জৈন হেরিটেজ ডে ঘোষণা করল শ্রী ভারতবর্ষীয় দিগম্বর জৈন তীর্থ সংরক্ষশিনী মহাসভা

দিগদর্শন ওয়েব ডেস্ক : শনিবার বিকেলে কলকাতা প্রেসক্লাবে দিগম্বর জৈন সম্প্রদায়ের সংগঠন শ্রী ভারতবর্ষীয় দিগম্বর জৈন তীর্থ সংরক্ষশিনী মহাসভা তাঁদের সংগঠনের ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত নির্মল কুমার জৈন শেঠির মৃত্যুদিন ২৭ এপ্রিল জৈন হেরিটেজ ডে পালনের কথা ঘোষণা করে।২০২৪ এ মহাবীর ভগবানের ২৫৫০ তম প্রয়াণ দিবস পালিত হবে।চৌরঙ্গী অঞ্চলে গড়ে উঠছে ভগবানের নতুন মন্দির।সংগঠনের পক্ষে প্রয়াত নির্মল কুমার জৈনের পুত্র ও ট্রাস্ট সম্পাদক রাজকুমার শেঠি,অভিভাবক, উপদেষ্টা ধর্মেন্দ্র জৈন ও সভাপতি বিনোদ কুমার কালা জানান, দেশের বহুস্থানে জৈন ধর্মের ঈশ্বর মহাবীরের বহু মূর্তি উদ্ধার হয়েছে কিন্তু সঠিক ভাবে সেই প্রত্নতত্ব নবসম্পদ সংরক্ষিত হচ্ছে না। আমরা দেশের সরকারের কাছে এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমাদের দাবি জানানো হয়েছে ।এই বাংলার আধ্যাত্বিক সংস্কৃতির সঙ্গে জৈন ধর্মের যোগ বহুদিনের। আমরা তাই এমন একজনকে পেয়েছিলাম যিনি নির্মল কুমার জৈন । সারা ভারতের ৩৫৭ টি জৈন মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছিলেন। তাঁর উদ্যোগেই প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ খনন চালিয়ে বহু মহাবীর মূর্তি উদ্ধার করলেও সেগুলি অরক্ষিত অবস্হায় পড়ে থাকে। নির্মল জৈন সেগুলি সুরক্ষিত করার প্রয়াস নেন। তাঁর নেতৃত্বে যুব মহাসভা দেশের ১৫০০ আর্থিক দূর্বল ছাত্রছাত্রীদের স্কলারশিপের ব্যবস্থা হয়ে আসছে। দিল্লি থেকে তিনসুকিয়া অসমের প্রতিভাধরদের সাহায্য করতে আমাদের মহাসভা কাজ করে।

প্রায় চার দশক ধরে নির্মল কুমার জৈন সামাজিক সুরক্ষায় আর্থিক দুর্বল মেয়েদের বিয়ের খরচ দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। জৈন ধর্মের আদর্শ অহিংসা। এই জীব প্রেমের মূল্যবোধ ও ঐতিহ্যের ধারায় সংখ্যালঘু কমিশন অব ইন্ডিয়ার লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট পুরষ্কার দেওয়ার ব্যবস্থার প্রতীক নির্মলকুমার জৈন। তাঁর কর্মজীবনের লক্ষ্য ছিল অহিংসা, সত্য প্রতিষ্ঠা , নিরামিষ আহারে উৎসাহিত করা ও আত্মিক উন্নতি ঘটানো বিশ্বজুড়ে। কুৎসিত বলি প্রথার বিরুদ্ধেও তাঁর প্রতিবাদ ছিল। সমাজে তাঁর শিল্প বিকাশে অবদান কৃষি বিকাশে অবদান , পরিবহন শিল্পে প্রযুক্তির ব্যবহার আমেরিকা থেকে অন্য দেশে তাঁর পরিকল্পনা প্রশংসিত হয়েছে। নির্মল কুমার জৈন শেঠির জন্ম ৮ জুলাই ১৯৩৮ সালে।মৃত্যু ২৭ এপ্রিল ২০২১ সালে। করোনা পরিস্থিতিতে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। তাই এই বছর তাঁর মৃত্যুদিন জৈন হেরিটেজ ডে পালনের মধ্য দিয়ে প্রয়াত কর্মবীর নির্মল কুমার জৈনকে জৈন ধর্মের দিগম্বর সমাজ শ্রদ্ধা জানাবে।

একথা অস্বীকারের উপায় নেই জৈন ধর্মের এক বিরাট প্রভাব ছিল বাংলায়। ঐতিহাসিক ড,: নীহাররঞ্জন রায় তাঁর বাঙ্গালীর ইতিহাস আদি পর্ব তে লিখেছেন জৈনদের আচাররঙ্গ সূত্র গ্রন্থে উল্লেখ আছে, মহাবীর ( খ্রিস্টপূর্ব,৬ ষ্ঠ শতক) যখন পথহীন লাঢ় (রাঢ় দেশ) ব্জ্জ ভূমি ও সুব্ভভ ভূমিতে ( মোটামুটি দক্ষিণ রাঢ়) প্রচারোন্দেশে ঘুরিয়া বেড়াইতেছিলেন, তখন এইসব দেশের অধিবাসীরা তাঁহাকে আক্রমণ করিয়াছিল। কতগুলি কুকুরও সঙ্গে সঙ্গে তাঁহাকে কামড়াইতে আরম্ভ করে,কিন্তু কেহই এই কুকুরগুলিকে তাড়াইয়া দিতে অগ্রসর হয় না। বরং লোকেরা সেই জৈন ভিক্ষুকে আঘাত করিতে আরম্ভ করে এবং ছু ( খুককু) বলিয়া চিৎকার করিয়া তাঁহাকে কামড়াইবার জন্য কুকুরগুলিকে লেলাইয়া দেয়। বাংলাদেশে এখনও লোকে কুকুর ডাকিবার সময় চু চু বা তু তু বলে।

এবার দেখা যাক দীনেশ চন্দ্র সেন তাঁর শঙ্কর বিজয় গ্রন্থে কি লিখেছেন। তিনি লিখেছেন ভীষণ অত্যাচারের মাধ্যমে ব্রাহ্মণরা বৌদ্ধ ও জৈন ধর্ম ভারত থেকে নির্মূল করে।( পৃষ্ঠা ৯)। রায় প্রতিবেদকের প্রশ্ন ছিল শঙ্করাচার্যের পরিকল্পনায় তেলেঙ্গানায় বাসারে জ্ঞান সরস্বতীর মন্দির হিন্দুরা স্থাপন করেছে মহাবীর মূর্তিকে নারী মূর্তি বানিয়ে। অন্যদিকে জৈন সম্প্রদায়ের অভিযোগ অন্ধ্রের তিরুপতি মন্দিরের বিগ্রহ গয়না ও ফুল দিয়ে কৌশলে ঢেকে মহাবীরের মূর্তিকে নারায়ণ মূর্তিতে পরিবর্তিত করা হয়। এখন প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কাছে মহাবীর মূর্তির সংরক্ষণ চাইছে দিগম্বর সম্প্রদায়। এতদিন কেন প্রতিবাদ জানাননি,? এই প্রশ্নের জবাব নেই।তিনি তাঁরা বললেন তেলেঙ্গানায় আমাদের জৈন সম্প্রদায় অনেক কমে গেছে। তাই যেখানে আমাদের অস্তিত্ব সংকট সেখানে প্রতিবাদের মূল্য কি,?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *