শ্রীজিৎ চট্টরাজ : ইংরেজিতে একটি শব্দ আছে কাইনেস্থেটিক। বাংলায় বলা যায় শরীরের নান্দনিক ছন্দময় নড়াচড়া। গুহামানব প্রথম দেওয়ালে এঁকেছিল মনের ইচ্ছা অনুভূতি। পর্যাপ্ত শিকার করা খাদ্য সংগ্রহের আনন্দে নেচেছিল আনন্দ প্রকাশ করতে। ফসল কাটার লৌকিক দেবতার উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেছে নিজস্ব নৃত্যশৈলী। প্রাচীন চিনা গ্রন্থে উল্লেখ আছে বৃষ্টির আবেদন জানানো হত নৃত্যের মাধ্যমে। যা আজও রেইন ড্যান্স নামে পরিচিত। নৃত্য যে শুধু সংস্কৃতি নয়, শরীর চর্চারও বিষয়। হাভার্ড হেল্থ পাবলিশিং এ প্রকাশিত একটি সমীক্ষা অনুসারে ৫৬ কিলো ওজনের এক ব্যক্তি একঘণ্টায় ৩৩০ ক্যালোরি খরচ করতে পারেন।

বাঙালি পরিবারে নাচ গানের চর্চা এক প্রাচীন সংস্কৃতি যদিও ১৯ শতাব্দীর মাঝামাঝি পর্যন্ত গৃহস্থ ঘরে নাচ গান ছিল ব্রাত্য। একমাএ বাঈ জি পাড়ার বিষয় ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে একটা আমূল পরিবর্তন আসতে থাকে বাঙালির সমাজ জীবনে। অন্যদিকে রবীন্দ্রনাথের উপস্থিতি। গত প্রায় ২০ বছর ধরে বঙ্গতনয়া অপরাজিতা সাহা সযত্নে গড়েছেন ছন্দছবি নৃত্য কলা বিতান। কচিকাঁচা থেকে তরুণ শিল্পীদের প্রতিভার উন্মেষ ঘটিয়ে চলেছেন প্রতি নিয়ত। এমনকি যে মায়েরা সন্তানদের নিয়ে আসেন, তাঁদেরও তিনি মঞ্চে হাজির করেছেন। হয়ত অল্প বয়সে অনেকেই নাচতেন। পরে সংসারের দাবিতে ছাড়তে হয়েছে। তাঁরাও গিরিশ মঞ্চে আয়োজিত ছন্দছবি সংস্থার অনুষ্ঠানে মঞ্চে পরিবেশন করলেন তাঁদের নস্টালজিক অনুভূতি।

নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের সুস্থ সংস্কৃতি চর্চায় ব্যস্ত রেখে সামাজিক যে অবক্ষয় চেপে বসছে তার থেকে মুক্ত রাখার প্রয়াস অপরাজিতা সাহার। নতুন প্রজন্মের প্রতি আস্থার কথা জানালেন। নাম করলেন নিজের আত্মজা স্বচ্ছতোয়ার। উল্লেখ করলেন তাঁর প্রতিটি ছাত্রছাত্রীর যোগ্যতার কথা। সংস্কৃতি চর্চায় এমন কিছু অনুষ্ঠান তিনি নির্মাণ করেন যা নারীর ক্ষমতায়নের কথা বলে। মা ও মেয়ে মূলত ভরতনাট্যমের শিল্পী হলেও সংস্থায় জিমন্যাস্টিক ও যোগা শেখার ব্যবস্থা আছে। দক্ষিণ ভারতে শৈব, শাক্ত বৈষ্ণব ধর্মের বিকাশের সঙ্গে বিভিন্ন নৃত্যশৈলী সমৃদ্ধ হয়েছে। গণপতি নৃত্য, ময়ূর নৃত্যে সংস্থার ছাত্রছাত্রীদের কুশলী ভূমিকার কথা উল্লেখ করতেই হয়।স্বচ্ছতোয়া ও অপরাজিতা পরিবেশন করেন তাঁদের নৃত্যশৈলী। কচিকাঁচারা স্কুলের ব্যাগ পিঠে নিয়ে যে নাচ দেখালো দর্শকরা উপভোগ করেছেন প্রচণ্ড। পরিবেশিত হয় নারীর সামাজিক অবস্থান নিয়ে পরিবেশিত হয় নৃত্যনাট্য শ্যাডোস্ টু স্পটলাইট। ছন্দছবি নৃত্য কলা বিতানের ১৩ তম বার্ষিক অনুষ্ঠানের সুখ স্মৃতি নিয়ে ঘরে ফিরলেন দর্শকেরা।