো প্রবাদ ছিল , ওঁরা দুধে আর মদে থাকেন বলে গায়ের রং অত ফর্সা। স্বয়ং বিবেকানন্দও নাকি প্রথমবার আমেরিকা গিয়ে বিফ স্টেক যেমন চেখে দেখেছেন, তেমনই উইলসন হোটেলে চেখে দেখেছেন মদিরার স্বাদ। ধনধান্যে পুষ্পে ভরা রচয়িতা ডি এল রায় স্ত্রী বিয়োগে কাতর হয়ে নাকি হুইস্কির শরণাপন্ন হয়েছিলেন। সেযুগের সাংবাদিক হিন্দু পেট্রিয়টের সম্পাদক হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ও এভারেস্টের উচ্চতা গণনা করে যিনি বিষ্ময় সৃষ্টি করেছিলেন সেই রাধানাথ শিকদার নাকি মেপে দেখতেন ক পেগে নেশা হয়।

লেখক ও মহাভারত অনুবাদক রাজশেখর বসুর মদে আসক্তি ছিল ১৬/১৭ বছর বয়স থেকে। এছাড়া মহাভারতের আর এক অনুবাদক কালীপ্রসন্ন সিংহ , বঙ্কিমচন্দ্র, শরৎচন্দ্র , হেমচন্দ্র, নবীনচন্দ্র থেকে আধুনিক যুগের দুই সমরেশ, শক্তি, সুনীল কে না মজেছে সুরাপানে? ইংরেজরা কিন্তু তাদের শাসনের প্রথম যুগে দেশি মদের সঙ্গে বিলেতি মিশিয়ে খেতেন। এসব মিলত ছোট ছোট সরাইখানায়। বলা হত পাঞ্চহাউস। স্কচ আসার আগেই এদেশে এসেছে বিয়ার। বিয়ার মিলত পাবে। ইংরেজ আর নব্য বাঙালি বাবুদের সুরাপ্রীতি দেখে উইলিয়াম বার্কেল নিজের বাগানবাড়িতেই খুলে ,ফেলেন সরাইখানা। নাম দিলেন লন্ডন হোটেল। তবে হোটেল বলতে যা বোঝায়, কলকাতায় প্রথম কেরানি পাড়ায় শুরু স্পেন্সার হোটেল। সময়টা ১৮৩০। ১৮৬০ এ তৈরি গ্রেট ইস্টার্ন। এরপর ধর্মতলার মোড়ে চৌরঙ্গী হোটেল , কলকাতার মেট্রো গলিতে ব্রিস্টল, বেলভিউ, টেম্পল বার , ওয়াটারলু বার , ডেকার্স লেনের মেট্রোপোল ।১৮৩৩ এর কলকাতায় এসে গেছে বিলেত থেকেজাহাজে করে বরফ। সাধারণ মানুষের ধরা ছোঁয়ার বাইরে তার দর। বরফে হাত দিলেই হাত পুড়ত । ইতিমধ্যে আম বাঙালিও মদ খেতে শিখে গেছে। ওষুধের দোকান বা ডাক্তারের চেম্বারেও বেআইনিভাবে বিক্রি হত মদ। মেয়েরাও মদে মন দিয়ে ফেলে। এসবের বিবরণ মেলে আলালের ঘরে দুলাল, সধবার একাদশী, মদ খাওয়া বড় দায়, জাত থাকার কি উপায় প্রহসন প্রক্রিয়ায়।

এরপর সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কলকাতা যত বড় হয়েছে , হোটেল বারের সংখ্যাও বেড়েছে।সে অর্থে কলকাতার চেয়ে প্রাচীন হাওড়া শহর অনেক পিছিয়ে। তবে গত তিরিশ বছরে হাওড়া শহর শুধু নয়, হাওড়া জেলা বলতে শুরু করে দিয়েছে হাম কিসিসে কম নেহি। মৌরিগ্রাম পেরিয়ে আলমপুর মোড়ে গত ২০ বছর ধরে সুরাপ্রেমীদের রসনা তৃপ্ত করে আসছে শিশমহল বার। কর্ণধার ওমপ্রকাশ সাউ। মধ্য পঞ্চাশের নিপাট ভদ্র মানুষ। মঙ্গলবার পালন করলেন বারের ২০ তম প্রতিষ্ঠা দিবস। গ্রাহক বন্ধুদের সঙ্গে ব্যবসায় জড়িত বিভিন্ন কোম্পানির সেলস বিভাগের ব্যক্তিত্ব ও শুভানুধ্যায়ীদের নিমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। ছিল বার সিঙ্গারদের অনুষ্ঠান। বারের প্রতিটি কর্মীদের, শিল্পীদের , ব্যবসায়িক সহযোগী ব্যক্তিত্বদের জানালেন উত্তরীয় ও স্মারক দিয়ে সম্মান।

সবচেয়ে চমক ছিল ওমপ্রকাশ বাবুর ব্যবসায় গত ৪০ ও ২৫ বছর যে দুই কর্মী কর্তব্য পালন করে অবসর নিয়েছেন সেই নীহাররঞ্জন কোলে ও বাবলু হাজরাকে সম্মানিত করা। ১ লক্ষ ১ হাজার টাকা আর্থিক মূল্য দিয়ে তাদের সম্বর্ধনা দিলেন ওমপ্রকাশ সাউ।অন্যান্যদের মধ্যে যাঁদের সম্বর্ধনা দেওয়া হয় তাঁদের মধ্যে ছিলেন- দেবাশিস বাগ, সাংবাদিক সন্তোষ তিওয়ারি, আলোকচিত্রী রাজেন বিশ্বাস, পরমেশ্বর সিং, তাপস শেঠ, সুজয় দত্ত , অমিতাভ মিত্র, দেবজিৎ দাস, আনন্দ কুমার, অভিষেক মুখার্জি, সুদীপ্ত দত্ত, সৌম্যজিৎ গুহ, কুমার অভিষেক, অভিষেক দাস, জ্যাকব সাউ, সুরজিৎ দাস, অমল দাস, তপন দাস, দীনেশ জঙ্গিত, গৌতম সাহা, অমিতাভ, দেবজিত দুয়ারী, দীনেশ পোড়েল, দীপু সাহ, রণদীপ, অর্ণব যাদব, দীপু মাঝি প্রমুখ। সম্মানিত করেন কর্ণধার ওমপ্রকাশ সাউ এবং আগামী প্রজন্মের দায়ভার যিনি সামলাবেন পুত্র বিক্রম সাউ। ওমপ্রকাশ বাবু জানালেন, স্থানীয় প্রশাসন ও গ্রাহক বন্ধুদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে নিবিড়ভাবে। আমরা কলকাতার নিউটাউনে তিনতারা হোটেল অ্যারেস্ট্রোক্রেট অধিগ্রহণ করেছি।অংশীদারি ভিত্তিতে দ্রুত সেই হোটেল চালু হবে নতুন আঙ্গিকে।৯৬ টি রুমসহ তিনটি ব্যাংকোয়েট ও একটি সুইমিং পুলযুক্ত হোটেল আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *