শ্রীজিৎ চট্টরাজ : ফরাসি চিন্তাবিদ ব্লেজ পাস্কাল বলেছিলেন , মেন আর সো ইনভাইটাবিলিটিম্যাড দ্যাট নট টু বি ম্যাড উড বি টু গিভ এ ম্যাড টুইস্ট টু ম্যাডনেস। দুনিয়ায় প্রতিটি মানুষই অমোঘ ও অব্যর্থ উন্মাদ। কথাটা মিথ্যে নয়। প্রতিটি মানুষই কোথাও না কোথাও চন্দ্রাহত। এই উন্মাদনার সূত্র খুঁজে চলেছেন বিজ্ঞানীরা। প্রতিভাবানদের ত্বকে তাপমাত্রা বেশি , শরীরে কর্টিকোস্টেরয়েড হরমোন ক্ষরণের মাত্রাও নাকি সাধারণের তুলনায় বেশি। ফলে প্রতিভাবানদের শরীরের স্নায়ুতন্ত্র সাধারণের তুলনায় বেশি সক্রিয়। ফলে এই স্নায়ুর পরিবেশ থেকে গ্রহণীয় বিভিন্ন তথ্য ঠিকঠাক পরিশ্রুত না করেই পৌঁছে দেয় মস্তিষ্কে।
২০০২ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমীক্ষা বলেছিল , ভারতে ১০০ কোটি মানুষের পাঁচ কোটি মেজর ডিপ্রেসিভ ডিসঅর্ডারে ভুগছে ।প্রতি বছর বিশ্বে আত্মহত্যা করেন ১১ লক্ষ মানুষ।১১ শতাংশ ভারতে। শীর্ষে এ রাজ্য। শতকরা ১৩ ভাগ।প্রতিটি বিচিত্র বিশ্ব মানসিক স্বাস্হ্য দিবস পালিত হয় ১০ অক্টোবরচলতি বছরে নিয়েলসেন আই কিউ ও আই টি সি একটি সমীক্ষা করে জানিয়েছে , নিজের বিক্ষিপ্ত মনের কথা ৮১ শতাংশ মানুষ লুকিয়ে রাখেন । যা মানসিক চিকিৎসার ক্ষেত্রে নেতিবাচক দিক। আর একটি সমীক্ষা বলছে জীবন জীবিকার সংগ্রামে অস্তিত্ব সংকটে মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে অজ্ঞানতা একটি মৌলিক সমস্যার হিসেবে বিশ্বের সঙ্গে ভারতীয় মত উন্নতকামী দেশেও বাড়ছে। এই প্রেক্ষিতে আবুধাবি নিবাসী বঙ্গসন্তান কর্পোরেট জগতের মানুষ হিসেবে জয়দীপ চক্রবর্তী নিজস্ব কিছু অভিজ্ঞতার নিরিখে একটি স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবির কাহিনী রচনা করে প্রযোজনার সিদ্ধান্ত নেন। পরিচালক নির্বাচিত করেন পায়েল চৌধুরীকে।
পায়েল ইতিমধ্যেই বেশকিছু তথ্যচিত্রে হাত পাকিয়ে কাহিনিধর্মী চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছেন। সোমবার সন্ধ্যায় কলকাতা প্রেসক্লাবে প্রযুক্তিবিদ জয়দেব চক্রবর্তী সাবিত্রী প্রোডাকসনের ব্যানারে এক ঘণ্টার একটি স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি ফিনিক্স এর ট্রেলার ও সঙ্গীত মুক্তি ঘটালেন। সাংবাদিক সম্মেলনে প্রযোজক জয়দীপ চক্রবর্তী জানান, বিশ্বব্যাপী মানসিক স্থিতিশীলতা হারানো মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। এই ছবির মধ্য দিয়ে সমাজের কাছে একটি রক্ষাকবচ হিসেবে উপস্থাপন করছি। তাই ছবির ভাষা হিসেবে ইংরেজি বেছে নিয়েছি। বিশ্বের বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবছবিটি অন্তর্ভুক্ত করার ইচ্ছে। প্রাইজ পাওয়া উদ্দেশ্য নয়। মেসেজ পৌঁছে দিতেই সেটা করছি।
পরিচালক পায়েল জানালেন, একটু ভিন্নধর্মী ছবি তৈরিতে আমার নজর। ফলে এই জটিল একটি বিষয় নিয়ে ছবি করতে গিয়ে প্রযোজকের সাহায্য যেমন পেয়েছি তেমন নিজেও সাধ্যমত পড়াশোনা করেছি। ছবির একজ মনোবিদ চরিত্রে আমি বোধিসত্ত্ব মজুমদারকে ভেবেই চিত্রনাট্য রচনা করেছি। প্রবীণ ও অভিজ্ঞ শিল্পী বোধিসত্ত্ব মজুমদার বাংলা ছবি ও সিরিয়ালে অভিনয় যেমন করেন তেমন বেশ কয়েকটি হিন্দি ছবিও করেছেন। তাঁর মন্তব্য প্রথমে ভেবেছিলাম কলকাতায় ইংরেজি ছবি তৈরির লক্ষ্য থেকে সরে হয়ত বাংলায় হবে। কিন্তু প্রযোজক ও পরিচালক দৃঢ়তার সঙ্গে ছবিটি ইংরেজিতে বানালেন। একটি সফল প্রচেষ্টা। মানুষ দেখলে একটু ভাববে।
ফিনিক্স একটি গ্রিক পুরাণের পাখি। যার অর্থ গাঢ় লাল। গ্রিক শব্দ ফাইনিক্স থেকে। একটি পাখি যে শত শত বছর বেঁচে থেকেও আগুনে পুড়ে ছাই হয়। আবার নতুন জীবন ফিরে পায়।ছবির বিষয় তেমনই একটি মেয়ের অবসাদ থেকে উত্তরণের গল্প। ডিপ্রেশন ও ডিমেনশিয়া সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারণা সাধারণ মানুষ পাবেন। এমনটাই জানালেন প্রযোজক। ছবিটি প্রথমে নজরুল তীর্থ প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে নতুন বছরের প্রথম মাসের মাঝামাঝি। তারপর ও টি টি প্ল্যাটফর্মে। ছবিতে অভিনয়ে আছেন বোধিসত্ব মজুমদার , ত্রিপর্ণা বর্ধন, রোশনি, পায়েল, ইন্দ্রজিৎ, সরোজ, সৌমিত সুকন্যা। ছবির একটি গান সানশাইন অফ দ্য লাইফ লিখেছেন প্রযোজক স্বয়ং। এদিন ছবির ট্রেলার ইউটিউবে যুক্ত হয়। ছবির বেশকিছু বহিদৃশ্যের শুটিং হয় মন্দারমণিতে। এখন অপেক্ষা এমন একটি জটিল বিষয়কে আমজনতার দরবারে হাজির করার প্রয়াস কতটা ফলপ্রসূ হয়।