ভেজালের জালে,প্রশাসন উদাসীন, বিদেশে এভারেস্ট , এম ডি এইচ মশলা নিষিদ্ধ

শ্রীজিৎ চট্টরাজ : ভেজাল সর্বত্র। রাজনৈতিক নেতাদের ভেজাল মানুষ জেনে গেছেন। এখন বড় খবর আদালতের নির্দেশে ২৫ হাজার ৭৫৩ টি শিক্ষকের চাকরি বাতিল। অভিযোগ ভেজাল। আর একটি খবর প্রকাশ্যে এসেছে। কিছুদিন আগেই সিঙ্গাপুরে ভারতের দামী ব্র্যান্ড এভারেস্ট ফিস কারি মশলা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে সেখানকার প্রশাসন। সেই তালিকায় যুক্ত হল হংকং।হংকংয়ের খাদ্য নিয়ন্ত্রক সেন্টার ফর ফুড সেফটি এম ডি এইচ কোম্পানির মশলা নিষিদ্ধ করেছে। অভিযোগ মশলায় অতিরিক্ত ইথাইলিন অক্সাইড আছে। মশলার মধ্য দিয়ে বেশিদিন শরীরে গেলে নারী বা পুরুষ স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারেন। বিদেশে ভারতীয় দুটি নামী ব্র্যান্ডের মশলা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় দেশের মুখ যেমন পুড়েছে তেমন এদেশের প্রশাসন ভাত ঘুম ভেঙে নড়ে চড়ে বসছে। গত ২০২২/২৩ আর্থিক বছরে ভারতীয় মশলার রফতানি ছিল ৩২ হাজার কোটি টাকার। সেই বাজার যে পড়বে নিঃসন্দেহে বলা যায়। হংকংয়ের খাদ্য নিয়ন্ত্রক বিভাগ এপ্রিল ৫ তারিখ জানায় ভারতীয় মশলা কোম্পানি এম ডি এইচ এর ম্যাড্রাস কারি পাউডার ও সম্বর কারি পাউডারের ক্ষতিকর ইথাইলিন অক্সাইডের অস্তিত্ব মিলেছে। পরীক্ষার জন্য সব মসলা ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়েছে।একই অভিযোগ এভারেস্ট কোম্পানির বিরুদ্ধেও। তাই সব ভারতীয় মশলা এখন হংকংয়ে নিষিদ্ধ। একই ঘটনা সিঙ্গাপুরে।
খবরটা এদেশে পৌঁছানোর পর নড়েচড়ে বসেছে ভারতীয় খাদ্য দফতর। কেন্দ্রের নির্দেশে ভারতের সব ব্র্যান্ড ও খোলা বাজারের মশলা পরীক্ষাগারে স্যাম্পেল টেস্ট করানোর নির্দেশ দিয়েছে। আগামী তিন চারদিনের মধ্যে সব মশলা উৎপাদনকারী সংস্থা থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হবে । রিপোর্ট আসতে সময় লাগবে প্রায় তিন সপ্তাহ।

ভারতীয় মশলায় যে ক্ষতিকারক রাসায়নিক মিলেছে সেটি ইন্টারন্যাশানাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার এথিলিন অক্সাইডকে গ্রুপ ১ কার্সিনোজেন হিসেবে চিহ্নিত করেছে। গত ১৮ এপ্রিল সিঙ্গাপুরে ভারতীয় মশলা আমদানিকারক সংস্থা এস পি মুথিয়া অ্যান্ড সন্স পিটিই লিমিটেডকে বাজার থেকে সব মসলা তুলে নিতে নির্দেশ দিয়েছে। যে দুটি বিখ্যাত ব্র্যান্ডের বিরূদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তাঁরা মুখে কুলুপ এঁটেছে। তাঁদের কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে ভারতের খাদ্য দফতরের পক্ষে দেশের ব্যবসায়ীদের সংগঠন স্পাইস বোর্ডকে এব্যাপারে ব্যবসায়ীদের সচেতনতা দানের কথা। বলা হয়েছে। মশলাতে শুধু এথিলিন নয়,আরও কিছু ক্ষতিকর ভেজাল মেশানো হয়। মশলায় মেশানো হয় রেডমিন বি , লেডক্রোমেট , মেটানিল ইয়েলো, অরেঞ্জ টু , ব্লু ভি আর এস , ম্যালকাইট গ্রিন , কঙ্গো রেড। সুতরাং গোটা মশলা কিনে বাড়িতে পিষে নেওয়া সবচেয়ে নিরাপদ। শুধু মশলাই নয়,সকালে ঘুম থেকে উঠে দাঁতের মাজন থেকে শুরু হয় আমাদের ভেজালের জালে বন্দি হওয়া।

