পর্ব: ৭
শিকাগো বিশ্বমেলা প্রাঙ্গণ ১৮৮৩
সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়: কয়েকটি আগের পর্বে বলেছি, বিবেকানন্দ যখন আমেরিকা সফরে যান তখন আমরিকার আর্থ- সামাজিক অবস্থা ও রাজনৈতিক অবস্থার কেমন ছিল। আমেরিকায় ধনতান্ত্রিক অর্থনীতি যতই আধুনিক রূপ নিতে শুরু করে, তত ছোট ছোট কারখানা মিশে গিয়ে বড় কারখানা গড়ে উঠছিল। আমেরিকার গৃহযুদ্ধের পর নতুন করে মন্দা দেখা দেয়। আর্থিক ও মানসিক ভাবে পর্যুদস্ত হয়ে পড়েন আমেরিকার নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষ।
শিকাগো বিশ্বমেলা ১৮৯৩
ফলে বিনোদনের মধ্য দিয়ে জাতীয়তাবাদের সুড়সুড়ি দেওয়ার পরিকল্পনা নেয় শাসকগোষ্ঠী। কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কারের ৪০০ বছর পূর্তিকে ঘিরে সিদ্ধান্ত হয় , স্বাধীন আমেরিকায় শিল্প, কৃষি, কলা ও দেশজ সংস্কৃতির উন্নয়নকে হাজির করা। বলা যায় একটি বিশ্বমেলা। ধর্ম সেই মেলায় অন্তর্ভুক্ত ছিল না। পরে সিদ্ধান্ত হয় এই মেলে অধ্যাত্ববাদ যুক্ত করলে মানসিক দূর্বল মানুষকে উজ্জীবিত করে সম্ভব হবে। সেই মত বিশ্বমেলায় সংযুক্তি ঘটানো হয়।
আমেরিকান নাগরিকদের মধ্যে মহিলা অনুরাগী ছিলেন বেশি।
অস্বীকারের উপায় নেই , বিবেকানন্দের কথার ঝাঁঝ মানুষকে সম্মোহিত করত। সেটা আমেরিকার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হল চিরাচরিত ভদ্রমণ্ডলী না বলে ভাই বোন সম্বোধন করায়।বিশেষ করে মেয়েরা সম্মোহিত হলেন বেশি। তার প্রমাণ পরবর্তী সময়ে আমেরিকান মহিলারা সবচেয়ে বেশি আর্থিক সাহায্য করেছিলেন কলকাতায় মিশন গড়তে। শিকাগোতে বিবেকানন্দ যে কটি ভাষণ সন্মেলনে দেন সেখানে একটি কৌশল তিনি ব্যবহার করেন।
শিকাগোতে ভাষণরত বিবেকানন্দ।
এই সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পত্রিকা সংখ্যা ৯৭ , জুন ২০১৮তে বিবেকানন্দের শিকাগো ভাষণ ও রচনা: বিষয় বৈচিত্র্য ও গদ্যশৈলী প্রবন্ধে মিল্টন কুমার দেব লিখেছেন,,,,,,, শ্রোতাদের মধ্যে কৌতূহল সৃষ্টি এবং মনোযোগ ধরে রাখার জন্য বাগ্মিতায় অত্যন্ত সহজ একটি পদ্ধতি যথাযথ স্বামীজী ব্যবহার করেছেন। একনাগাড়ে হ্যাঁ -বাচক আর না -বাচক বাক্য ব্যবহার না করে মাঝেমাঝেই সভাকে সচকিত করে তাদের সামনে প্রশ্ন রেখেছেন; পরক্ষণেই নিজেই উত্তর দিয়েছেন। এরূপ একটা বিশেষ উদাহরণের দিকে লক্ষ করা যাক। Peper on Hinduism – এর একটি অনুচ্ছেদে পরপর দুটি প্রশ্ন এবং করুণ দুটি চিত্রকল্প Is man a tiny boat in tempest,,,,,,a little month placed under the wheel of causation? এসকলের পরিপেক্ষিতে জিজ্ঞাসা: Is there no hope? Is there no escape? প্রথমে প্রশ্ন, পরক্ষণেই উত্তর। প্রশ্নের দ্বারা সৃষ্টি করছেন শঙ্কা, ভয় , বিষাদ আবার উত্তরের দ্বারা দিচ্ছেন বিশ্বাস , অভয়, আনন্দ।,,,,,,,,,, এই ভাষণের নির্যাস হলো _ ১) কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন ২) অন্য ধর্মের স্বীকৃতি ও সনাতন ধর্মের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা ৩) মানুষের মাঝে ঐক্য- সংহতি প্রতিষ্ঠা এবং ৪) উগ্রতা সাম্প্রদায়িকতার চির অবসান কামনা।,,,,,( পৃষ্ঠা ৭৩/৭৪) ( চলবে)
পরবর্তী পর্ব আগামী শুক্রবার ২৭ সেপ্টেম্বর,২০২৪