পর্ব : ৭৬

মনুর বিধানে পতিত ক্ষত্রিয়ের পুত্রকেও নট বলা হয়েছে।
সুজিৎ চট্টোপাধ্যায় : গত পর্বে নট নটী সম্পর্কে আলোচনা শুরু করেছিলাম। তথ্য সূত্র হিসেবে উল্লেখ করেছিলাম সুরেশচন্দ্র বন্দোপাধ্যায় ও রমলাদেবী লিখিত ভারতীয় সমাজে প্রান্তবাসিনী,, গ্রন্থ। সেখানে লেখকদ্বয় লিখেছেন, ,,,,, নৃৎ ধাতু নিষ্পন্ন নট শব্দে বোঝায় অভিনেতা বা নর্তক। পতিত ক্ষত্রিয়ের পুত্রকেও বলা হ’ত নট ( মনু ১০/২২)। সঙ্গীতে একটি রাগের নাম নট; সম্ভবত: নটেরা এই রাগেই অধিকাংশ সময গান গাইত। নট বোঝাতে শৈলূষ শব্দের অন্যান্য অর্থের মধ্যে আছে গায়ক, (অভিনেতৃ?) দলের নেতা, ঐক্যতান সঙ্গীতে তালরক্ষক। বৈহাসিক বা প্রহসনের অভিনেতাকেও শৈলূষ নামে অভিহিত করা হ’ত। দুর্বৃত্ত বোঝাতেও এই শব্দের প্রয়োগ আছে।

পাণিনির বিধানেও নটনটীদের অবজ্ঞার কথা আছে।
লেখকদ্বয় আরও লিখেছেন, নানা প্রাচীন গ্রন্থে নট শব্দটির উল্লেখ আছে; যথা পাণিনি ( আ: খ্রী: পূ: ৪ র্থ শতক) ৪/৩/১১০,১২৯; মহাভাষ্য ( আ: খ্রী: পূ: ২ য় শতক) ১/৪/২৯,২/১/৬৯,৩/৬/৭,৫/২/৯৫,৬/১/২। অমরকোষ ( আ: খ্রিস্টীয় ৪র্থ শতক) শৈলূষকে জায়া জীব রূপে বর্ণনা করা হয়েছে। শব্দরত্নাবলী’তে শৈলুষ শব্দের প্রতিশব্দ আছে ধূর্ত তালধারক। রামায়ণ ( ৪/৪১/৪৩) মহাভারতে ( ২/১০/১৬) কিন্তু শৈলুষ শব্দটি এক গন্ধর্বের নাম হিসেবে আছে। সংস্কৃত নাট গ্রন্থের প্রস্তাবনায় নটীর সঙ্গে আমাদের প্রায়ই সাক্ষাৎকার হয়। তিনি সাধারণত: গান গেয়ে থাকেন। নটী শব্দটিরও সুপ্রাচীন। পাণিনি (৪/৩/১১০) নটসূত্রের উল্লেখ করেছেন। সুতরাং , নটী অন্তত: খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ শতকে বা তারও পূর্বে সমাজে বিরাজিতা ছিলেন। নটনটীদের সর্বযুগেই অবজ্ঞার চোখে দেখা হ’ত। অর্থশাস্ত্রে (খ্রী: পূ: ৪ র্থ শতক) নটী বা রঙ্গোপ জীবিনীকে গণিকার পর্যায়ে গণ্য করা হয়েছে। বিবিধ গ্রন্থে উল্লেখ আছে যে, অভিনেতারা স্ত্রীকে অন্য পুরুষের ভোগের জন্য দিয়েঅর্থোপার্জন করত।( চলবে)
আগামী পর্ব ৬ জানুয়ারি ২০২৫

********