আসুন একবার মিলিয়ে দেখি। বাজারে নামীদামী ব্র্যান্ডের টুথপেস্ট। টিভিতে দেখি সুন্দর সুন্দর নায়ক বা নারী পুরুষ মডেল দাঁত কেলিয়ে হাসছে। বিজ্ঞাপনে বলা হচ্ছে টুথপেস্ট ব্যবহার করুন আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে। কেউ বলছেন ঝকঝকে সাদা দাঁত করতে, কেউবা বলছে মাড়ি মজবুত করতে। আসলে দাঁতের যত্ন নিতে কোনো টুথপেস্টেরই কোনো ভূমিকা নেই। তাছাড়া আমরা কেউই জানি না টুথপেস্টে কি কি উপাদান আছে। মূলত টুথপেস্টে সোডিয়াম ফ্লোরাইড থাকে । তাই কর্পোরেট ইচ্ছায় আমরা টুথপেস্টে অভ্যস্ত হলেও পরিমাণ যেন অল্প থাকে। না হলে মুখের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে। ছোটদের কাছে লোভনীয় করে তুলতে লাল নীল রং যেমন ব্যবহার হয় তেমন মিন্ট দেওয়া হয়। টুথপেস্টে ট্রাইক্লোসান নামে এক রাসায়নিক ব্যবহার হয় যা অ্যান্টিব্যাকটোরিয়াল ও অ্যান্টিফাংগাল উপাদান থাকে। রাসায়নিক উপাদানযুক্ত টুথপেস্ট উৎপাদকেরা দাবি করেন এটি প্লেক ও জিনজিভাইটিস প্রতিরোধে সাহায্য করে। এটা মিথ্যে নয়। কিন্তু যেটা বলে না সেটা হল এটি থাইরয়েড হরমোন বিপাক পরিবর্তনও করে । অনেক টুথ পেস্টে সোডিয়াম লরিল সালফেট ব্যবহার হয়। যার ফলে টুথপেস্টে মিষ্টি স্বাদ মেলে। অল্পবয়সিরা টুথপেস্ট অনেক সময় গিলে ফেলে । টিস্যুতে যা ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। টুথপেস্টে ব্যবহার হয় প্রোপিলিন গ্লাইকল। যা ভিটামিন ডি ঘাটতি থাকলে বা শরীরে এ্যালার্জির প্রভাব থাকলে বিপদজনক হতে পারে। অথচ বাড়িতে এক চামচ বেকিং সোডার সঙ্গে কয়েক ফোঁটা পাতিলেবুর রস বা পুদিনা পাতার তেল মিশিয়ে দাঁত মাজলে দাঁতের সুরক্ষায় কাজ দেয়।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে আইনজীবী সাশা জৈন আদালতে অভিযোগ জানিয়েছেন পতঞ্জলি টুথপেস্টে নিরামিষ ট্যাগ থাকলেও সামুদ্রিক মাছ সমুদ্র ফেন ,( কটল ফিস) এর হাড় ব্যবহার হচ্ছে। এটা প্রতারণা। আদালত দশ সপ্তাহ সময় দিয়েছে অভিযুক্ত পতঞ্জলি সংস্থাকে জবাব দেওয়ার জন্য। শুধু টুথপেস্ট নয় টুথ পাউডারের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ। এরপর দুটো বিস্কিট দিয়ে চা খাবেন। সেখানেও আপনি নিরাপদ নন।( চলবে)

পর্ব ২ আগামীকাল বুধবার ২৪ এপ্রিল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *