বেশ্যার বারোমাস্যা

পর্ব: ৬৯

কৌটিল্যের বিধানে আট প্রকারের বিবাহ প্রথা ছিল।

সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়: আগের পর্বে বৌদ্ধ যুগে নারীর সামাজিক অবস্থান সম্পর্কে কিছু জানিয়েছি। কৌটিল্যের নির্দেশ থাকলেও বিয়ের বয়স নিয়ে কিছু বিধান থাকলেও কঠোরভাবে যে মানা হত এমন ভাবার কোনো কারণ নেই। লেখক কঙ্কর সিংহ তাঁর্ট ধর্ম ও নারী গ্রন্থে ১৩৯ পৃষ্ঠায় লিখেছেন,,,,,, কৌটিল্য মনে করেন প্রথম চারপ্রকারের বিবাহ ব্রাহ্ম, দৈব, আর্য ও প্রজা পত্য হল ধর্মবিবাহ। এই চার প্রকার বিবাহে কন্যার পিতার সম্মতি আবশ্যক। পিতৃ প্রমানাশ্চত্বার পূর্বে ধর্ম্যা:[ অর্থশাস্ত্র ৩/২/২]। কিন্তু পরের চারটি বিবাহ প্রথায় পিটারে সাথে মাতার সম্মতিও প্রয়োজন। মাতাপিতৃমানা শেষা। তৌহি শুল্কহরৌ দুহিতু [ অর্থশাস্ত্র ৩/২/২]। কন্যাশুল্ক বা কন্যাপণ কন্যার বিনিময়ে ক্ষতিপূরণ স্বরূপট দেওয়া হয় কন্যার পিতামাতাকে। কোনও ধর্ম শাস্ত্রকার কন্যাশুল্কে মাতারও অধিকার রয়েছে এমন বিধান দিয়েছেন বলে মনে হয় না।

এইক্ষেত্রে কৌটিল্যের এই বিধান কন্যার জননীর মর্যাদা বাড়িয়েছে। যা অন্যান্যধর্ম শাস্ত্রকারদের সাথে তুলনা করলে অবশ্যই উদারতার পরিচয় দান করে। আটপ্রকার বিবাহ বিধির মধ্যে শেষ দুই প্রকার বিবাহ -রাক্ষস ও পৈশাচ বিবাহ , নারীর দিক থেকে সম্মতিহীন বিবাহ। শাস্ত্রকাররা পুরুষকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে চাননি বলেই এই দুই বিবাহপ্রথাকে বৈধতা দান করেছেন। কৌটিল্যও অর্থশাস্ত্রে তাঁদের সাথে আপোষ করেছেন বলে মনে হয় আমাদের। ভাষ্যকাররা অবশ্য বলেন রাক্ষস। বা পৈশাচ বিবাহের ফলে জাত সন্তানকে সামাজিক স্বীকৃতি দেওয়ার জন্যই শাস্ত্রকাররা এই বিবাহবিধি মেনে নিয়েছিলেন। কৌটিল্যের চিন্তাধারাও ছিল তাই ( পৃষ্ঠা ১৩৮)

বৌদ্ধ- জাতকে নারী ব্রাত্যই ছিল।

লেখকদ্বয় লিখেছেন,বৌদ্ধ জাতকে দুষ্টা রমণীর লক্ষণগুলি কামসূত্রেটবকয়েকটি লক্ষণের কথা বলা আছে। স্বামীর প্রতি স্ত্রীর অবজ্ঞার কারণ আটটি বলা হয়েছে। দারিদ্র্য , রোগ , বার্ধক্য , মাতলামো, হিতাহিত জ্ঞানহীনতা, জড়বুদ্ধি অতিশ্রম, বাধ্যবাধকতা-বোধের অভাব। জনগণের উদ্যানে ভ্রমণ, নদী পাড়ে ভ্রমণ আত্মীয় বাঅনাত্মীয়দের বাড়িতে ঘনঘন যাওয়া আপত্তিকর জামা পরা, মদ্যপান বাড়ির দরজা জানলা দিয়ে রাস্তার দিকে অহেতুক তাকিয়ে থাকা এইসব আচরণ নিন্দিতা হত। এমনটাইউল্লেখ করেছেন সুরেশচন্দ্র বন্দোপাধ্যায় ও রমলা দেবী তাঁদের ভারতীয় সমাজে প্রান্ত বাসিনী গ্রন্থের ৮৫ পৃষ্ঠায়। নরনারীর পারস্পরিক আকর্ষণ প্রাবল্য নিয়ে অবাধে মিলনের যে আধিক্য দেখায় তাই কঠোর নিষেধ যুগে যুগে ঘোষিত হয়েছে। বৌদ্ধ কথাবত্থু ‘তে লিখিত b একাধিপ্পয়ো প্রথানুসারে যে কোন স্ত্রী -পুরুষ একে অন্যের প্রতি আকৃষ্ট হলে তাদের দৈহিক মিলন হতে পারে। পৃষ্ঠা৮৫ (চলবে)

আগামী পর্ব শুক্রবার ,১৩ ডিসেম্বর,২০২৪

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *