পর্ব: ১৫০

শিখণ্ডী ছিল সমকামী।
সুজিৎ চট্টোপাধ্যায় : গত পর্ব থেকে সমকামী ও উভকামী যৌনকর্মীদের সম্পর্কে আলোচনা শুরু করেছি। হিন্দু যৌনশাস্ত্র প্রণেতা বাৎস্যায়ন সমকামিতা ও উভকামিতা সমর্থন করেননি। কিন্তু রামায়ণ , মহাভারতে সমকামিতা উল্লেখ আছে। রামায়ণে হনুমান লঙ্কার অশোকবনে সীতার খোঁজে গিয়ে চুম্বনরত রাক্ষসীর দেখেছিলেন। মহাভারতের চরিত্র দ্রুপদপুত্র শিখণ্ডী ছিলেন অন্তরে নারী, দেহে পুরুষ। স্বভাবতই সমকামী। স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও যৌনসুখ অনুভব করতেন পুরুষ সান্নিধ্যে। এই মহাভারতে আছে মৌষল পর্ব। যেখানে কৃষ্ণের পুত্ররা ও দ্বারকাবাসী সমকামিতায় মেতে ধ্বংস হয়। ধর্মীয় শাস্ত্রে যেহেতু সমকামিতায় প্রজনন ব্যাহত হয়, তাই ছিল নিষিদ্ধ। সমকামিতায় বংশরক্ষা, সৈন্যবল ব্যাঘাতপ্রাপ্ত হওয়া ছিল বিঘ্নের কারণ।

খাদ্যের সন্ধানে পরিশ্রম ছিল কষ্টকর। ফলে মানব সভ্যতার প্রথম স্তরে যৌনতা ছিল অনিয়মিত একটি প্রক্রিয়া।
এত কিছুর মূল কারণ যৌন ক্ষুধা। এই সর্ম্পকে স্বদেশচর্চা লোক শারদীয় ২০১৬ সংখ্যায় একটি প্রতিবেদন লিখেছেন লোকেশ্বরে বিশ্বাস। প্রতিবেদনটির নাম লোকসংস্কৃতি ও যৌনক্ষুধা।( পৃষ্ঠা : ৪৩০)লেখক লিখেছেন, সভ্যতার ঊষালগ্ন থেকে মানুষের তিনটি চাওয়া পাওয়া ছিল। নিজগোষ্ঠীর মেয়েরা প্রচুর সন্তানদের জন্ম দিক, গৃহপালিত পশুপাখিও বিপুল পরিমানে বাড়ুক। গোষ্ঠীর দখলে থাকা জমিতে ফসল বাড়ুক।

আগুনের আবিষ্কার মানুষকে চেতনার উন্মেষ ঘটালো।
তবে পুরুষদের কাজ ছিল শিকার করা। মেয়েদের কাজ ছিল জঙ্গলে ফল মূল আরোহণ করা। সন্তান প্রতিপালন। তবে পুরুষরা শিকার করে ক্লান্ত হয়ে পড়ত। গুহায় ফিরে খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে পড়ত। ফলে নারী পুরুষের দৈহিক মিলন অনিয়মিত ছিল। মস্তিষ্ক তাই ধীরে ধীরে ক্রিয়াশীল হতো। একটা সময় এলো নবপ্রস্তর যুগ । আগুনের উৎস হলো দাবানল ও প্রাকৃতিক উৎস। মানুষ আগুনের ব্যবহার শিখল। এই সময়ের আগে পর্যন্ত নারী পুরুষের যৌনতা ছিল অন্য দৈনন্দিন কাজের মত। ক্রমশ চিন্তার স্তর বিকাশে সৃষ্টি হলো যৌন চেতনাবোধ। (চলবে )
আগামী পর্ব ২৮ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার,২০২৫

******
