পর্ব: ৩৫
বৈদিক যুগে বিক্রিত নারীর জীবন ছিল অসহায়গ্রস্থ
সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়: পর্ব ৩৪ এ জানিয়েছি সুকুমারী ভট্টাচার্য বিশ্লেষণ করে তাঁর নারী ও সমাজ গ্রন্থে যুদ্ধে বন্দিনী নারীদের গণিকা তৈরির কাজ হত অনেক কাল আগে থেকেই। বৈদিক যুগ , সত্যযুগ বলে যে সময়টা কল্পনা করা হয় সেই প্রাচীন যুগেই। এখন উল্লেখ করছি বিশিষ্ট লেখক কঙ্কর সিংহ তাঁর ধর্ম ও নারী গ্রন্থে প্রাচীন ভারতে গণিকা নিবন্ধে কি লিখেছেন।
ব্রাহ্মণদের দানে পাওয়া গণিকা সম্ভোগ।
তিনি লিখেছেন,,,,, স্মৃতিশাস্ত্রকারগণও পুরুষের গণিকা সম্ভোগের ওপর কোনও বাধা নিষেধ আরোপ করেননি । তাঁরা শুধু বারাঙ্গনা গমনে বর্ণধর্ম রক্ষা করতে বলেছেন। তার সরল অর্থ সব বর্ণের নারীরা এই জীবিকায় ছিল শাস্ত্রকাররা বলেছেন ব্রাহ্মণরা সব বর্ণের বারাঙ্গনাদের সম্ভোগ করতে পারবে। অন্যবর্ণের পুরুষরা নিজ বর্ণের ওপরের উচ্চবর্ণের বারাঙ্গনার ঘরে যেতে পারবে না। স্মৃতি শাস্ত্রকাররা আরও নির্দেশ দিয়েছেন উচ্চ বর্ণের পুরুষ নিম্নবর্ণের বারাঙ্গনাকে সম্ভোগ করার অধিকার থাকলেও তার গৃহে অন্নগ্রহণ করতে পারবে না। অন্ন পাপ হল সবচেয়ে বড় পাপ। গণিকাগমনেও সেই পাপ পুরুষরা করতে পারে না।
বাৎস্যায়নের কামসূত্র গ্রন্থে নির্দেশ আছে গণিকারা কেমন ক্রেতাকে দেহ বিক্রি করবেন।
আশ্চর্যের কথা, সেযুগে গণিকারা কি ধরণের ক্রেতা বেছে নেবে তারও নির্দেশ দিয়েছেন কাম শাস্ত্রের রচয়িতা বাৎস্যায়ন। তরুণ, ধনী , পারিবারিক দায়িত্ব যার নেই , উচ্চ পদস্থ সদ্বংশজাত, প্রাণবান, শিক্ষিত, কবি, গাথা কাহিনী উপাখ্যানে কুশল, বাগ্মী , নানা কলায় পারদর্শী, সুরাসক্ত, বন্ধুভাবাপন্ন নারীসঙ্গকামী কিন্তু কোনো নারীর বংশবদ নয়, নিষ্ঠুর বা ঈর্ষাকাতর নয় এমন খদ্দের।( কামসূত্র ৬/১/১০,১২)।
রাজা ভগীরথ অজস্র তরুণী দান করে ব্রাহ্মণ সমাজে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন
প্রাচীন পুরাণ কাহিনী ঘাঁটলে মিলবে বিষ্ফোরক সব তথ্য। সে যুগে অতিথি আপ্যায়নে ভোগ্যবস্তুর সঙ্গে অসংখ্য তরুণী ব্রাহ্মণ ও রাজন্যবর্গদের মধ্যে বিতরণ করেন। বিষয়টা সমাজস্বীকৃত গর্বের ছিল। রাজা ভগীরথ তরুণীদানের জন্য বিখ্যাত ছিলেন। সাগরদ্বীপে গঙ্গাদেবীর সঙ্গে তিনি আজও পূজিত হন। শাস্ত্রে বলা আছে যত এমন তরুণী দান হবে স্বর্গে পুণ্য জমা হবে। সেযুগে পিতৃপুরুষেরশ্রাদ্ধে তর্পণে, যজ্ঞে হাজার হাজার সুন্দরী তরুণী পুরোহিতদের দান করা ছিল পুণ্যের কাজ। রামায়ণ মহাভারতে প্রচুর উল্লেখ আছে। তবে ব্রাহ্মণ পুরোহিতদের পক্ষে দানে পাওয়া এত তরুণীর ভরণপোষণ করা সম্ভব হত না। তখন বাছাই করা কয়েকজনকে রেখে বাকিদের গরু ছাগলের মতোই বিক্রি করে দেওয়া হত। এভাবেই হাত বদল হত মেয়েরা। একসময় যৌবন ও সৌন্দর্য হারিয়ে দাসী হিসেবে জীবন নির্বাহ করতে হত। এরপর বলব সেই বৈদিক যুগের রাজাদের নারীভোগের উপাখ্যান।( চলবে)
পরবর্তী পর্ব , আগামী শুক্রবার ১৬ আগস্ট