শ্রীজিৎ চট্টরাজ : ঠাকুরদাস মুখুজ্যের বর্ষীয়সীস্ত্রী সাতদিনের জ্বরে মারা গেলে নিম্নবর্গ সম্প্রদায়ের কাঙালির মা সেই এয়ো স্ত্রীর শ্মশান যাত্রায় পড়শি হিসেবে সঙ্গী হয়ে প্রত্যক্ষ করল সতী স্ত্রীর আলতা রাঙানো পা। পুত্রের হাতে মুখাগ্নি দেখে সাধ জাগে তার যে তার ছেলেও যেন মুখাগ্নি করে। যে স্বামী তাকে ছেড়ে চলে গেছে সেও যেন এসে কপালে সিঁদুর লেপে দেয়। স্বামীকে রেখে সধবার মৃত্যুর চেয়ে পুণ্য কি আছে,? কিন্তু বাংলার সমাজ ব্যবস্থার প্রতি তীক্ষ্ণ শ্লেষ হেনে শরৎচন্দ্র লিখলেন কাঙ্গালির মা মৃত্যুশয্যায় স্বামী এসে পদধূলি দেয়। মায়ের মৃত্যুর পর কাঙালি নিজের জমির গাছ কাটতে পারে না কেননা জমি যখন বন্ধক তখন সে জমির গাছের মালিক তো মহাজন। তাছাড়া পাড়ার ভট্টাচার্য মশায় তো নিদান দিয়েই দিয়েছেন তোদের জেতে কে কবে আবার পোড়ায় রে? যা মুখে একটু নুড়ো জ্বেলে দিয়ে নদীর চড়ায় মাটি দে গে।
বিজ্ঞাপন
মুখার্জির বড় ছেলেও বলে সব ব্যাটারাই এখন বামুন কায়েত হতে চায়। শরৎচন্দ্র তাঁর ছোট গল্প অভাগীর স্বর্গ শেষ করলেন , নদীর চরে গর্ত খুঁড়িয়া অভাগীকে শোয়ান হইল। রাখালের মা কাঙালির হাতে একটা খড়ের আঁটি জ্বালিয়া দিয়া তাহারই হাত ধরিয়া মায়ের মুখে স্পর্শ করাইয়া ফেলিয়া দিল। তারপরে সকলে মিলিয়া মাটি চাপা দিয়া কাঙালীর মায়ের শেষ চিন্হ বিলুপ্ত করিয়া দিল। সবাই সকল কাজে ব্যস্ত শুধু সেই পোড়া খড়ের আঁটি হইতে যে স্বল্প ধুঁয়াটুকু ঘুরিয়া ঘুরিয়া আকাশে উঠিতেছিল, তাহারই প্রতি পলকহীন চক্ষু পাতিয়া কাঙালী ঊর্ধদৃষ্টে স্তব্ধ হইয়া চাহিয়া রহিল।
বিজ্ঞাপন
ফরাসি সাহিত্যিক এমিল জোলার গুণমুগ্ধ শরৎচন্দ্র মধ্যবয়সে হুগলি জেলার সামতাবেড় বাড়িতে বসে অভাগীর স্বর্গ রচনা করেন। জনপ্রিয় শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ প্রবীর ভৌমিক এই সামতাবেড় অঞ্চলের ভূমিপুত্র। শরৎচন্দ্রের এই গল্পটি নিয়ে এখনও কোনো চলচ্চিত্রের নির্মাণ না হওয়ায় সেই গুরু দায়িত্ব তিনি তুলে নেন নিজের কাঁধে প্রযোজক হিসেবে।তবে ছবির থেকে অর্জিত লাভ তিনি ব্যক্তিগত কাজে খরচ করবেন না তাঁর ডাক্তারি পড়াশোনার তীর্থ পার্ক সার্কাসের ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেল্থ শিশু বিভাগে প্রয়াত পিতা দেবেন্দ্রনাথ ভৌমিকের নামে আই সি এইচ এর নতুন শিক্ষা ভবন ও শিশু বিভাগ গড়তে চান। চিকিৎসক প্রবীর ভৌমিক এই প্রতিষ্ঠানের ছাত্র যেমন তেমন এখন কর্মরত। চিকিৎসার পাশাপাশি পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরের আটটি গ্রামকে দত্তক নিয়েছেন ।সেখানে সার্বিক উন্নয়নের সঙ্গে একটি অনাথ আশ্রমও পরিচালনা করছেন।